আকবর বাহিনীর দাপটে রূপগঞ্জের ৫০ হাজার মানুষ জিম্মি

জানুয়ারি ১৭ ২০২৩, ১৫:৩০

Spread the love

নজরুল ইসরাম লিখন, রূপগঞ্জঃ রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব এলাকার আতঙ্কের নাম আকবর বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশের উপর হামলা, চাঁদাবাজি, হত্যা, জমিদখল সহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ রয়েছে। তারাবসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
প্রতিবাদ করলেই মামলা হামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। তাদের হাত থেকে প্রতিবন্ধীরাও রক্ষা পায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তারাব দক্ষিণপাড়া এলাকার বারেক ভুইয়ার ছেলে আকবর বাদশা। ২০১২ সালের মে মাসে ফয়সাল আহমেদ নামের এক যুবককে হত্যার পর আকবর বাদশার উত্থান শুরু হয়। এরপর আকবর বাদশা এলাকায় তৈরি করে আকবর বাহিনী নামের এক বাহিনী । এরপর থেকেই চাঁদাবাজি, হত্যা, ছিনতাই, জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে আকবর বাহিনী।

বর্তমানে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর নেতার ছত্রছায়ায় ও সেলটারে এ বাহিনী এতো বেপরোয়া। আকবর বাদশার সেল্টারে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করেন রোবেল ও তার স্ত্রী রোকসানা। বর্তমানে রোবেল মাদক ও অস্ত্র মামলায় জেলহাজতে রয়েছেন। আর এসব মাদক সেবন করে দিন দিন যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এছাড়া আকবর বাহিনী সদস্যের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে ওই সব মামলার বাদী ও সাক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

আকবর বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রযেেছ, তারাব এলাকার শবনম অয়েল ফ্যাক্টরির সুপারভাইজার লোকমান হোসেন ও ফরিদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আকবর বাহিনী। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন লোকমান হোসেন ও ফরিদকে এলোপাথারি ভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। শুধু তাই নয় দশ লাখ টাকার মূল্যের মেশিনারি মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা কর্মকর্তা ফেরদৌস মিয়া বাদী হয়ে আকবর বাহিনীর প্রধান আকবর বাদশা শহিদুল সাইফুল উত্তম মাসুদ মাসুম সবুজ সহ ১০/ ১৫ জনকে আসামি করে রুপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর তারাবো দক্ষিণপাড়া এলাকার জাহাদ আলী নামে এক ব্যক্তি ময়লা ফেলার জন্য হাউজ নির্মাণ করতে যায়। পাশের বাড়ির হীরা মনিদের ঘরের সামনে হাউজটি নির্মাণ করলে দুর্গন্ধ বের হবে। এজন্য হাউজ নির্মাণে হিরা মনিরা বাধা প্রদান করেন। পরে জাহেদ আলী আকবর বাহিনীকে ভাড়া করিয়ে আনে। এক পর্যায়ে আকবর বাহিনী হিরা মনি, তার মা রাজিয়া বেগম, ভাই রহিম বাদশা ও প্রতিবন্ধী ভাই আব্দুল্লাহকে এলোপাথড়ি ভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।

ওই ঘটনায় হিরা মনি বাদী হয়ে আকবর বাদশা বাহিনী এর রুবেল সিয়াম সহ ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

একই বছর ১ সেপ্টেম্বর চলাচলের রাস্তা দখলকে কেন্দ্র করে আকবর বাদশা, মাসুম রেজা, আলামিনসহ ৫ থেকে ৬ মিলে তালুকদার কেমিক্যাল কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহীন মিয়াকে পিটিয়ে আহত করে। ওই অভিযোগে শাহীন মিয়া অভিযোগ করেন, আকবর বাহিনী প্রধান আকবর বাদশাসহ এ বাহিনীর সদস্যদের অন্য কোন পেশা নেই। চাঁদাবাজি, হত্যা, জমিদখল সহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা-ওই তাদের মূল পেশা।

২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারাবো বাজার ঘাট শীতলক্ষা নদীর পাড়ে জুয়ার আসর বসায় আকবর বাহিনী। খবর পেয়ে ডেমরাা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি পুলিশ সদস্যরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করে জুয়ার আলামত পান। পুলিশের অভিযানে আকবর বাদশা সহ আকবর বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে জুয়ার আলামত সংগ্রহ করতে গেলে আকবর বাদশার নেতৃত্বে আকবর বাহিনী আলামিন, সোহেল, আজমত আলী, আব্দুল মালেক, আব্দুর রহিমসহ আকবর বাহিনীর ৩০ থেকে ৪০ জনের সদস্য অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করে।

এ সময় ডেমরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক রহমত মিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় । এ ঘটনায় ডেমরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি উপরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন । আকবর বাদশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিকবার গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠালেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) আকবর বাহিনীর লোকজন প্রতিপক্ষ মুনসুর কে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ শুরু করলে উভয় গ্রুপের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। ভয় কেউ প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পায়নি।

এছাড়া ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়ের করা ৪৮ নম্বর মামলার সাক্ষী নাসির উদ্দিনকে হত্যার হুমকি দেয় আকবর বাদশা। হুমকির বিষয়ে ২০২২ সালের এক নভেম্বর নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়রিও করেন। আকবর বাহিনীর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই।

নাম না প্রকাশ্যে কয়েকজন বলেন, আকবর বাহিনীর অত্যাচার অতিষ্ট হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। এ বাহিনী সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হলে এলাকার অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে। এ বিষয়ে আকবর বাহিনীর প্রধান আকবর।

বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এছাড়া ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ বলেন, আকবর বাদশাসহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও