গবেষণায় চৌর্যবৃত্তিঃঢাকা বিশ্ববিদ্যায় শিক্ষকের দায় স্বীকার

আগস্ট ১৭ ২০২০, ২১:১২

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃশিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ নতুন নয়। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ইতিপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছিল। এরমধ্যে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আবার, অভিযোগ সত্য নয় মর্মে কেউ কেউ পদোন্নতিও পেয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে অজানা কারণে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মূলত, দ্রুত পদোন্নতির জন্য অনেকেই গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দেন, যার সর্বশেষ সংযোজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু নাসের মুহাম্মদ সাইফ। ইতোমধ্যে তিনি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির কথা স্বীকার করেছেন। এদিকে, সাইফের জালিয়াতি করা ঠিক হয়নি উল্লেখ করে গবেষণা কমিটির মূল লেখক এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার ‘ঢাবি শিক্ষকের গবেষণার প্রায় সবই নকল’ শিরোনামে একটি অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ২০১৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাভিশন রিসার্চ জার্নালের ১৭-২৬ পৃষ্ঠায় আবু নাসের মুহম্মদ সাইফের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘এডোপশন অব মোবাইল ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্টস’। এটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ‘বাংলাদেশ জার্নাল অব এমআইএস’- এর ১৮১-২০০ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কাশেম এবং আরও দু’জন গবেষকের ‘এম-ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ: কনজ্যুমার পারসেপশনস অ্যান্ড এক্সপেক্টেশন’ শিরোনামের গবেষণাপত্রটির হুবহু নকল (প্রায় ৯৯ শতাংশ)।

এই গবেষণার উল্লেখ করে আবু নাসের মুহম্মদ সাইফ প্রভাষক পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির কথা স্বীকার করেছেন সাইফ। তবে সাইফের ভাষ্য, আমি এটা প্রকাশ করতে চাইনি এবং এ গবেষণার কৃতিত্ব আমি কোথাও উল্লেখ করিনি। কিন্তু বাস্তবতা তার ঠিক উল্টো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তার জীবনবৃত্তান্ত ঘেঁটে তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি। নিজের জীবনবৃত্তান্তের ‘প্রকাশিত প্রবন্ধসমূহের তালিকা’ অংশের ৫ নম্বরে গবেষণার স্বত্ব স্বীকার করেন সাইফ।

প্রতিবেদন প্রকাশের পরের দিন আবু নাসের মুহম্মদ সাইফ ওই অনলাইন পোর্টালে একটি প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি ২০১২ সালে উক্ত পেপারের (গবেষণা) কাজ করেছিলাম। কাজের সমস্ত ড্রাফট, ফাইনাল কপি, প্রশ্নপত্র, এসপিএসএস ডাটা সেট সব আমার কাছে আছে। স্যারকে তখন ই-মেইলও করি। সমস্ত প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে আমারই সম্পূর্ণ কাজ আমাকে ছাড়া প্রকাশ করা হয়। না জানার কারণে আমি ২০১৩ সালে একটি জার্নালে আমার সেই লেখা প্রকাশ করি। কিন্তু পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর বিষয়টি জানতে পারি, খুবই দুঃখ পাই, কষ্ট পাই। এরপরও এথিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে আমিই নিজেকে সরিয়ে নিয়ে কখনও কোন পদোন্নতিতে অথবা নিজের বেনিফিট কোন বিষয়ে লেখা ব্যবহার করিনি।’

সাইফের এমন বক্তব্যের জবাবে গবেষণাকর্মের মূল লেখক আবুল কাশেম বলেন, আমি এ গবেষণাটি ২০১২ সালে করেছিলাম। তার (সাইফ) সঙ্গে আমি কোন কাজ করিনি কিংবা সেও আমার সঙ্গে কোন কাজ করেনি। সে কাজ করেছে বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক জহিরুদ্দিন মাহমুদ বাবরের সঙ্গে। তিনি বলেন, সে যে আমার গবেষণা নকল করেছে সেটা আমি কয়েকদিন আগে জেনেছি। খবর প্রকাশের পর সে ফোন দিয়ে আমার কাছে ভুল স্বীকার করেছে। আমি তাকে সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এরপর তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তিনি আরো বলেন, আবু নাসের মুহাম্মদ সাইফ কাউকে না জানিয়ে এটা প্রকাশ করেছে। যখন এটা প্রকাশ পায়, তখন সুপারভাইজারের সঙ্গে তার কথা বলা উচিৎ ছিল।

এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেবেন কিনা জানতে চাইলে ঢাবির ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, জালিয়াতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা নিবে। আমি আশা করি, সে যে কাজটা করেছে সেটা থেকে সরে আসবে এবং এ ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করবে।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সে যে বলছে গবেষণাটি কোথাও ব্যবহার করেনি এরমধ্য দিয়ে সে গবেষণা নকলের কথা স্বীকার করেছে। মূলত, গবেষণা কোথাও ব্যবহার করা না করা কোন ম্যাটার না। ম্যাটার হচ্ছে সে গবেষণা নকল করে প্রকাশ করেছে। এটাই তো অপরাধ।

এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। ফরমাল অভিযোগ পেলে ভালো হতো। তারপরও আমরা বিভাগের শিক্ষকরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি। আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে তার বিভাগের চেয়ারম্যান ও ডিন আমাদের কাছে সব অভিযোগ জমা দিলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

 

উৎসঃপূর্বপশ্চিমবিডি/এসএস

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও