তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবরে নওগাঁয় মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

ফেব্রুয়ারি ২৬ ২০২১, ২০:৪০

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃ নওগাঁর ধামইরহাটে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) যাচাই বাছাই প্রতিবেদন থেকে বাদ পড়ার খবর শুনে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন মুক্তিযোদ্ধা সাহার উদ্দিন (৮০)। এমন অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা। তবে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সাহাপুর গ্রামে মেয়ের বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি একই উপজেলার নেওটা গ্রামের মৃত নয়েজ উদ্দীনের ছেলে। তার গেজেট নম্বর-৩০৩৪। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৪টায় নিজ গ্রামে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা থেকে বাদ পড়া এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।

জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ধামইরহাট উপজেলার ৮৯ জন মুক্তিযোদ্ধার যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয়।  দীর্ঘ ১১ বছর পর উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই হয়। প্রতিবেদন ফরমে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর চলতি মাসের ২২ তারিখে দেখানো হলেও তা প্রকাশ করা হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। এতে ৫৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম বাতিল করে ৩২ জনের তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নোটিশ বোর্ডে সাঁটানো হয়।

এ তালিকায় সাক্ষী ও মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য সঠিক নয়, তাই মুক্তিযুদ্ধ যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি ও সদস্য কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাতিল তালিকার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সাহার আলীর নামও ছিল। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রথম থেকেই সরকারি সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন।

যেদিন তালিকা প্রকাশ করা হয় সেদিন তিনি সাহাপুর গ্রামে মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। বাছাই তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শুনে স্ট্রোক করে মারা যান বলে অভিযোগ তুলেছেন নিহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে এবং এক ছেলে রেখে গেছেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নিজ গ্রামে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার লাশ দাফন করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার গণপতি রায়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ফরমুদ হোসেন ও থানার পুলিশ কর্মকর্তা প্রমুখ।

নিহত সাহার উদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবার মুখে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কথা শুনে আসছি। আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আর যাচাই-বাছাইয়ে বাবার নাম বাদ দিয়ে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

বাবা বোনের বাড়িতে থাকা অবস্থায় বাদ পড়ার কথা শুনে অসুস্থ হয়ে পড়ে মারা যান। বাবা যদি মুক্তিযোদ্ধা নাই হবেন তাহলে সরকারি সুযোগ-সুবিধা কেন পেতেন। কেন তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হলো।

যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফরমুদ হোসেন বলেন, সাহার উদ্দীন ছিলেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যাচাই-বাছাইয়ে তার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এভাবে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়টি তিনি সহ্য করতে পারেননি। একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপর এটি অবিচার বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব গণপতি রায় বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে প্রাথমিক একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যারা প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আপিল করার সুযোগ রয়েছে।

তিনি দাবি করেন, যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে তার মৃত্যুর কোনো যোগসূত্র নেই। তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি। অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে।

 

facebook sharing button
messenger sharing button
twitter sharing button
pinterest sharing button
linkedin sharing button

 

 

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও