নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

জুলাই ১৯ ২০২০, ২৩:২৮

Spread the love
আগমনী ডেস্কঃ  গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে কোরআন খানি, কবর জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়ার মধ্য দিয়ে রবিবার বাাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।সেখানে তার পরিবারের লোকজন ও শুভানুধ্যায়ীরা তাকে স্মরণ করেন।  করোনা পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠান সূচি ছিল সংক্ষিপ্ত এবং  লোকসমাগমও ছিল অন্যান্য বছরের চেয়ে কম।

রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রয়াত লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিষাদ ও নিনিত, লেখক-প্রকাশকসহ অন্যান্য ভক্তবৃন্দ কবর জিয়ারত, পুস্পস্তক অর্পণ ও মোনাজাতে অংশ নেন।

এ সময় মেহের আফরোজ শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, অভিনেতা সিরাজুল কবির কমল, প্রকাশনা সংস্থা অন্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম, কাকলী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী নাসির আহমেদ সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মোনাজাত পরিচালনা করেন নুহাশ পল্লী মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. মুজিবুর রহমান। এ সময় লেখকের আত্মার শান্তি কামনায় মহান আল্লাহর কাছে মোনাজাত করা হয়।

কবর জিয়ারত শেষে মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সমাধির পাশেই আমরা একটা জাদুঘর করতে চা। কিন্তু নুহাশ পল্লী একটি পারিবারিক সম্পদ। পারিবারিক সম্পত্তির মধ্যে এরকম কিছু একটা করতে হলে পরিবারের প্রতিটি মানুষেরই আসলে অনুমতির প্রয়োজন আছে। ওই জায়গাটিতে আমি এখনো অপারগ হয়ে আছি। আমারই ব্যর্থতা।

আমি আসলে সবাইকে এখনো একত্রিত করতে পারিনি। প্রত্যেকের ব্যস্ততার কারণে কিছুটা সমন্বয়হীনতা তো আছেই। প্রত্যেকে আসলে  দেশেও থাকেন না, অনেকে দেশের বাইরে থাকেন। আমাদের পরিবারের অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বিভিন্ন জায়গায়। আমরা চেষ্টা করছি। চেষ্টা যদি থাকে সফল হবে। স্বপ্ন যদি থাকে সফল হবে। স্বপ্নটা নিজের মধ্যে, ভক্তদের মধ্যে বুনেছি। জাদুঘর এখানে হবে, এটা নিশ্চিত করছি।

তিনি আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদ সব সময়ই বর্ষা এবং জোছনা-এই দুটো বিষয় সম্বন্ধে তিনি আবেগে আপ্লুত থাকতেন। আমরা তো বৃষ্টিতে ভিজি, উনি বর্ষাটা উদযাপন করতেন। এটা আসলে উনার পাঠকরা সবাই জানেন। বৃষ্টি ও বর্ষা নিয়ে উনার প্রচুর গান আছে। উনার বই, গান, চলচিত্রায়ন সেখান থেকেই তারা জ্যোৎস্নাকে, বর্ষাকে খুঁজে পায়। সেটা আলাদা করে বলতে হবে না।
প্রতিবার সকাল থেকে হুমায়ূন আহমেদের পরিবার, তার ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনেরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন নুহাশ পল্লীর লিচু তলায়। নন্দিত  লেখকের প্রিয় চরিত্র হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু এবং নীল শাড়িতে রূপা সেজে আসেন ভক্ত ও পাঠকেরা। এবার করোনা ঝুঁকিতে স্বাস্থ্যবিধির বাধ্যবাধকতা থাকায় লেখক ভক্তরা নুহাশপল্লীতে না এলেও নিশ্চয় তারা যে যার মতো লেখককে স্মরণ করেছেন। নুহাশ পল্লীর ভিতরের মসজিদে সকালে কয়েকজন হাফেজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরআন তেলাওয়াত করেন।

অন্যবার সকাল থেকে ‘বৃষ্টিবিলাস’ মিলনায়তনে কোরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং এতিমদের খাবার বিতরণসহ নুহাশ প্রাঙ্গণে দিনব্যাপি নানা আয়োজন থাকত। নুহাশ পল্লীর আশপাশের কয়েকটি মাদরাসা ও এতিমখানার ছাত্ররা নুহাশ পল্লীতে কুরআন তেলাওয়াত ও দোয়ায় অংশ নেন। দুপুরে এতিম ও আগত অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু এবার এসবের কোন আয়োজন ছিল না।

তবে প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে রবিবার আশপাশের দর্শনার্থীদের সারাদিনই নুহাশ পল্লীতে খন্ড খন্ড দলে বিভক্ত হয়ে লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও  লেখকের মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে কয়েক দিন থেকে নুহাশ পল্লীর সাজ গোজ, লেখকের কবর ধোয়া মোছার কাজ করেন নুহাশ পল্লীর কর্মীরা।

উল্লেখ্য, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই আমেরিকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জনপ্রিয় এই লেখক। পরে ২৪ জুলাই গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে তার নিজ হাতে গড়া স্বপ্নের নুহাশ পল্লীর লিচুগাছ তলায় হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ দাফন করা হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও