তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে,বন্যার আশঙ্কা
আগমনী ডেস্কঃউজানের পাহাড় ও সমতলে একটানা বৃষ্টি ও গজলডোবা হতে পানি ছেড়ে দেয়ার জেরে ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী।
শুক্রবার সকাল ৬টার পর হতে ১৫ ঘণ্টায় নদীর পানি ৪৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রাত ৯টায় বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ এ দিন সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। সেই সঙ্গে ঢলের পানি দ্রুতগতিতে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্র মতে, চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি সর্ব প্রথম গত ২০ জুন বিপদসীমার উপরে উঠে। যা পরের দিন ২১ জুন সকালে নেমে যায়। এর ৬ দিনের মাথায় ২৬ জুন তিস্তা নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় পুনরায় বিপদসীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার উপরে উঠে ২৮ জুন সকালে নেমে যায়।
এরপর তৃতীয় দফায় ৪ জুলাই সকালে তিস্তার পানি ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ওইদিন সন্ধ্যায় তা নেমে গিয়েছিল। এবার শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে উজানের পানি বেড়ে গেলে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে চলে আসে। তিন ঘণ্টা পর উজানের ঢল আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় আরও বৃদ্ধি পায় ১৩ সেন্টিমিটার। ফলে তিস্তা ১২ ঘণ্টায় পানি ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর (৫২ দশমিক ৮৮) দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাত ৯টায় তা আবারও ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে সেই সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে উজানের ঢল ধেয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে, চতুর্থ দফায় তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি দেখে তিস্তাপাড়ের মানুষ বড় কোনো বন্যার শঙ্কায় শ্বঙ্কিত হয়ে পড়েছে। করোনা দুর্যোগের সাথে যুক্ত হওয়া বন্যা নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার নদী তীরবর্তী মানুষ। আসন্ন ঈদুল আজহার প্রস্তুতি লগ্ন চতুর্থ দফায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষগুলো।
টানা চার সপ্তাহ ধরে সপ্তাহের শেষে দুই-তিন দিন বন্যার কবলে পড়ছে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ। পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই তিস্তার পানি প্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। পানি প্রবাহ কমে এলে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। তাই নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের আমন বীজতলা, সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেকের ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানীর শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।