দোকানে দোকনে বাহারি শাড়ির সম্ভার,শাড়ির দোকানে ভিড় বাড়ছে

এপ্রিল ১৭ ২০২২, ১১:৪২

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ “ ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে এক্সট্রা কিছু। ঈদ মানে নতুন কিছু। তাই ঈদে নতুন শাড়ি না হলে চলেই না। নতুন শাড়ি ছাড়া ঈদ এটাতো কল্পনাই করতে পারি না। তাইতো আগেবাগেই ঈদে পছন্দের নতুন শাড়ি কিনতে মার্কেটে এসেছি।” এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন আখি আক্তার। তিনি আরো বলেন, যত পোশাকই পরিধান করি না কেন, শাড়িতেই নারীকে মানায় ভাল। করোনার কারণে বাড়ি থেকে বেড় হতে পারিনি ২ বছর। এখন করোনা নাই। তাছাড়া করোনার টিকা নিয়েছি। এবার ঘুরে ঘুরে পছন্দমত শাড়ি কিনতে পেরে ভালই লাগছে। নতুন নতুন কালেকশন রয়েছে। তবে দামটা একটু বেশি।

শাড়িতেই অনন্য নারী। অন্য যে কোনো পোশাকের চেয়ে শাড়িই নারীকে বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। উৎসবে-পার্বণে তাই শাড়িই হয়ে ওঠে প্রিয় পোশাক। তবে ফ্যাশনপ্রিয় অনেক নারী শাড়িকে ঝামেলাও মনে করেন। এর পরও ঈদ এলেই নারীরা পছন্দের কাক্সিক্ষত শাড়িটিই কেনেন। অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে একটি শাড়ি না হলে ঈদ আনন্দ যেন ম্যাটম্যাটেই থেকে যায়। তাই নারীরা এখন শাড়ির দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। দোকানিরা জানান, এ ঈদে জামদানি শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও দেশি শাড়ির প্রতি নারীর আগ্রহ অনেক বেশি।

মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রং ও পেটানো কাজের সব কাতান শাড়ি ছাড়াও উজ্জ্বল রং সোনালি পাড় আঁচলের কাজের শাড়িগুলোই নজর কাড়ছে বেশি। এ ছাড়াও সিল্ক, হাল্ফ সিল্ক শাড়ির চাহিদাও প্রচুর। উৎসব আর বর্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই সুতি দেশি শাড়িগুলোর নকশায় প্রাধান্য পাচ্ছে ট্র্যাডিশনাল মোটিফ। সুতি, সিল্ক আর তঁতের শাড়ির চাহিদা অনেক বেশি বলে জানান ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শাড়ি দোকানিরা। তাঁত আর সুতি শাড়ির মধ্যেও আছে নানা রকমের টাঙ্গাইলের তাঁত, জুট কটন, সফট কটন, অ্যান্ডি কটনসহ আরো নানা ধরনের সুতি আর তাঁতের শাড়ি।

শাড়িতেই মানায় বাঙ্গালী নারী। ঈদে বেশিরভাগ নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে রূপগঞ্জের হাট বাজারের শাড়ির দোকান আর ফ্যাশন হাউসগুলোতে। ক্রেতারা বাহারি রং আর নক্সা দেখে বাছাই করে নিচ্ছেন পছন্দের কাপড়। গরমে জমকালো পোশাক এড়িয়ে সুতি, মসলিন, সিল্ক আর জামদানির প্রতি আগ্রহ বেশিরভাগ ক্রেতার। তবে দাম বেশি হওয়ায় দর-কষাকষি করে সমাধান মিলছে।
সব উৎসবে, শাড়িতেই নিজের সৌন্দর্যকে মেলে ধরেন ফ্যাশন সচেতন নারীরা। ঈদেও তার ব্যতিক্রম হয় না।

আর তাই ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাশন হাউসগুলো নিয়ে এসেছে বাহারি শাড়ির সম্ভার। গরমের কারণে সুতি শাড়ির চাহিদা বাড়লেও সন্ধ্যা আর রাতে পরার জন্য অনেকেই কিনছেন পার্টি শাড়ি। সিল্ক, মসলিন, জামদানি, অরগাঞ্জা, গাদোয়াল, কাঞ্জিবরম, কাতান শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেশি তাদের। বয়স্করা কিছুটা হালকা রংকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।

রূপগঞ্জের সবচেয়ে বড় শাড়ির বাজার এখন গাউছিয়া মার্কেট। পাইকারী মার্কেট হলেও খুরচা ক্রেতারাও শাড়ি কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। সাধারণত শব-ই-বরাতের পর থেকে বিক্রি শুরু হয়ে চাঁদ রাত পর্যন্ত চলে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, এবার পিওর সিল্ক, জরজেট, বিয়ের কাতান, কাতান, বেনারসি সিল্ক, কাঞ্জিবরন, ক্যাটালগ, মেঘদূতসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ির জনপ্রিয়তা রয়েছে। এগুলোর দাম ১২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বুটিক, স্টোন, জরির বাহারি কাজের দেশীয় বস্ত্রের বিপুল সরবরাহ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সব শ্রেণীর ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতিটি দোকানে ফ্যাসনরুমে বিভিন্ন দামের ও মানের শাড়ি প্রস্তুত করা হয়।

উপজেলার বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল ও ফ্যাশনহাউস ঘুরে দেখা গেছে, এবার তাঁতের শাড়ির পাশাপাশি এসেছে কটন ও সিল্ক। এসব শাড়িতে প্রাধান্য পেয়েছে কিছুটা হাইলাইট কালার। কালো এবং সিলভারে আধিক্য রয়েছে এসব শাড়িতে। গরম দিন দিন বাড়ছে, তাই ঈদে কদর থাকবে সুতি শাড়ি। তবে সুতি শাড়িতে স্ক্রিন, ব্লক প্রিন্ট এবং হ্যান্ড পেইন্টের চাহিদা অনেক।

গতবছর ফ্লোরাল প্রিন্টের আধিক্য থাকলেও এবার সেটি নেই বললেই চলে। তবে জিওমেট্রিক প্যাটার্নের দেখা মিলবে শাড়ির জমিনে। করোনার কারণে গেল দুই বছর মার্কেটে এসে শপিং করতে পারেনি অনেকেই। এবার নিজের পছন্দ মতো ঈদের কাপড় কিনে খুশি সবাই। তবে দাম নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ।

মুড়াপাড়া বাজারের শাড়ির শো-রুমে কথা হয় খামারপাড়া থেকে আসা ক্রেতা মনি ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, রোজার প্রথমদিকে একটু ভিড় কম থাকে, সেজন্যই এই সময়ে আসা। ঈদে যেহেতু মানুষ একটু গর্জিয়াস পরে তাই আমার কাতান ভালো লাগে। তার মতে, উৎসবে জাঁকজমকপূর্ণ ভাব ফুটিয়ে তুলতে কাতান শাড়ির বিকল্প নেই।

গরমের কথা মাথায় রেখে এবার শাড়িতে অল্প ডিজাইন ও হালকা রংয়ের কাজগুলো কমই প্রাধান্য পেয়েছে। তবে হাতের কাজের গর্জিয়াস শাড়িও আছে প্রচুর। এবার শাড়ির দোকানগুলোতে আকর্ষণীয় শাড়ির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে মসলিন শাড়িতে অলওভার কাজও। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের ঈদে চাহিদাসম্পন্ন শাড়ি হচ্ছে ‘চেন্নাই কাতান’ ও ‘বেঙ্গল কাতান’। এ শাড়ির আঁচলে ভারি কাজের পাশাপাশি সারা গায়ে হালকা কাজের সঙ্গে ভারি কাজও থাকছে। এর মূল্য ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা।

গাউছিয়া মার্কেটের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়া বলেন, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে মার্কেটে। ক্রেতাবিক্রেতারা নিরাপদে তাদের কাজ করতে পারছেন। ঊদ যতই ঘনিয়ে আসছে বেচাবিক্রি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ এ ব্যাপারে বলেন, সাদা পোশাকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদেস্যরা মাঠে রয়েছে। ক্রেতা বিক্রেতারা নির্বিঘেœ বেচাকেনা করতে পারছেন।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও