রূপগঞ্জে একদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই,অন্যদিকে  শিশু শ্রমিক দিয়েই চলছে ইট ভাটা

ফেব্রুয়ারি ১৮ ২০২৪, ২১:২৩

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া এবং শিশু শ্রমিক দিয়েই ইট ভাটার কাজ চলছে।

শিশু শ্রমিক ও ব্রিক ফিল্ডের ছবি তুলতে গেলে এক ইটভাটার মালিক শের আলীর ছেলে দীন ইসলাম সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন “এটা আমার বাপ দাদার সম্পত্তি এখানে যা খুশি তাই করব” এগুলো সাংবাদিকদের দেখার কোন অধিকার নাই। তিনি আরো বলেন আমরা কারো ক্ষতি করি না। আমরা যদি ইটা প্রস্তুত বন্ধ করে দেই তাহলে ঢাকা ইট সংকট দেখা দেবে। তিনি আরো জানান, বড় কিছু করতে গেলে ছোট কিছু ক্ষতি হবেই।

বায়ুদূষণের ফলে রূপগঞ্জ এখন হুমকির মুখে। ফলে রূপগঞ্জকে বাঁচানোর পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী কর্মী ও স্থানীয় সুশীল সমাজের লোকজন। তাদের মতে, জনপ্রতিনিধিরা ভোটের রাজনীতি করেন ঠিকই কিন্তু দূষণের কারণে মানুষের জীবন সংকটাপন্ন। শুধু দূষণের কারণে বছরে রূপগঞ্জে প্রায় ৪৫০ লোকের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। এখানেই শেষ নয়, দূষণের কারণে বছরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ শ্বাসকষ্ট রোগে ভোগে। আর রূপগঞ্জে বায়ু, পানি ও পরিবেশ দূষণে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা। শুধু বায়ুদূষণে ক্ষতি হয় ৪০০ কোটি টাকা। দূষণের সবচেয়ে বেশি শিকার হয় শিশুরা। রূপগঞ্জের ৫১টি এলাকায় মাটি ও পানিতে সীসার পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে বায়ুদূষণ সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। রূপগঞ্জের ইটভাটাগুলো বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বায়ুদূষণের মানমাত্রায় রূপগঞ্জের একিউআই স্কোর ছিল ১৭৮, যা বাতাসের অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে নির্দেশ করে। সাধারণত ১০০ এবং ২০০-এর মধ্যে একিউআই শিশু এবং বয়স্কদের মতো ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচিত হয়। ২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) বায়ুদূষণের প্রধান ৩টি প্রধান উৎস হিসেবে ইটের ভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া এবং ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ধুলাবালির কথা উল্লেখ করা হয়। যার সবকটি রূপগঞ্জে রয়েছে। রূপগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ৪৭ হাজার যানবাহন চলাচল করে।

মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘রূপগঞ্জের বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা যার ব্যাস সাধারণত ২.৫ মাইক্রোমিটার বা এর চেয়ে ছোটটির (পিএম ২.৫) পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ৮৯.৮ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। এই মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মান মাত্রার (অর্থাৎ ৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে ১৮ গুণ বেশি এবং নির্ধারিত (বার্ষিক) মান মাত্রার চেয়ে ৬ গুণ বেশি। ২০২২ সাল পর্যন্ত অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ২.৫-এর জন্য নির্ধারিত (বার্ষিক) প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম। রূপগঞ্জে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ প্রায় ১৪৩টি ইটভাটা। এলাকাভিত্তিক বায়ুর মানের রকমফের থাকলেও সামগ্রিকভাবে রূপগঞ্জের বেশির ভাগ এলাকার বায়ু।’

ভুলতা মেমোরি হাসপাতালের ডা. ফারুক আহম্মেদসহ কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায়, বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। পরিবেশের প্রধান উপাদান বায়ু, মাটি ও পানি। রূপগঞ্জের বায়ু, মাটি ও পানি তিনটিই দূষিত। বিশেষ করে বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। কথাগুলো বলেছেন রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল আহম্মেদ। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী, রূপগঞ্জের বায়ু নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থদের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’।

পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ নানাভাবে দূষিত। অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের পরিবেশকর্মী হৃদয় সরকার বলেন, রূপগঞ্জের রাজনীতিবীদ, সমাজকর্মী, প্রভাবশালীরা নিজেদের স্বার্থ নিয়ে লড়াই করে। ভোট আসলে জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু দূষণের কারণে রূপগঞ্জের মানুষের যে বারোটা বেজে যাচ্ছে, সেদিকে কারও খেয়াল নেই। দূষণ রোধে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।

রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভি ফেরদৌস বলেন, বায়ুদূষণের কারণে সেখানে ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের হাসপাতালে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন ৬০-৭০ জন চিকিৎসা নিতে আসেন।

তিনি আরো বলেন, বায়ুদূষণে যতগুলো উপকরণ দরকার তার সবগুলোই রূপগঞ্জে রয়েছে। রূপগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে অনেক কল-কারখানা গড়ে উঠেছে। ###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও