রূপগঞ্জে ১৭-১৮ ঘণ্টা লোডশেডিং! জনজীবন অতিষ্ট,কলকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম

অক্টোবর ১০ ২০২২, ১৫:৩৬

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ “কি আর কমু গো বাজান কারেন্টের কথা, মনে অনেক ব্যথা, সারাদিন মিলে না বিদ্যুতের দেখা। হুনছিলাম বাংলাদেশে বিদ্যুতের অভাব নাই। এহনতো দেহি আমাগো হেনে কারেন্টই নাই। প্রধানমন্ত্রী কইছিল সমস্যার কারণে ১ ঘন্টা লোডশেডিং দিত। আমাগো হেনে তো ১৭/১৮ ঘন্টাই কারেন্ট থাহেনা। এইডাও লোডশেডিং।” এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন রূপগঞ্জের খামারপাড়া এলাকার মমতাজ বেগম।

কয়েকজন শিল্পপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্যাস নাই, বিদ্যুৎ নাই কলকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মেশিন না চললে শ্রমিকদের বেতন ভাতা কিভাবে দিব। বিভিন্ন লোনের টাকাই কিভাবে পরিশোধ করব? গার্মেন্টসগুলোতে শিপমেন্ট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ফকির হতে সময় লাগবে না বেশি দিন।

শ্রমিকরা বলেন, এভাবে মিলের চাকা না ঘুরলে বড়লোকের কিছু না হলেও আমরাতো না খেয়ে মরে যাব। একটা কিছু করুন।
নিয়মের তোয়াক্কা না করে রূপগঞ্জ উপজেলায় লাগামহীন লোডশেডিংয়ের কবলে জনজীবনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বেপরোয়া লোডশেডিংয়ে গ্রামের কোথাও শিডিউল মানা হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ ১৭-১৮ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ ছিল না উপজেলার বিভিন্ন স্থানে।

এদিকে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত বিল। কেন এ ভুতুড়ে বিল জবাবও পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। এক্ষেত্রে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জোনাল অফিস বা উপকেন্দ্রে অথবা অভিযোগ অফিসগুলোতে অতিষ্ঠ হয়ে ফোন করলে ফোনও রিসিভ করছে না। কদাচিৎ ফোন রিসিভ করলে ভাবখানা এমন দেখান যে, লোডশেডিং নেই। অথচ সরকার ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বললেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কেউ এটা মানছে না।

বুধ ও বৃহস্পতিবার সমিতির আওতাধীন কায়েতপাড়া ইউনিয়নের গোটা এলাকায় গড়ে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ ছিল না। কোথাও কোথাও ২০ থেকে ২১ ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে।
অতিমাত্রার লোডশেডিংয়ের কারণে ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত এবং ব্যবসায়ীসহ আবাসিক বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। সবচাইতে প্রান্তিক মুরগির খামারে হিটস্ট্রোকে শত শত বয়লার মুরগি মারা যাচ্ছে।

পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) আওতায় উপজেলায় সব স্তরে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে। আরইবির রূপগঞ্জ সমিতির অভিযোগ, তারা প্রতিদিন চাহিদার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এ কারণে তারা সরকারি শিডিউল মানতে পারছেন না।
তাদের বক্তব্য, সাধারণ সময়েও সমিতিগুলো গড়ে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং করে থাকে। পিডিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ না দিলে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে ভ্যাপসা গরমে এ লোডশেডিং আরও ১-২ ঘণ্টা বেড়ে যায়। এছাড়া নানা কারণে প্রতিদিন একাধিকবার লাইন ট্রিপ হয়। গ্রাহকরা সেটাকেও লোডশেডিং বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।

উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষার্থী, আবাসিক বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন কোনো কোনো স্থানে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছে আবার পরের দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।

কোথাও কোথাও একবার গেলে ৩ ঘণ্টা বা তার বেশি সময়ও লোডশেডিং চলছে। এ সময়ে আবহাওয়া প্রচ- গরম থাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে প্রচ- দুর্ভোগ। দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিংয়ের জন্য আইপিএসের চার্জ ব্যাকআপ পাওয়া যাচ্ছে না। ভ্যাপসা প্রচ- গরমে বেশিরভাগ নামাজের সময় বিদ্যুৎ থাকছে না, যার জন্য মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন ফ্রিজিং পণ্য লোডশেডিংয়ের কারণে নষ্ট হচ্ছে। যেসব পণ্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয় সেগুলো ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। লাভ তো দূরের কথা আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না; ফলে এ তীব্র গরমে শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণ অমনোযোগী ও অসুস্থ হচ্ছে।

রূপগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পূর্বাঞ্চল জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার লাবিবুল বাশার বলেন, উপজেলায় বর্তমানে ৩টি উপকেন্দ্রে মোট ২৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৮ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছে। যার জন্য লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে লোডশেডিং কাটিয়ে উঠতে পারব।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও