‘নর্থ-সাউথ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পে প্রতিটি এলইডি বাতির দাম ধরা হয়েছে ২৩৫০০০/-চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের

ফেব্রুয়ারি ১৯ ২০২০, ২৩:০৯

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃডিপিপি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ‘নর্থ-সাউথ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পে আড়াই কিলোমিটার সড়কটিতে ৩৫০টি এলইডি বাতি স্থাপন বাবদ খরচ হবে সোয়া ৮ কোটি টাকা। প্রতিটি বাতির দাম ধরা হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। যদিও একই সংস্থার আরেকটি প্রকল্পে সড়কবাতি কেনা হচ্ছে সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে। প্রতিটি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপনের খরচ ধরা হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। ২০টি খুঁটি সরানোর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা। আর স্থানান্তরে খরচ হবে আরও ৪০ হাজার টাকা করে। মোট খরচ ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।আড়াই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণে যেতে চান ১৩ জন। যাঁদের ৭ জন নির্মাণকাজে যুক্ত নন।

প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর ও সড়কবাতির অতিরিক্ত দাম নিয়ে আপত্তি উঠেছে পরিকল্পনা কমিশন থেকেও। এই আপত্তির কথা স্বীকার করেছেন সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাসানও।মাত্র আড়াই কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ জন্য আমেরিকা-কানাডা ও ইউরোপে প্রশিক্ষণ নিতে যেতে চান ১৩ কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী। যাঁদের মধ্যে সাতজনেরই প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আর এই আড়াই কিলোমিটার সড়ক আলোকিত করতে এলইডি বাতি কিনতে খরচ ধরা হয়েছে সোয়া আট কোটি টাকা। একেকটি বাতির দাম ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা করে।

এ প্রকল্পের অধীন চট্টগ্রাম মহানগরীর জাকির হোসেন সড়কের ওয়ারলেস মোড় থেকে নির্মাণাধীন বায়েজিদ বোস্তামী-ফৌজদারহাট সড়ক পর্যন্ত নতুন সড়কটি নির্মাণ করা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গত বছরের এপ্রিলে প্রকল্পটি গ্রহণ করে সিডিএ। বর্তমানে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) তথ্য অনুযায়ী, ২ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার লম্বা ও ৬৫ ফুট প্রশস্ত এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের বড় অংশই রাখা হয়েছে জমি অধিগ্রহণের জন্য। এ বাবদ রাখা হয়েছে ৫৭২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে স্থাপনার ক্ষতিপূরণ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা এবং সড়ক, ফুটপাত ও নালা নির্মাণে ৬০ কোটি টাকা।

অথচ বর্তমানে সিডিএর চলমান অপর একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে এলইডি বাতি কিনতে খরচ হচ্ছে প্রতিটি সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে। নতুন প্রকল্পে এত বেশি দাম ধরা হয়েছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাতির দামটা তাঁর কাছেও বেশি মনে হয়েছে। তবে তাঁরা ইচ্ছামতো দর দেননি। সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অনুমোদিত দর অনুসরণ করে ডিপিপি তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, বাতির দামের ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে জানতে চেয়েছিল। তাঁরা এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এখন তা সংশোধন করা হচ্ছে।

তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ডিপিপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বৈদ্যুতিক তার, খুঁটি, সোলার সিস্টেমসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি বাতির দাম ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু নতুন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে কেবল বাতিরই এই দাম ধরা হয়েছে। তার ও খুঁটির খরচ আলাদা করে ধরা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একটি বাতির দাম এত হওয়ার কথা নয়। তাঁর মতে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বালিশ-পর্দাসহ বিভিন্ন কেনাকাটায় মেগা দুর্নীতি হয়েছে। এ ​ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় হয়নি।

ইউরোপ-আমেরিকায় প্রশিক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন

নতুন এ সড়ক নির্মাণের প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণের খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কাগজে-কলমে প্রশিক্ষণ ব্যয় লেখা থাকলেও আদতে এটাকে বিদেশ ভ্রমণই বলছেন সিডিএর কর্মকর্তারা।

ডিপিপি অনুযায়ী, বিদেশ সফরের জন্য ইউরোপ, কানাডা ও আমেরিকাকে নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘প্রশিক্ষণ’ নিতে যাবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুজন এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কার্যক্রম বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), অর্থ বিভাগ ও একনেকের একজন করে মোট সাতজন প্রতিনিধি। আর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর প্রতিনিধি রাখা হয়েছে ছয়জন। জনপ্রতি খরচ হবে ১৫ লাখ টাকা।

মাত্র আড়াই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য কেন বিদেশে প্রশিক্ষণ দরকার—এ প্রশ্ন রেখে সুজন চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘আসলে প্রশিক্ষণের নামে সরকারি টাকায় বিদেশে ভ্রমণ ও পিকনিক হবে।’-প্রথম আলো।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও