আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে স্টল নির্মাণ চলছে পুরোদমে

ডিসেম্বর ২০ ২০২২, ২২:০৯

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ আর ক’দিন বাদেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আসর বসতে যাচ্ছে রূপগঞ্জের পূর্বাচলে। এটা পূর্বাচলে স্থায়ী প্যাভিলিয়নে বাণিজ্য মেলার দ্বিতীয় আসর। প্রহেলা জানুয়ারী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ভোধন করার কথা রয়েছে এ মেলার। খুঁটিনাটি দ্রুতি সারিয়ে বৃহত্তর পরিসরে জমজমাট আসর হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তাই শেষ মুহুর্তে এসে পুরোদমে চলছে কাজ। কারো সাথে কথা বলার জো নেই। সবাই কাজে ব্যস্ত। রাস্তাঘাটসহ গোটা পূর্বাচল রঙিনরূপে সেজেছে।

গত বছরের ন্যায় এ বছরও ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হবে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের ৪নং সেক্টরের বঙ্গবন্ধু চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিউশন সেন্টারের স্থায়ী নিজস্ব জায়গায়। এ বছর বসছে বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসর।

নতুন ভেন্যুতে গত বছর প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মেলা হয়। ফলে মেলা জমজমাট হতে সময় লেগেছিল ১০-১২ দিন। তবে এবার প্রথম দিন থেকেই মেলা জমাতে চান ব্যবসায়ীরা। এ জন্য আগে বাগেই তারা স্টল নির্মাণ শুরু করেছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেলা শুরুর আগে স্টল নির্মাণ শেষ না হলে মেলা জমিয়ে তোলা কঠিন। এ জন্য ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্টল নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরে যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এই মেলা হয়ে আসছিল। গত বছর পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মেলা স্থানান্তরিত করা হয়। এখানে দ্বিতীয়বারের মতো বসবে এ মেলা। আগামী ১ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেলা উদ্বোধনকে সামনে রেখে সকল প্রস্তুতি শেষ করতে তোড়জোড় চলছে। এ জন্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে স্টলের নির্মাণের কাজ। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজে এতই ব্যস্ত যে কথা বলার সময়ও পাচ্ছেন না তারা।

আগে স্টল বরাদ্দ পাওয়ায় স্টল নির্মাণ কাজ আগেই শেষ হবে বলে আশা করছেন স্টল মালিকরা।

এ দিকে কুড়িল বিশ্বরোড ৩০০ফিট মূল সড়টির কাজও প্রায় শেষের পথে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীদের আসতে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয় এ জন্য সড়কের কাজ দ্রুত শেষ হচ্ছে। চলাচলের সুবিধার্থে চালু করা হবে বিআরটিসির স্পেশাল বাস সার্ভিস।

এ দিকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ বাণিজ্য মেলার সামনের অংশটুকু দ্রুত শেষ করতে নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছেন বাণিজ্য মেলা কর্তৃপক্ষ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোও (ইপিবি) সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছে। মেলার সফল করতে প্রশাসন সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে নিশ্চিত করেছেন ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। সরেজমিন দেখা যায়, মেলার প্রধান ফটক ও প্রবেশদ্বারে তিনটি মেগা প্রকল্পের কাঠামো, বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরির কাজ চলছে। বেশির ভাগ স্টলের নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে আগাচ্ছে। স্টিল নির্মাণ শেষ হলে স্টলে বোর্ড লাগানো ও রঙ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। অনেক স্টলের কাঠামো দাঁড় করানো শেষও হয়েছে। এসব স্টলের কাজ পুরোপুরিভাবে শেষ হতে আরও ৮/১০ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

সেভয় আইসক্রিমের সেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান শাহা আলী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৭ জন শ্রমিক পর্যায়ক্রমে দিন-রাত কাজ করছে। আগামী ৮/১০ দিনের মধ্যে কাঠের ডিজাইন ও রংয়ের কাজ শেষ হবে।

বেঙ্গল পলিমার প্যাভিলিয়নের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. এমরান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের দুইতলা বিশিষ্ট বড় প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে।

মিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের এমডি ইসাহাক মিয়া জানান,গত বছর প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছিলাম ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে। তাই স্টল চালু করতে দেরি হয়েছিল। এ বছর স্টল বরাদ্দ পেয়েছি নভেম্বর মাসে। আশা করি আগামী ২৫ ডিসেম্বরের কাজ শেষ করতে পারব।

মেলায় স্টল নির্মাণ করতে আসা আনন্দ মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের ম্যানেজার চৈতন্য দাস বলেন, মিরপুর থেকে মেলায় কাজ করতে এসেছি। ছোট বড় মিলিয়ে আমরা ১৫টি স্টলের কাজ পেয়েছি। গত ২৮ নভেম্বর থেকে ১৬ জন শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছে। মেসার্স মদিনা এন্টার প্রাইজ, রংপুর ক্রাফট, ইরানী থাই এম্পোরিয়ামের প্যাভিলিয়ন নির্মাণ শেষের দিকে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুরো স্টলের কাজ সমাপ্ত হবে।

কাঠ ও রঙ মিস্ত্রী শামিম বলেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত কাজ করছি। তার পরও শেষ করতে পারছি না। রঙ, সাজসজ্জা সব মিলিয়ে দশ থেকে পনের দিনের মধ্যে স্টল প্রস্তুত হবে।
ইপিবির সহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ জানান, বাণিজ্য মেলার বিদ্যুৎ ও পানির লেআউট সংযোগের কাজ চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকী কাজ শেষ হবে।

আমেনা টেডার্সের এমডি হবিউল্লাহ জানান, বাণিজ্য মেলার ৯৩টি ওয়াশ ব্লকের কাজ পেয়েছে তার প্রতিষ্ঠান। মেলার ওয়াশব্লক সচল রাখতে ২২ জন শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছেন।

মেলার গেটের ইজারাদার মের্সাস আবদুল্লাহ এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, এবছর আগে থেকেই মেলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। স্টল নির্মাণের কাজ আগেই শেষ হবে। ৩০০ ফুট সড়ক গত বছরের থেকে অনেক ভাল । আশা রাখি এ বছর মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আগামী ১ জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বছর মেলায় স্টল সংখ্যা বেড়েছে। আশা করি মেলা জমজমাট হবে।###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও