বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান’

জুন ০৪ ২০২২, ২১:২৩

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ “ওই শোন কদম্বতলে বংশী বাঁজায় কে? আমার মাথার বেনু খুইল্যা দিমু তারে আইনা দে” সখির এমন মায়াভরা কণ্ঠে গান শুধু কদম ফুলের জন্যই মানায়। কদম বাংলার চির চেনা একটি ফুলের নাম। গোলাকার সাদা হলুদ রঙে মিশ্রিত ফুলটি দেখতে যেন ভোরের সূর্য্য। প্রকৃতি যেন কানের দুলে সেজেছে কদম ফুল দিয়ে। বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম ফুল। কদমের মিষ্টি হাসি আমাদের মনে করিয়ে দেয় এ বুঝি বর্ষা এলো।

এখন মধু মাস জৈষ্ঠ্য চলছে। আকাশে বাতাশে পাকা আম , জাম, কাঠাল আর লিচুর মৌ মৌ গ্রাণে মন মাতোয়ারা। বর্ষার এখনও বেশ কিছু বাকি। এরইমধ্যে ফুটেছে মনোলোভা কদম ফুল। মধুমাসে বর্ষার কদম যেন প্রকৃতির অলংকার হয়ে ফুটেছে।গাছে ফোটেছে কদম ফুল। পেতে সবাই হয় ব্যাকুল। নর নারী দেখে হয় আকুল।আষাঢ ও শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হলেও রূপে ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বর্ষাকালই সেরা। বর্ষায় চারপাশ মুখরিত থাকে কদম, দোলনচাঁপা, কামিনী, কেয়া, বেলি, অলকানন্দা ও বকুল ফুলের সুবাসে।

রূপলাবণ্যে ভরা অপরূপা বৈচিত্রময় আমাদের এ বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর এ বাংলাদেশে শহরে প্রকাশ না পেলেও গ্রাম বাংলায় প্রতি ঋতুতেই তার বৈচিত্র প্রকাশ পায়। যারা হঠাৎ করেই ভাবতে বসেন- মুষল ধারে বৃষ্টি হবে আর শুকিয়ে যাওয়া শহর আবার ভিজবে, আজ তাদের বলে দেওয়ার দিন- শুধু শহর নয়, নগর-বন্দর-গ্রাম সব ভিজবে এবার। কেননা বর্ষা এসে গেছে। বর্ষা মাস নিয়ে রয়েছে অনেক কবিতা ও গান। ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে, তিল ঠাঁই আর নাহিরে, ওগো! আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে। ’ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ষা কবিতাটি পড়লে গ্রাম বাংলার বর্ষার আসল রূপ জানা যায়। তাই এ বর্ষায় মনে পড়ে যায় কবি গুরুর লেখা গান ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান’।

বর্ষায় নদীনালা, খাল-বিল থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। গাছপালাগুলো সবুজে ছেয়ে যায়। এ মাস নিয়ে রয়েছে অনেক কবিতা ও গান। এ বর্ষার শুরুতে স্কুল কলেজগুলোসহ মোড়ে মোড়ে বিক্রি করতে দেখা যায় কদম ফুল। ফুটপাতে কদম ফুল কিনতে আসা আখি আক্তার নামে এক তরুণী বলেন, কদম ফুলগুলো শুধু বর্ষাকালেই পাওয়া যায়। এ ফুলটি দেখতে অনেক সুন্দর। তাই লোভ সামলাতে না পেলে ফুলগুলো কিনেছি।

বর্ষার সময় বৃষ্টিতে যেন কদমফুল বেয়ে অশ্রু ঝরে। কদমগাছ সাধারণত ৩০-৪০ ফুট লম্বা হয়। ফুল গোলাকৃতি লম্বা বৃন্তে দ-ায়মান। ফুলের রঙ হলুদ সাদায় মেশানো। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই এই ফুল ফোটে। এই ফুলের সৌন্দর্য আছে কিন্তু গন্ধ নেই।
আবহমান কাল ধরেই আমাদের প্রকৃতিকে বর্ষার ফুল স্বতন্ত্র্য সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়ে আসছে তার নিজস্ব উদারতায়। বর্ষা ও তার ফুল যেন বাংলার প্রকৃতির আত্মা; বৃষ্টিস্নাত বর্ষার ফুলের উজ্জ্বল উপস্থিতি মানুষের মনে রঙ লাগিয়ে আসছে। তাই তো কবি কণ্ঠে উচ্চারিত হয়- অনন্য কবিতার পঙ্কিÍমালা- ‘আঁধারে ডুবিছে সবি/কেবল হৃদয়ে হৃদি অনুভবি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেহা নুর বলেন, সাধারণত আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতে কদম ফুল ফোটে। বাংলার গ্রাম ও বনে বনে বর্ষার বারিধারায় কদম ফুলের রেণু ভেসে চলে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের মিষ্টি সুবাস। বাতাসে দোল খাওয়া কদম ফুলের তালে তালে পাখিরাও নেচে আজ পাগলপারা। গাইতে থাকে মিষ্টি সুরে গান। কদম গাছের পাতা হয় বড় বড়, ডিম্বাকৃতি, উজ্জ্বল-সবুজ, তেল-চকচকে। এর বোঁটা খুবই ছোট। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। কদম গাছ দীর্ঘ আকৃতির ও বহু শাখাবিশিষ্ট হয়ে থাকে। শীতে কদমের পাতা ঝরে এবং বসন্তে কচি পাতা গজায়। কদমের কচি পাতার রঙ হালকা সবুজ।

মুড়াপাড়া কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রফেসর নুরুজ্জামান মিয়া জানান, এক সময় প্রচুর কদম ফুলের সৈান্দর্য্য চোখে পড়ত। যান্ত্রিক সভ্যতা ও নগরায়নের যুগে মানুষের সামান্য প্রয়োজনে কেটে ফেলছে কদমসহ বহু গাছ। কদম ছাড়া বর্ষা এক রকম বেমানান। যার ফলে এখন আর আগের মতো চোখে পড়েনা গাছে ফুটে থাকা কদমের মিষ্টি হাসি।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও