দুর্গাপুরে শতাব্দী প্রাচীন গারো সম্প্রদায়ের গীর্জা সৌমেশ্বরী নদীর গর্ভে বিলীনের পথে!

মার্চ ১২ ২০১৮, ১৮:৩৫

Spread the love

দুর্গাপুর প্রতিনিধি :

নেত্রকোনার দুগাপুরে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে রানীখং উচু টিলার উপর গারো অধ্যুষীত এলাকায় যোসেফ ক্যাথলিক ধর্মান্তরীত শতাব্দী প্রাচীন গারো সম্প্রদায়ের পৃথিবীর একমাত্র প্রথম গীর্জাঘরটি সহ বেশ কিছু স্থাপনা খরস্রোতা সৌমেশ্বরী নদীর গর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে।

সরজমীনে গিয়ে দেখা যায় দুই দেশের মধ্যবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ডের ঠিক পাশ দিয়েই বয়ে যাওয়া সৌমেশ্বরী নদীর দক্ষিন তীর ঘেষে রানীখং উচু টিলার উপর দাড়িয়ে আছে প্রায় ১’ শত দশ বছরের পুরাতন ক্যাথলিক গীর্জ। সাথে রয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়নের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়, ছাত্র ছাত্রী নিবাস, বিশ্রামাগার। প্রতিষ্ঠান গুলোর সীমানার দেয়াল ঘেষে অনেক অংশ ভাঙ্গনের কবলে পরেছে। শত বছর পুর্বে এ সব নির্মীত স্থাপনা তৈরীর সময় সৌমেশ্বরী নদী নিরাপদ দুরুত্বেই ছিল। কিন্তু কালের আবর্তে সৌমেশ্বরী নদীর গতী পথের পরিবর্তন ও যখন তখন পাহাড়ী ঢলের তীর্ব পানির শ্রোতের প্রবাহে ভাঙ্গন প্রতিষ্ঠান গুলোর সীমানা স্পর্শ করেছে।

অচিরেই ভাঙ্গন প্রতিরোধ ত্বরিৎ ব্যাবস্থা না নিলে সভ্যতার বুক থেকে হারিয়ে যাবে শতাব্দীর প্রাচীন ইতিহাস। স্থানীয় প্রবীন আদিবাসী ও গীর্জার ইতিহাস থেকে জানাজায় ১৯০৯ সালে বিশপ হার্থ ঢাকা ধর্ম প্রদেশের প্রথম ধর্মপাল। সুসং দুর্গাপুর টাকশাল পারা গ্রামের ৫ জন একটি গারো প্রতিনিধি দল উজির রুরাম, জিরিং হাজং, থুদিং হাজং, থিমান দাংগো, ও সিন্ধু রুগা আদি মন্ডলি সর্ম্পকে হার্থের সঙ্গে দেখা করে তাদের এলাকায় মিশনারী প্রেরনের অনুরোধ জানায়। বিশপ হর্থের তখন জনবল বা অর্থ বল কিছুই ছিল না।

ফলে বিশপ এই প্রতিনিধি দল কে শুধু আশ্বার বানী ও কিছু ধর্ম গ্রন্থ দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। পরে এই দলটি পর পর তিন বার একই উদ্দেশ্যে ঢাকায় গিয়ে ছিলেন। ১৯১০ সালে বিশপ হার্থ ঢাকা ত্যাগের পুর্বে একটি বিশেষ সুপারিশ এবং গারো এলাকায় মিশনারী স্থাপনের জন্য কিছু আর্থিক সাহায্য রেখে যান।

পর বর্তীতে বিশপ লিনেবর্ণ দায়িত্ব নিয়ে ফাদার ফেবরীকে সুসং দুর্গাপুরে পাঠান ধর্ম প্রচার কাজে সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখার জন্য। ফাদার ফেবরী গারো অঞ্চলে এসে প্রচার কাজের অনুকুলে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন পেয়ে বিশপ লিনেবর্ণ গারো অঞ্চলে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এডলফ ফাদার ফ্রান্সিস সি এস সি কে নিয়োগ করে ঐই বছরের শেষ দিকে টাকশাল পারাগ্রামে এসে প্রচার কাজ শুরু করেন।

পরে ১৯১১ সালে ১৯ শে মার্চ এক দল গারো নারী পুরুষ দলকে সম্মতি জানিয়ে তাদের মাধ্যমে তিনি সর্ব প্রথম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। এই দলটিই পৃথিবীর প্রথম ক্যাথলিক ধর্ম মতে ধর্মান্তরীত গারো। তখন গারোরা ছিলনা তেমন সু-শিক্ষায় শিক্ষিত। পুরুষ গারোরা পরিধান করত লেংটি আর মেয়েরা পরিধান করত দকবান্দা বস্ত্র।

ফাদার ফ্রান্সিস টাকশাল পারা গ্রামে ৫ বছর অস্থায়ী ভাবে মিশন পরিচালনা করেন। পরে ১৯১৫ সালে বর্তমানে বিজয়পুর সীমান্তে রানীখং উচু টিলার উপর মিশন টি স্থায়ী ভাবে স্থাপন করেন। এর পর শতাব্দী ধরে লাখো গারো সম্প্রদায়ের ধর্মের আলোকবর্তীতা ছড়িয়েছে এই মিশন টি। এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান শুভ্র আরেং সংবাদ কে বলেন এলাকার লোকজন ও ছাত্র ছাত্রীরা কিছু বালির বস্তা ফেলে মিশন টি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

এতেও রোধ করা যাচ্ছে না। এটি যেন দেখার কেউ নেই। মিশনটির বর্তমান ফাদার প্রিনসন সংবাদ কে দেওয়া এক সাক্ষাতে জানান সৌমেশ্বরী নদীর গতি ধারা কালের আবর্তে পরিবর্তন হওয়ায় পৃথিবীর একটি স্মৃতি বিলীন হতে যাচ্ছে।

স্থানীয় পর্যবেক্ষন মহল মনে করছেন নদী ভাঙ্গনে প্রতিরোধ তরিৎ গতিতে না নিলে সভ্যতার জগৎ থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে শতাব্দীর প্রাচীন ইতিহাস।

আদীবাসী বান্ধব জনপ্রিয় মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্থক্ষেপ কামনা করছে দর্গাপুরের আদিবাসীগন।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও