বড়লেখায় স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় মামাতো ভাইকে গলা টিপে হত্যা

বড়লেখার বর্নি এম. মুন্তাজিম আলী কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র প্রান্ত চন্দ্র দাসকে পিসাতো ভাই সুমন চন্দ্র দাস (৩৪) গলা টিপে হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছিল। তিনি নিহত প্রান্ত দাসের মোবাইল ফোন থেকে বন্ধুমহলসহ বিভিন্ন জায়গায় ম্যাসেজ প্রেরণ করে যাতে সবাই বিশ্বাস করে, সে আত্মহত্যা করেছে।
কিন্তু এসব পরিকল্পনা করেও সুমনের শেষ রক্ষা হয়নি। প্রান্ত হত্যায় জড়িত সন্দেহে রোববার রাতে পুলিশ সুমনসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সুমন দাস স্ত্রী নিভা রানী দাসকে উত্ত্যক্তের জেরে মামাতো ভাই কলেজছাত্র প্রান্তকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডটি সুমন দাস একাই করেছে দাবি করলেও তার দেয়া জবানবন্দি পুলিশ যাচাই-বাছাই করছে।
প্রান্ত সুজানগর ইউপির বাঘমারা গ্রামের মৃত সনৎ চন্দ্র দাসের ছেলে। এ ঘটনায় নিহত প্রান্ত দাসের ভাই শুভ দাস সোমবার থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
সোমবার দুপুরে থানা পুলিশ গ্রেফতার হওয়া সুমন দাসকে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করে। এ সময় সুমন দাস জানায়, মামাতো ভাই প্রান্ত (১৮) তাদের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত। প্রায়ই তার স্ত্রী নিভা রানী দাসকে উত্ত্যক্ত, খারাপ আচরণ ও আপত্তিকর কার্যকলাপ করত প্রান্ত। এজন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়।
সুমন দাস জানান, ২৯ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে সে প্রান্তকে ঝাপটে ধরে। প্রান্ত দাস পালানোর চেষ্টা করলে পিছু নিয়ে রাস্তায় গিয়ে পুনরায় তাকে ধরে মুখ চেপে ধরলে ভয়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে মুখ, হাত-পা বেঁধে পরিত্যক্ত রান্নাঘরের খাটের পেছনে রেখে দেয়। পরদিন পর্যন্ত প্রান্ত জীবিত রয়েছে দেখে গলা টিপে হত্যা নিশ্চিতের পর রাত ৩টার দিকে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে যাতে সহজেই ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে সবাই বিশ্বাস করে।
পরদিন ৩০ অক্টোবর সকালে শিশুরা প্রান্ত দাসের লাশ দেখে চিৎকার করেছিল। আত্মহত্যার ঘটনাটি নিশ্চিত করতে প্রান্তের মোবাইল থেকে ঘাতক সুমন দাস বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করেছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মো. আবু ইউসুফ সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে জানান, লাশ উদ্ধারের পর প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই থানায় ইউডি মামলা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছিল না। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার প্রমাণ পাওয়ায় রোববার রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ৫ জনকে আটক করে।
তিনি জানান, এর মধ্যে নিহতের মামাতো ভাই সুমন দাস প্রান্তকে গলা টিপে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে সে একাই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে, নাকি আরও সহযোগী রয়েছে তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।