দিনাজপুর চিরিরবন্দরে লিচু বাগান হতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ

মার্চ ২৯ ২০২১, ২১:৩৫

Spread the love

এনামুল মবিন(সবুজ) জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুরঃ দিনাজপুর জেলায় ও উপজেলায় প্রকৃতির রসগোল্লা খ্যাত সুস্বাদু ও মিষ্টি লিচুর বাগানে এখন মৌচাষ হচ্ছে। লিচু বাগানে মৌ মাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শতাধিক মৌ চাষিরা। ফলে একদিকে যেমন মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে মৌ মাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ন ঘটায় লিচু গাছ মালিকরা বাম্পার ফলনের আশা করছে।

এক কথায় বাগানে মৌ চাষ করে মৌচাষি এবং বাগান মালিক উভয়ে লাভবান হচ্ছে। ঠিক তেমনি দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় মৌচাষিরা ১৩টি লিচু বাগানে বাক্স বসিয়ে প্রায় ৪০ টন মধু সংগ্রহ করেছে। যার বাজার মূল্য বলা চলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো। লিচু বাগানে মৌচাষ করে চাষিরা লিচুর ফলন ২৫ ভাগ বেশী আশা করছেন এবার।
লিচু বাগানে প্রতি বছর তেমন খরচ করতে হয় না বলে অল্প পরিচর্যায় মোটা অঙ্কের অর্থ আয় হয় তাই অনেকেই লিচুর বাগান করেছেন। চলতি বছরে দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলায় ৫০০’১০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। লিচুর বাগানগুলো বর্তমানে মুকুলে ভরপুর । চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্টি ও ভিয়াইল ইউনিয়নে লিচু বাগানগুলোতে ব্যাপক মুকুল এসেছে। বাগান মালিক হানিফ ও আরিফ এর বাগান গুলোতে প্রায় ২০০ শতাধিক লিচু গাছ থাকায় টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা হতে মৌচাষিরা ১৩টি বাগানে ১০০ থেকে ১৫০টি করে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মধু সংগ্রহ করছেন।
মৌচাষি দুলাল জানায়, বৈজ্ঞানিক উপায়ে উদ্ভাবিত মৌচাষ পদ্ধতি ব্যবহার করছি আমরা। বাগানে আমরা ২ শতাধিকের বেশি ব্রড ও নিউক্লিয়াস নামের ছোট বড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছি। প্রতিটি বাক্সে একটি রাণী মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য এপিচ মেইলিফ্রা জাতের কর্মী মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা মৌ মৌ গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে।পরে মুকুল হতে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির দল নিজ কলোনিতে মৌচাকে এনে জমা করে।

১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর প্রতিটি বাক্স হতে আমরা ৫ হতে ৬ মণ মধু সংগ্রহ করে থাকি। যে লিচু গাছে মৌমাছির আগমন বেশি সে গাছের মুকুলে পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর যেমন বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকে তেমনি মৌচাষিরা বেশি মধু সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন বাগান থেকে মৌচাষিরা প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ মণ মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করছে।

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাহমুদুল হাসান জানায়, চলতি এবছরে প্রতিটি লিচু বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। আর এ কারণে প্রচুর মৌমাছির আগমন দেখা দিয়েছে। লিচু গাছ থেকে মৌমাছি মধু আহরণের ফলে বেশী পরাগায়ন ঘটে থাকে। ফলে শতকরা ২৫ ভাগ লিচুর ফলন বেশি হয়। তাছাড়া বর্তমানে মৌচাষিদের দ্বারা উৎপাদিত মধু দেশের অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখার ফলে মৌচাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। লিচু বাগানে মৌমাছিদের গুনগুন শব্দে মুখরিত পুরো এলাকা। তবে কোন বন্য মৌমাছি নয়, বাক্সে চাষ করা শিকারী মৌমাছিই এমন গুঞ্জনে মুখরিত করছে । চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে লিচুর মুকুলের উপর নির্ভর করে মৌয়ালরা এসেছে বিভিন্ন জেলা থেকে।লিচু এবং মধু দু’টি প্রাকৃতিক সম্পদ-এ দু’টি সম্পদ সংগ্রহ সঠিক প্রশিক্ষণ ও বাজারজাত করণে বিশেষ ব্যবস্থা চাষিদের জানা থাকলে তারা যেমন লাভবান হবে তেমনি দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও