বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের যোগানে রূপগঞ্জের ফুল চাষিরা ব্যস্ত

ফেব্রুয়ারি ০৮ ২০২৩, ১৪:৪১

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ প্রিয়ার মনতো ফুলেই দোলে। ফুল কার না ভাল লাগে। সবাই ফুলকে ভালবাসে। কবি বলেন, যে ফুলকে ভালবাসে না, সে মানুষ খুন করতে পারে। আর উৎসব অনুষ্ঠান ফুল ছাড়াতো কল্পনাই করা যায় না। আর তা যদি হয় ভালবাসা দিবস আন্তর্জাতিক মাত্রভাষা দিবস, তো ফুল ছাড়া কোনো কথাই নেই।

ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাড়ে বিভিন্ন ফুলের চাহিদা। ফুল শুধু পবিত্রতার প্রতীকই নয়, ভালোবাসা-শ্রদ্ধা, এমনকি সুখেরও একমাত্র অনুষঙ্গ। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়। তেমনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন মাছুমাবাদ, ভায়েলা, মুইরাবোসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে হচ্ছে ফুলের চাষ। আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এসব ফুল যাবে রাজধানীসহ সারা দেশে। এবার প্রায় ২০ লাখ টাকার ফুল যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এ কারণে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এ এলাকার ফুলচাষিরা।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, শীতের শেষ মুহূর্তে আরামের ঘুম ত্যাগ করে ফুলচাষিরা ফুলের বাগানগুলোতে পরিচর্যা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। উপজেলার মাসুমাবাদ ও পার্শ্ববর্তী দীঘিরপাড়, মিয়াবাড়ী, মুইরাবো, ভায়েলা, পোরাবো, পিতলগঞ্জ এলাকার বেশির ভাগ জমিতে এখন গন্ধরাজ, ডালিয়া, কাঠ বেলী, চেরী, আলমেন্দা ফুলের বাগান। প্রতিদিন ভোর ৫টার মধ্যে বাগানে চাষিরা, বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে ফুল উঠানো আর বাগান পরিচর্যার কাজ। এ ব্যাপারে ভায়েলা মিয়াবাড়ী গ্রামের ফুলচাষি নাঈম মিয়া জানান, প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে ফুলচাষের সঙ্গে তিনি জড়িত। এ বছর ৭ বিঘা জমিতে তিনি ডালিয়া ফুল, চেরী ফুল ও গন্ধরাজ ফুলের চাষ করেছেন।

বাগানে কাজের তদারকি করা, ফুলের মালা বুঝে নিয়ে পাওনা মিটিয়ে দেয়ার দায়িত্বটি তারই। প্রতিদিন সকালে বাগান থেকে ফুল তুলে মালা বানানোর জন্য লোকজন তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে বিকালে আবার মালা তৈরি করে দিয়ে যায় বাগান মালিকদের কাছে। কেউ কেউ প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০টি মালা গাঁথতে পারেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই তিনি এ বাগানের ফুল ও ফুলের মালা বিক্রি করার জন্য ছোটেন রাজধানী শাহবাগের বিভিন্ন ফুলের দোকানে। তার মতো মাসুমাবাদ দীঘিরপাড় গ্রামের ফুলচাষি শহীদুল্যাহ, ভায়েলার পিয়ার আলী, মিয়াবাড়ীর নজরুল ইসলাম, জালালউদ্দিন, মিয়াবাড়ীর আলী, মুইরাবোর আমিনুল হকসহ ১০ জন চাষি প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে এ বছর ফুলচাষ করেছেন। তার অধীনে কাজ করছে প্রায় ৫০টি পরিবারের লোকজন।

কথা হয় ফুল শ্রমিক এক সন্তানের জননী শিরিন আক্তারের সঙ্গে, তিনি বলেন, স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। স্বামীর রোজগারের টাকা দিয়ে সংসার তেমন চলে না। তাই ফুলের মালা তৈরির কাজ করি। এতে যা উপার্জন হয় সংসারে অনেকটা সমস্যা লাঘব হয়। মালা তৈরির কারিগর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার বলেন, করোনায় স্কুল বন্ধ দিয়া দিছে। সেজন্য বাড়িতে অলস সময় পার না করে ফুলের মালা তৈরি করি। এদিকে সময়ও পার হয়, আর কিছু টাকাও উপার্জন হয়। ফুলচাষি সোলাইমান বলেন, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের কদর থাকে অনেক। এবার এ দুই দিবসে উপজেলার এসব গ্রাম থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকার ফুল যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেহা নুর জানান, ফুলচাষ যেমন সৃজনশীল কাজ তেমনি একটি লাভজনক ব্যবসাও। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অনেক জমিতে ফুলের বাগান গড়ে উঠেছে। ফুলচাষ ও ফুল বিক্রি করে আজ অনেক বেকার যুবক স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তবে এবার ফুলচাষিরা লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদী।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও