গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে কোরবানির পশু মোটাতাজাকরনে দিশেহারা খামারিরা

এপ্রিল ১১ ২০২২, ১৭:৪২

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ রোজার পরই ঈদুল ফিতর। এর আড়াই মাস পরই কোরবানি। কোরবানির জন্য প্রচুর পশু দরকার। গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে কোরবানির সময় পর্যাপ্ত পশু প্রাপ্তি নিয়ে সন্দিহান স্থানীয় জনগন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গোখাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে পশু পালনে হিমশিম খাচ্ছেন উপজেলার খামারিরা।

দুধ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে যাবতীয় খরচ মিটিয়ে আয় তো দূরের কথা, লোকসান গুণতে হচ্ছে। তারা দুগ্ধ শিল্প রক্ষায় গোখাদ্যর বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন। দুগ্ধ খামারি শীতল বাবু বলেন, দুধের ব্যবসায় লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি।

গোখাদ্যের দাম যেভাবে বাড়তেছে হয়তো দুধের দাম বাড়াইতে হবে না হলে দুধ বেচা বন্ধ করে দিতে হবে। হু হু করে গরুর খাবারের দাম বাড়ছে। সেভাবে দুধের দাম তো বাড়ে না। লোকসান দিয়ে এভাবে দুধ বেচতে থাকলে বাড়ি বেচে গরুর খাদ্য কিনতে হবে।

খামারিরা জানান, বর্তমানে এক বস্তা ভালো মানের গমের ভূষি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। কিছুদিন আগে যার বাজার মূল্য ছিল ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। একইভাবে মাসকলাইয়ের ভূষি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়। কয়েক মাস আগেও এর দাম ছিল এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা। খৈল বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা তিন হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকায়, যা কয়েক মাস আগে ছিল দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায়। দাম বেড়েছে শুকনো খড়েরও। বর্তমানে এক মণ খড় বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, যা তিন থেকে চার মাস আগে ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
নগরপাড়া বাজারের গোখাদ্যের বিক্রেতা মারতুজা কামাল বলেন, বেচাবিক্রি অনেক কমে গেছে। বেশি দামে খামারিরা খাদ্য কিনতে চায় না। অল্প অল্প করে কিনেন। আমাদের তো কিছু করার নাই। আমরা বেশি দামে কিনে আনতে হয়। তাই বেশি দামে বেচতে হয়। তারপরও বেচাবিক্রি নাই বললেই চলে।

উপজেলার পবনকুল গ্রামের গোখামারি আব্দুল মোতালেব হোসেন বলেন, আমার খামারে ৮০টি গাভী ছিল। প্রতিদিন খরচ হতো চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু খড় ও ভূষির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমি অনেক গাভী বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে আমার খামারে ৩০টি গাভী রয়েছে। প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ লিটার করে দুধ পাওয়া যায়। এই দুধ বিক্রি করে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা হয়। কিন্তু ৩০টি গাভীর পেছনে আমার খরচ হয় প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। দুধের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিয়েই গাভীর খাবার কিনতে হচ্ছে। দুই-তিন মাস আগেও এক লিটার দুধের উৎপাদন খরচ ছিল ৩০-৩৬ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৪৫-৫০ টাকা হয়েছে। তিনি আরো জানান, উৎপাদন খরচ বাড়লেও পাইকারি বাজারে দুধের দাম বাড়েনি। বর্তমানে খুচরা বাজারে এক লিটার দুধ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও পাইকারি বাজারে তা ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার দক্ষিণবাঘ গ্রামের নায়েবালী বলেন, আমার খামারে ৯০টি ষাঁড় গরু ছিল। খড়, ভূষি ও গমের খুদ ও ফিডের দাম চড়া হওয়ায় ৫০টি ষাঁড় বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে খামারে ৪০টি ষাঁড় আছে। প্রতিটি গরুর দাম দেড় লাখ টাকা থেকে দুই লাখ টাকা দাম হবে। বর্তমানে চড়া মূল্যে খাবার কিনতে হচ্ছে। এত দামে খাবার কিনে গরু মোটাতাজা করে বাজারে কেমন দাম পাবো তা নিয়ে আমি সন্দিহান।

রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ডেইরি খামার রয়েছে এক হাজার ১৪৫টি এবং মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে ৩২০টি। খামারিদের মোট গরুর সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার। রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রিগেন মোল্লা বলেন, খামারিদের সব ধরনের সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। পশুখাদ্যের ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানোর জন্যও সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও