৩৬ দিনেও খোঁজ মেলেনি বিইউবিটি শিক্ষার্থী ইফাজ আহমেদ চৌধুরীর
ডেস্ক রিপোর্টঃ ইফাজ আহমেদ চৌধুরী। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গত ১১ই এপ্রিল জোহরের নামাজ পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হন। এক মাস ছয়দিনেও খোঁজ মেলেনি এই শিক্ষার্থীর। এদিকে একমাত্র ছেলের নিখোঁজের পর থেকে পাগলপ্রায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাবা-মা। কোথায় আছেন, কেমন আছেন ইফাজ? খুব শিগগিরই ছেলেকে সুস্থভাবে ফিরে পেতে চান পরিবারের সদস্যরা। গত ৮ মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ইফাজের। তার স্ত্রী বর্তমানে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ইফাজ নিখোঁজের পর র্যাব, গোয়েন্দা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ছেলের সন্ধান চেয়ে আবেদন করেন ইফাজের মা। ইফাজের নিখোঁজের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে তিনি নিজ থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এ ঘটনার পরপরই ইফাজের পরিবার রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। ডায়েরির বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিরপুর-২ বসতি হাউজিং বড়বাগের ৭ নম্বর বাসা থেকে ঘটনার দিন দুপুরে নামাজের জন্য বের হন ইফাজ।
নামাজ শেষে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাসায় না ফেরায় তার পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও আর সন্ধান পাননি। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয় মসজিদের আশপাশের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ জব্দ করেছে। মানবজমিনের কাছে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষার্থী ইফাজ নামাজ শেষ করে মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে দিয়ে একটি পশু হাসপাতালে যান। এর কিছুক্ষণ পর তিনি ফিরে আসেন। এ সময় সেখানে একটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস ঘুরেফিরে ইফাজকে দীর্ঘক্ষণ ধরে অনুসরণ করতে দেখা যায়। এরপর কী ঘটেছে ইফাজের ভাগ্যে তা আর ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়নি। পরিবারের দাবি তাকে কালো গাড়িটিতে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ আগে একইভাবে নামাজ পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হন বসতি হাউজিং এলাকায় বসবাসরত বেসরকারি চাকরিজীবী নাইম।
নিখোঁজ শিক্ষার্থী ইফাজের মা জান্নাতুল ফেরদৌস মানবজমিনকে বলেন, ইফাজকে হারিয়ে আমরা পাগলপ্রায়। আমাদের ছেলে কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। গত দুই যুগে ছেলেকে এক মুহূর্তের জন্য কাছ ছাড়া করিনি। অথচ এই প্রথমবার ছেলেকে ছাড়া আমাদের ঈদ পালন করতে হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে থাকা কালো গাড়িটিই তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে আমাদের ধারণা। ইফাজকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না। যেভাবেই হোক আমার ছেলের সন্ধান চাই।
ইফাজ আইনগতভাবে অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। নিখোঁজ হওয়ার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা দপ্তর, র্যাব, গোয়েন্দা বাহিনী সর্বত্র আমরা যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত তার সন্ধান দিতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ বলছেন আমার ছেলে নিজ থেকেই আত্মগোপনে আছে। সে কি কারণে আত্মগোপনে যাবে? তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ চাইলে মুঠোফোনের কললিস্ট এবং সর্বশেষ অবস্থান পর্যালোচনা করলে হয়তো তাকে ফিরে পাওয়া যেত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ সহযোগিতা পাচ্ছি না। ইফাজের মা বলেন, ইফাজের বাবা কাজী মমিন উদ্দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। দুই ভাই বোনের মধ্যে ইফাজ বড়। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। গত প্রায় ৮ মাস আগে ওকে পারিবারিক পছন্দে বিয়ে দেই।
ইফাজের স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। ইফাজের পড়ালেখার বাইরে মা-বাবা এবং স্ত্রী ছাড়া আর কোনো জগতের সঙ্গে পরিচিতি নেই। সে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নেই। যত দ্রুত সম্ভব আমরা ইফাজকে সুস্থভাবে ফেরত পেতে চাই। এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাজিরুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, শিক্ষার্থী নিখোঁজের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এ ঘটনায় তার পরিবার সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। তাকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে গেছে, না কি তিনি নিজ থেকেই আত্মগোপনে আছেন বিষয়টি তদন্তাধীন।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি)শিক্ষার্থীরা বিইউবিটিক্যাম্পাস এর সামনে একটি মানব বন্ধন ও রাস্তা অবরোধ করে। এ সময়ে শিক্ষথীরা প্রশাসন কে ৩৬ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়। ৩৬ ঘন্টায় যদি কোনো আপডেট না পাওয়ায় যায় তাহলে তারা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি প্রধান করে।