করোনার লকডাউনের মধ্যেই রূপগঞ্জে জমে উঠেছে ঈদের বাজার

মে ০৩ ২০২১, ১১:৩২

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের আলো ঝলমলে সুপরিসর স্ক্রিনে প্রতিদিনই সম্প্রচারিত হচ্ছে ঈদের জমজমাট বেচা-কেনা ও হাল ফ্যাশনের খবরাখবর, যা শাড়ি-থ্রী পিস থেকে শুরু করে জামা-জুতা, এমনকি চুড়ি-গয়নাও বাদ যাচ্ছে না। গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ পর্যন্ত দমাতে পারছে না, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের আনন্দোচ্ছল কেনাকাটার প্রবল আগ্রহ। ঈদকে ঘিরে ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। একসময় ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নতুন জামা, নতুন জুতা। বঙ্গললনার ক্ষেত্রে তা ছিল শাড়ি। তবে এখন যুগ ও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা এবং রুচি বদলেছে। এসেছে ফ্যাশনদুরস্ত কাপড়-চোপড়, মেয়েদের সালোয়ার কামিজ, বাহারি শাড়ি ও হিজাব, রকমারি জুতা, প্রসাধন সামগ্রী, গহনা ইত্যাদি। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও আজকাল সর্বদাই হাল ফ্যাশনের অনুষঙ্গ খোঁজে পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে, এমনকি শিশুরাও বাদ যায় না।
ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটগুলো। অধিকাংশ মার্কেটে সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। প্রতিটি মার্কেটে তরুণীদের ভিড় একটু বেশি। উপজেলার কয়েকটি মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, এবারও ঈদের পোশাকে ভারতীয় চলচ্চিত্র ভিত্তিক পোশাকের আধিপত্য চলছে। অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে দেশী পোশাকের তুলনায় বিদেশী পোশাকের দিকেই ক্রেতাদের মনোযোগ বেশি। এবার ঈদের বাজারে এসেছে হিন্দী চলচ্চিত্রের নামে একাধিক পোশাক। জরি, পুঁতিতে জড়ানো পাতলা চিকচিকে জমকালো টিস্যু কাপড়ের দুপাশে ঝুলানো জামাটিতে রয়েছে একটি বাড়তি কটি। ওড়নার সঙ্গে মিল করে জরির কাজ করা সালোয়ার। পোশাকটির নাম ‘টিস্যু গ্রাউন’। মুড়াপাড়া বাজারের ফুলকলি শপিংমলে কথা হয় ছোট্ট মাইশা মনির সাথে। আদো আদো কণ্ঠে মাইশা মনি জানায়, মায়ের সঙ্গে শপিং করতে এসেছে সে। জামা কিনবে। দোকানিরা জানিয়েছেন, এবারের ঈদে ছোট সোনামণিদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ‘টিস্যু গ্রাউন’।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা এলাকা থেকে আগত ক্রেতারা গাউছিয়া মার্কেট থেকে পাইকারী দরে ক্রয় করছেন যাকাতের শাড়ী, লুঙ্গী। এখানে চাহিদা মোতাবেক শাড়ী লুঙ্গী থাকায় এবং পাইকারী দরে পাওয়ায় ক্রেতারা ঝুকছেন এ মার্কেটে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে এ বেচাকেনা। দোকানীরাও ক্রেতাদের পছন্দ ও চাহিদামত শাড়ী, লুঙ্গী দোকানে উঠিয়েছে। ক্রেতাদের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যাবস্থা। এছাড়াও পুরুষ ব্যাবসায়ীদের পাশাপাশি মহিলা কাপড় ব্যাবসায়ীরা হাজার হাজার পিছ শাড়ী, লুঙ্গীসহ কাপড় পাইকারী দরে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলা এলাকায় খুচরা বিক্রি করছে। শাড়ী, লুঙ্গীর পাশাপাশি ক্রয় করছেন পাঞ্জাবী, বেডসিট, ছোটদের ঝিলিক, সোহানা, আইপিয়েল, লেহেঙ্গাসহ হরেক রকম রেডিমেট কাপড়। তবে শাড়ী দোকান গুলোতে দেখা গেছে বিত্তশালীদে ভীড়। ঐতিহ্যবাহী নোয়াপাড়ার জামদানি, জর্জেট কাতান, এসকে জর্জেট,সিমার জর্জেট, স্পিরিং কাতান, টাঙ্গাইলের বালুরচুরি ও রাজশাহী সিল্কের চাহিদা বেশী।
নগরপাড়া মার্কেটের ব্যবসায়ী কামাল ভুইয়া বলেন, এবছর শিশুদের পোশাকের চাহিদাটা একটু বেশি। তাছাড়া লকডাউনের কারণে পহেলা রমজান থেকে এবার বেচাকেনা শুরু করা যায়নি। মার্কেট খুলে দেয়ার পর থেকেই দোকানগুলোকে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশা করছি, চাঁদ রাত পর্যন্ত ভালো বেচাবিক্রি হবে। মারিয়া ফ্যাশন হাউজের কর্ণধার মো. সফিউল্লা বলেন, মহামারী করোনায় সারা বছরই ব্যবসা ছিল মন্দা। মেয়েদের পোশাকে এবার নতুন চমক নিয়ে এসেছে ‘গারারা’। ক্রেতারা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। তবে কেনাকাটা এখনো খুব একটা জমেনি। ‘গারারা’ নামের পোশাকটি দৃষ্টি কাড়ছে তরুণীদের। টিস্যু গ্রাউন ছাড়াও ‘গারারা’ নামের ভারতীয় ঢংয়ের ড্রেস রয়েছে। কাতান কাপড়ের ওপরের তৈরি করা জামাটার ওপরের পার্ট কামিজ-যা ঝুলে ছোট। সালোয়ার ঢোলা যার হাঁটুর দিকে ঘোরানো জরি চুমকির কাজ করা। ওড়নায়ও ভারী কাজ। এ পোশাকটি এবারের ঈদে ছোটদের পছন্দের পোশাক। ১ বছর থেকে ১২ বছর বয়সের বাচ্চাদের এই পোশাকটি পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকায়।

এদিকে গার্মেন্টসসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের বেতন ভাতা না দেয়ার কারনে তারা এখনও ঈদ পন্য ক্রয় করতে পারেনি। ফকিরখালীর খুচরা মহিলা কাপড় ব্যাবসায়ী হাজেরা খাতুন বলেন, ভাই গাউছিয়া মার্কেটে মোকাম করতে আইতাম প্রতি মঙ্গলবারে। ঈদে বেছাকিনা ভালা বইলা আজও মোকাম করতাছি। লিপি বেনারশি শাড়ী বিতানের মালিক দুলাল মিয়া জানান, শাড়ীর দোকানে বেচাকেনা ভাল। তবে যাকাতের শাড়ী ও লুঙ্গীর চাহিদা বেশী। ফ্যাশন টাচের মালিক মোক্তার হোসেন জানান, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পোষাকের চাহিদা বেশি রয়েছে। তবে ক্রেতারা নতুন নতুন ডিজাইনের উপড় ঝুকছে। তবে বেচাকেনা ভাল আছে। তিনি আরো বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা বেতন পায়নি। পেলে বেচাকেনা আরো বেড়ে যাবে। জুতা ব্যাবসায়ী রফিক জানান, জুতার বেচাকেনা আছে মোটামোটি। গাউছিয়া কর্পোরেশনের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া দিপু বলেন, মার্কেটে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যাবস্থা রয়েছে। ক্রেতারা নিরাপদে ঈদ পণ্য ক্রয় করছেন। এছাড়া উপজেলার তারাব, রূপসী, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, ভোলাব, হাটাব, বেলদীসহ ছোট ছোট হাটবাজারের দোকান গুলোতেও চলছে বেচাকেনা। এ বেচাকেনা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।

 

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও