চাটখিলে বাইশসিন্দুরে জরাজীর্ণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যহত
আনোয়ার হোসেন, বুরো প্রধান চট্টগ্রাম :দীর্ঘ দিন ধরে জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন আতংকে দিন কাটছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। নিয়মিত পাঠদানে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষকদের।
এমন জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি হলো নোয়াখালী জেলা চাটখিল উপজেলার ৩নং পরকোট ইউনিয়নের, বাইশসিন্দুর কাজী আহমদ উল্লাহ্ মেমোরিয়াল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভবনটি জরাজীর্ণ আতংকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এলাকার প্রজন্মকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে কাজি আহমদ উল্লাহ্ সাহেবের হাত ধরে এই বিদ্যালয়টি রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ বছর পর ২০১৩ সালে এটাকে জাতীয়করণ করা হয় এবং এর নামকরণ করা হয় বাইশসিন্দুর কাজী আহমদ উল্লাহ্ মেমোরিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এটি নামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হলেও এর দুঃখ দুর্দশার অন্ত নেই। পূর্ব পাশের ভবনটি একেবারেই জরাজীর্ণ এবং পরিত্যক্ত। বিদ্যালয়ের মাঠের দক্ষিণ পাশ জুড়ে রয়েছে একটি দো-চালা টিনশেড ঘর তাও ভাঙ্গা। তিনটি কক্ষের মধ্যে একটি শিক্ষকদের অফিস রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাকি দুটিতে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। রুমগুলো একেবারেই ছোট প্রত্যেকটি রুমের সামনের দিকে কিছু পুরনো ভাঙ্গা বেঞ্চ স্তুপ করে রাখা আছে। এই বেঞ্চগুলো রাখার বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই।
এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০২ জন। প্রধান শিক্ষিকা বিলকিস আক্তার ছাড়াও মোঃ ওমর ফারুক, আয়েশা বেগম, নুর নাহার আক্তার, জান্নাতুল ফেরদাউস, শাহীন আক্তার (মাতৃত্বকালীন ছুটিতে) কে নিয়ে মোট ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন।
প্রধান শিক্ষিকা অসুস্থ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসায় থাকার কারণে, বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আয়েশা বেগম ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, ১৯৯৪ সালে এখানে পূর্ব পাশের ভবনটি স্থাপিত হয়েছিল। তিন কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটি একেবারে জরাজীর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযুক্ত হওয়ার কারণে ২০১৫ সালে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দক্ষিণ পাশে চাটখিল শিক্ষা অফিসের তত্ত্বাবধানে একটি টিনশেড ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। টিনশেডে পাঠদানের মত কোন অবস্থা নেই। ছোট ছোট তিনটি কক্ষের মধ্যে একটি অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয় ওপর দুইটিতে পাঠদান করানো হয়।
এটি ডাবল শিফটের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মর্নিং শিফট সকাল ৯ টা থেকে ১১ঃ৩০ টা পর্যন্ত এবং ডে-শিফট বারোটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত। মর্নিং শিফটের প্রয়োজনীয় কক্ষের অভাবে প্রাক-প্রাথমিকের পাঠদান অফিস রুমের মাটিতে বসিয়েই হচ্ছে।
এখানে নেই কোন ওয়াশরুম। ভালো পাঠদান হলেও শুধুমাত্র পরিবেশের কারণে অনেক অভিভাবকই তাদের বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করতে চান না।
শিক্ষার্থীরা জানালো, তাদের একটি নতুন ভবন চাই, শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ চাই। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও এখানে একটি ভালো ভবন হওয়ার জন্য আবেদন রাখলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলেন, আমি অনেক ভাবেই এই অবহেলিত বিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মানের জন্য চেয়েছি। কিন্তু এমপি মহোদয় সদয় হলেই সম্ভব। উনাকে অবহিত করা হয়েছে। কেন যে হচ্ছে না কিংবা তিনি দিচ্ছেন না তা বুঝতে পারছি না।
চাটখিল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,এরকম একটা অবহেলিত জরাজীর্ণ প্রতিষ্ঠান চাটখিলে দ্বিতীয় টি আর নেই। এত কিছুর পরেও বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান অত্যন্ত ভালো। আমি দেখেছি ভবন নির্মাণের পূর্বের লিস্টে এই বিদ্যালয়ের নাম নেই। কাগজপত্র পাঠিয়েছি। আশা রাখছি, এমপি মহোদয়ের দৃষ্টি দেবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে
চাটখিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন,আমি এই বিষয়ে অবগত আছি এবং এখানে একটি ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেছি।