উল্টো করে লিখা বিরল প্রতিভার অধিকারী যমুনা স্বপ্ন দেখেন ডাক্তার হওয়ার

জুন ০৮ ২০২৩, ২১:৩৯

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ শিক্ষাজীবনে অনেকেরই অনেক প্রতিভা দেখা যায়। কিন্তু যমুনার মতো প্রতিভা এখন পর্যন্ত হয়তো কেউ দেখাতে পারেনি। তিনি সবসময় খাতায় উল্টো করে লেখেন। আর এই উল্টো করে লিখেই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

এসএসসির মতো এইচএসসিতেও তিনি এভাবেই খাতায় উল্টো করে লিখবেন। সেইসঙ্গে এই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনও করবেন বলে প্রত্যাশা তার। বিরল এই প্রতিভার অধিকারী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দীঘিবরাব এলাকার যমুনা আক্তার।

যমুনার বাবা কাদের খা একজন চা দোকানী। বাবার সঙ্গে মা শেফালীও চায়ের দোকান সামলান। আর এই চায়ের দোকান থেকে উপার্জিত আয়েই চলে তাদের সংসার। মেয়ে যমুনার পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পারিবারটি। তারপরও তারা তাদের মেয়ের ইচ্ছা পূরণে বদ্ধপরিকর।

যমুনা আক্তার বলেন, আমি যখন লেখা শিখি তখন থেকেই এভাবে শিখেছি। কেউ আমাকে লেখা শেখায়নি। যার কারণে আমার উল্টো করে লেখার অভ্যাস হয়। প্রথমে এই উল্টো লেখা নিয়ে শিক্ষকরা আপত্তি জানালেও আমি উল্টো লেখার অভ্যাস ছাড়তে পারছিলাম না। পরে উল্টো করে লিখেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। আমি লেখাপাড়া করে একজন ডাক্তার হতে চাই। ডাক্তার হয়ে আমি গরিব-দুঃখী মানুষের সেবা করতে চাই।

যমুনা আক্তারের বাবা কাদের খা বলেন, মেয়েকে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছি। আমরা চাই যেন তার স্বপ্ন পূরণ হয়। মা শেফালী বলেন, আমার কোনো ছেলে নেই। পাঁচ মেয়ের মধ্যে যমুনা সবার ছোট। অন্য মেয়েরা পড়ালেখা করার সুযোগ না পেলেও এই মেয়েটা পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছে। তার পড়ালেখায় আগ্রহ আছে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই আল্লাহ যেন আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করেন।
যমুনার পড়ালেখা শুরু হয় রূপগঞ্জের দীঘিবরাব এলাকার প্রতিভা বিকাশ কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে। সেই স্কুলের শ্রেণিশিক্ষক মো. শাহিন মিয়া বলেন, আমি যখন যমুনার শ্রেণিশিক্ষক ছিলাম তখন তার এই উল্টো লেখা দেখে অবাক লাগে। তখন আমি শিক্ষক হিসেবে তাকে অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে লেখার পরামর্শ দিলাম। কিন্তু সে তার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেনি। এভাবে লিখেই সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো রেজাল্ট করেছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি তার মঙ্গল কামনা করছি।

প্রতিভা বিকাশ কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, আমার স্কুল থেকেই যমুনার পড়ালেখার হাতেখড়ি। সে আমাদের স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২১ সালে এসএসসি সম্পন্ন করে। আমার স্কুলে যখন ভর্তি হয়েছিল তখন দেখি সে উল্টো করে লিখছে। আমরা এই বিষয়টা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। পরবর্তীতে আমরা শত চেষ্টা করেও ওই জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, যমুনার হাত সোজা থাকে কিন্তু খাতা উল্টো থাকে। কেন্দ্রীয় পরীক্ষাতেও সে এভাবেই লিখেছে। তবে সে ভালো রেজাল্টও করেছে। তার স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে। আমি তার অভিভাবককে কথা দিয়েছি আমি সহযোগিতা করবো। সেইসঙ্গে সবার সহযোগিতা কামনা করছি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক বলেন, সে যদি এরকম উল্টো করে লিখে থাকে তাহলে সেটা অবশ্যই একটা বিরল প্রতিভা। আমরা এই বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। তার জন্য যদি কিছু করা যায় তাহলে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করে দেখবো।#####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও