ঈদে ও অন্যান্য উৎসবে এখনো হাতে বানানো সেমাই এর কদর রয়েছে

এপ্রিল ১৪ ২০২৩, ২২:২৪

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ কথায় আছে বাঙ্গালী উৎসবে মাতে। উৎসব আয়োজনে থাকে বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের আয়োজন। হোক সেটা ঈদ পূজা বা নবান্ন। একেক উৎসবে একেক রকমের আয়োজন করে থাকেন। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিনে একটু মিষ্টি মুখ না করলেই নয়। ঈদকে সামনে রেখে পাড়া মহল্লায় চলছে বিভিন্ন পিঠা, সেমাই বানানোর ধুম। ঘরের ছেলে বুড়ো নববধুরাও এতে যোগ দিচ্ছেন। আর ক‘দিন বাদেই তো ঈদ। সময় নাই বেশি। সবাই মিলে হৈহুল্লোড় আর গল্প গুজবে মেতে তৈরি করছেন হাতে বানানো বিভিন্ন পিঠা, সেমাই। ঈদের দিন সকালে খাবার টেবিলে সুস্বাধু করে রান্না করে উপস্থাপন করা হবে সবার জন্য।

হাতে বানানো সেমাই মানুষকে মমতার, ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে রেখেছে। বছরের সুবিধামতো সময়ে হাতে বানিয়ে সেমাই শুষ্ক অবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখা হয় মূলত ঈদে খাবার জন্য। ঈদের আগের দিনও হাতে সেমাই বানানোর প্রচলন রয়েছে। বাড়ির নারীরা সবাই মিলে চাঁদ রাতে সেমাই তৈরি করছে, এ দৃশ্য এখনো বিমোহিত করে রাখে অনেককে। সেমাই বিষয়টির সঙ্গে একান্তভাবে জড়িয়ে রয়েছেন নারীরা। সে কারণে মা, নানি, দাদি, খালা, ফুফুর স্মৃতি ভেসে ওঠে ঈদের সকালে দুধ দিয়ে রান্না করা ধোঁয়া ওঠা সেমাই খেতে খেতে।

রোজার ঈদে হাতে কাটা সেমাই দিয়ে একসময় হবে মিষ্টিমুখ। ঈদের সকালে নতুন কাপড় গায়ে জড়িয়ে খাবার টেবিলে বসে মনের অজান্তেই আপনার চোখ এবং হাত যে খাবারটির দিকে চলে যাবে, সেটি সেমাই; দুধ–চিনি–বাদাম দিয়ে রান্না করা সেমাই। আপনি খাবার শুরুও করতে পারেন সেমাই দিয়ে আবার শেষও করতে পারেন সেটি দিয়েই। যা–ই করুন না কেন, সেমাই আপনাকে খেতে হবে সে এক চামচই হোক আর এক বাটিই হোক।

ঈদের সকালে বাঙালি ঘরের এ প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। সেমাই না হলে ঈদ যেন ঠিক জমে ওঠে না। দুধ, চিনি, বাদাম দিয়ে রান্না করা সেমাই বাংলাদেশের ঈদের খাবারের আইকন। খাবার টেবিলে বাহারি পদের খাবারের সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা সেমাইর বাটি বাঙালি বাড়ির ঈদের চিরন্তনী দৃশ্য। মোগলাই বা ইউরোপিয়ান খাবার টেবিলে থাকলেও ঈদের সকালে সবকিছুর আগে সুস্বাদু সেমাই খেতে দেওয়া হবে এটা বাঙালি প্রথা।

হাতে বানানো সেমাইয়ের দুটি ধরন রয়েছে। একটি হাতে ডলে ডলে বানানো সেমাই, অন্যটি হাতে ঘোরানো যন্ত্র দিয়ে বানানো সেমাই। হাতে ডলে বানানো সেমাইয়ের প্রচলন প্রাচীন। চালের আটা ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে ম- বানিয়ে সেই ম- পরিমাণমতো হাতে নিয়ে ডলে ছোট ছোট লম্বা সরু নালি তৈরি করা হয় প্রথমে। তারপর সেখান থেকে পরিমাণমতো কেটে নিয়ে তৈরি করে সেমাই বানানো হয়। সেগুলোকে রোদে শুকিয়ে রেখে ঈদের দিন রান্না করা হয় দুধ দিয়ে। পরবর্তীকালে সেমাই বানানোর যন্ত্র আবিষ্কৃত হলে সেই যন্ত্রে সেমাই বানানোর প্রচলন হয়। যন্ত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ আটার ম- রেখে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেমাই তৈরি করে বাড়ির নারীরা। যদিও এখন এই সেমাই তৈরি প্রক্রিয়াও প্রায় অপ্রচলিত হয়ে গেছে।

হাতে বানানো সেমাইয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেমাই অর্থাৎ কারখানায় বানানো সেমাই। এতে করেও হাতে বানানো সেমাই খাওয়ায় ভাটা পড়েনি খুব একটা। কোনো কোনো পরিবারে এখনো বাজারের কেনা সেমাইয়ের পাশাপাশি ঐতিহ্য মেনে ঈদে হাতে বানানো সেমাই খাওয়া হয়, খাওয়ানো হয়।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও