হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের দিন আজ ১৫ আগস্ট

আগস্ট ১৫ ২০২১, ১০:৫৪

Spread the love

আগমনী ডেস্কঃ ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধূঁর শোকের দিন।

১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের হাতে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার চিরন্তন উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় আক্রমণ করে। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণিতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসেরকে।

এছাড়া বেইলি রোডে সরকারি বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত ও আবদুল নঈম খান রিন্টুকে। আরেক বাসায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে।

সে সময় দেশে না থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর এই দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়।

প্রতি বছর শোক দিবসে নানা কর্মসূচি থাকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর। তবে এবার করোনার কারণে ব্যাপক জনসমাগম এড়িয়ে চলছে দলটি। আর এ কারণেই শোক দিবসের সব কর্মসূচিতে প্রাধান্য পাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায়ের পর কয়েক জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও পাঁচ ঘাতক এখনও পলাতক। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের চেষ্টা চলছে।

এ দিনে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই শুধু নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হত্যারও ষড়যন্ত্র করেছিল ঘাতক গোষ্ঠী। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্য করে নাই। স্বাধীনতার চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধকেও হত্যা করেছে। বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল।

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান রেডিওতে ঘোষণা করলো ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ। খুনিরা বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশ বানালো। জয় বাংলা স্লোগানকে জিন্দাবাদ করলো। এবং জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধী, মানবতা বিরোধী যাদের রাজনীতি করার অধিকার সংবিধান দেয়নি, তাদের রাজনীতির অধিকার দিলো। চারটি স্তম্ভকে বাতিল করে দিলো এবং পাকিস্তান ভাবধারায় রাষ্ট্রপরিচালনা শুরু করলো।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর আরেক সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি কারা এর সঙ্গে থাকতে পারেন। হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ইমডেমনিটির মাধ্যমে হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করলেন।

‘হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করলেন। এদেশের যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ছিলো তাদের নিয়ে সরকার গঠন করলেন। এর মধ্যে দিয়ে আবার দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আগের অবস্থানে অর্থাৎ নব্য পাকিস্তান গঠনের চেষ্টা হয়েছিলো। এর থেকেই প্রমাণ হয় এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে কারা জড়িত ছিলো সে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আর এ জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা মানেই তো স্বাধীনতাকে হত্যা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে তো আজও আমরা স্বাধীন থাকতাম না।

‘আজকে না হোক, দুদিন পরে হোক এদের সবার নাম বের হয়ে আসবে। একটা কমিশন করা হোক, সে কমিশন তদন্ত করুক। দেখেন এটা বিরাট একটা গ্যাং ছিলো, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে ছিলো।’

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করবে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও