সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্টিক মেশিনে হাজিরা চালু না হওয়ায় মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ার পথে

ফেব্রুয়ারি ২৮ ২০২৩, ১৭:৫৯

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় নিম্নমানের মেশিনগুলো এখন নষ্ট হওয়ার পথে, জলে যাচ্ছে ক্রয়ের ৬০ লাখ টাকা। উপস্থিতি ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত না হওয়ায় বেশির ভাগ স্কুলের শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রায় দুই বছর আগে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনা হয়। শিক্ষকদের সময়মতো প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে অর্ধকোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে উপজেলার ১৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বসানো হয় বায়োমেট্রিক মেশিন। কিন্তু বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরার জন্য বসানো মেশিনগুলো এখন নষ্ট হওয়ার পথে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় । তবে এসব মেশিন ব্যবহারে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি, অনেক শিক্ষক আবার ডিভাইসটির ব্যবহারও জানেন না।

নিম্নমানের ডিভাইস কেনা এবং করোনাকালীন দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর শিক্ষকরা বলছেন, এসব মেশিন ক্রয় বাবদ সরকার যে ৬০ লাখ টাকা খরচ করেছে, তা মূলত জলে গেছে।

জানা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ) ফান্ড থেকে এসব যন্ত্র কেনার ব্যয় সরবরাহ করা হবে এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায়িত্বে সেগুলো কিনে নেবে। এসব মেশিনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। কোন শিক্ষক কখন বিদ্যালয়ে আসবেন, সেটি উপজেলা অফিসের কার্যালয়ে বসেই জানতে পারবেন কর্মকর্তারা।

রূপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী মো. শাহজাহান জানান, এ উপজেলার ১১৫টি স্কুলে বায়োমেট্রিক মেশিন রয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশনা না থাকায় সেগুলো সচল হচ্ছে না।
এদিকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অনেক শিক্ষকই এ মেশিন ব্যবহার করতে জানেন না। আবার অনেক জায়গায় সঠিকভাবে মেশিন স্থাপন করা হয়নি। ফলে চাইলেও কেউ তা ব্যবহার করতে পারছেন না।

রূপগঞ্জের আগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমাইয়া পারভীন জানান, এটা (বায়োমেট্রিক মেশিন) কিনেছি পর্যন্তই। আর ব্যবহার করা হয়নি। করাটিয়া আঙারজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিনা পারভীন বলেন, ‘কেন যে এটা দিল বুঝলাম না। টাকা খরচ করে কিনেছি। এ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি।’

বৈলদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদা আক্তার বলেন, ‘কেউ ব্যবহার করে না, তাই আমিও করি না। আমাদেরটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পাশের আরও অনেক স্কুলেরও নষ্ট হয়ে রয়েছে।’

কাঞ্চন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দুই বছর হয়ে গেছে কিনেছি। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। উপজেলা থেকে লিংক হওয়ার কথা ছিল, সেটাও হয়নি।’ একই কথা জানালেন নগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীন সুলতানা এবং জিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম। আর কামশাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা বেগমসহ অন্য শিক্ষকরা জানান, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন নষ্ট থাকায় তারা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন।

বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন সচল রাখতে অনলাইনে বার্ষিক সার্ভিস চার্জ রিচার্জ করতে হয় ৫০০ টাকা। আর টাকা রিচার্জ না হলে সেগুলো কোনো কাজেই আসে না। করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় আর রিচার্জের অভাবে অনলাইন সংযোগ না থাকায় চালুর আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মেশিনগুলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, রূপগঞ্জের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে অনলাইন সংযোগ নেই। এখানের স্কুলগুলোতে ১০ হাজার টাকার মধ্যে পুরো মেশিন সেট স্থাপন করা হয়েছে। অথচ বিদ্যালয়ে দেয়া বিলপত্রে ডিভাইস, ডোমেইন, হোস্টিং, সিম ও বিভিন্ন ইস্যুতে অর্ধেক টাকারই নয়ছয় ব্যয় দেখানো হয়েছে। ইন্টারনেট বাবদ বার্ষিক চার্জও নেয়া হয়েছে বিদ্যালয় থেকে। অথচ ইন্টারনেট সংযোগই দেয়া হয়নি।

এ চিত্র শুধু রূপগঞ্জ উপজেলার সর্বত্রই। প্রাথমিক স্কুলগুলোতে বিকল হয়ে পড়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন। ফলে শিক্ষকদের উপস্থিতির তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। আর এই সুযোগে বেশির ভাগ স্কুলের শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নারায়ণগঞ্জ জেলা ও রূপগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এখন পর্যন্ত এসব মেশিন ব্যবহারের সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। সে কারণে তাগিদও নেই। এরপর মেশিন চালাতে হলে ইন্টারনেট ও চার্জ খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৫০০ টাকার দরকার। এটা কোথা থেকে আসবে?

নষ্ট মেশিনের বিষয়ে আব্দুর রহিম বলেন, দুই বছর হয়ে গেছে। এটা দিয়ে তো কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে নষ্ট হওয়ার কথাই।
রূপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদা আক্তার জানান, নির্দেশনা নেই। তাই কার্যক্রম নেই। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নষ্ট হতেই পারে।###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও