ক্ষতিকর ষ্টেরয়েড ছাড়াই রূপগঞ্জে পলিত হচ্ছে কোরবানীর পশু

জুন ১৯ ২০২১, ১২:১৩

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ আছে আশা, আছে শঙ্কাও। বছরাধিকাল ধরে চলছে করোনা। বেশির ভাগ সময়ই ব্যবসা, বাণিজ্য, দোকানপাট, ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান বন্ধই ছিল। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও বন্ধই রয়েছে। মানুষের মনে ঈদের আনন্দের চেয়ে করোনার শঙ্কাই এখনও বেশি। তাই আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে গরুর খামারিরা লাভ আর লোকসানের হিসাবে আশা নিরাশার দোলাচলে দুলছে। তারপরও আশায় বুক বেধে তৈরি করছেন কোরবানীর জন্য বেজালমুক্ত গরু ছাগল। ঈদ আসছে।

কোরবানীর জন্য গরু দরকার। ঈদে নির্ভেজাল গরুর চাহিদা একটু বেশিই। রূপগঞ্জের গরু খামারিরা ও কৃষকেরা ঈদকে সামনে রেখে দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন ওষুধ এবং খড়, ভূষিসহ দেশিয় খাবার দিয়েই মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি হাতে নিয়েছেন রূপগঞ্জের গরু খামারিরা। দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করায় এ অঞ্চলের গরুর চাহিদা অনেক বেশি। বাজারে দেশিয় গরুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ ঈদে লাভবান হবেন বলে আশাবাদী খামারিরা।

তবে কোরবানীর ঈদের আগে ভারত থেকে হাটে বাজারে পশু প্রবেশ করলে ক্ষতির মুখে পড়ার আশংকায় দিন কাটছে ব্যবসায়িদের। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, অসাধু গরু ব্যবসায়িরা কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ করলেও দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও খামারিরা। প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন এ উপজেলার কৃষকেরা। ছোট বড় খামারের পাশাপাশি প্রতিটি কৃষক পরিবার ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন।

নিষিদ্ধ ঘোষিত ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট পরিহার করে ঘাষ খড়ের পাশাপাশি খৈইল, ভূষি, কুঁড়া, ফেন (ভাতের মাড়) খাদ্য হিসেবে খাওয়ানোর মাধ্যমে মোটাতাজা করা হচ্ছে এসব গরু। উপজেলার যাত্রামুড়া এলাকার নাবিল এগ্রো ফার্মের মালিক মোঃ নাইম ভুইয়া বলেন, দেশিয় জাতের গরু লালন পালন করা হয়েছে তার খামারে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। দেশিয় গরুর চাহিদা থাকায় এরই মধ্যে খামার পরিদর্শনে আসছেন ক্রেতারা। অনেকে খামার থেকেই গরু কিনে নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বরুনা এলাকার মানিক মিয়া জানান,শুধু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, নিজের কোরবানীর গরু সংগ্রহ ও মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত গরু প্রদানের জন্যেই আমার এ উদ্যোগ। দেশিয় পদ্ধতিতে মোটাতাজাকরণ করা গরুগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক খামারেই বিক্রি হয়ে গেছে। বাজারেও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এসব দেশি জাতের গরুর। উপজেলার খামার পাড়া এলাকার গরু ব্যবসায়ি কফিল উদ্দিন জানান, দফায় দফায় গো খাদ্যের দাম বাড়ায় এবং ভারত থেকে গরু আনার কারণে গত তিন বছর ধরে লাভের মুখ দেখতে পারেনি রূপগঞ্জের গরু ব্যবসায়িরা। এবছর খামারি ও পালনকারীরা লাভের আশায় বুক বাধতে শুরু করেছেন।

এ বছর উপজেলার বিভিন্ন জাতের বিপুল পরিমান গরু পালন করা হচ্ছে। যা দ্বারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন হাটেও পাঠানো হবে। তাদের আশা এবারের হাটে আশানুরূপ দামও পাওয়া যাবে। ঈদ উপলক্ষে উপজেলার ছোট বড় সব মিলিয়ে চার শতাধিক খামারি ও কৃষক দেশিয় পদ্ধতিতে ২০ হাজার গরু মোটাতাজা করছেন উল্লেখ করে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিগান মোল্লা বলেন, এ বছর উপজেলার কোথাও কৃত্রিম উপায়ে পশু পালন করেনি খামারি বা কৃষকরা। সেক্ষেত্রে উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ তদারকি করেছেন এবং খামারিরাও এ বিষয়ে অনেক সচেতন রয়েছেন।

তাছাড়া গরু মোটাতাজাকরণে নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার না করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন, এখানে কেহ অবৈধ উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণ করছে না। আমাদের তরফ থেকে কড়া নজরদারি রয়েছে। কেউ এহেন কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও