রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকল্পে নয়টি ভবন নির্মাণে যে লুটপাট হয়েছে সে বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় তা দেখতে চেয়েছেন হাইকোর্ট

জুলাই ২২ ২০১৯, ০০:০৮

Spread the love

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকল্পে নয়টি ভবন নির্মাণে যে লুটপাট হয়েছে সে বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় তা দেখতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। সে অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়ে আদালত সুপ্রিমকোর্টের আসন্ন অবকাশের এক সপ্তাহ পর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

চারটি ভবনের আসবাবপত্র ও ইলেকট্রিক সরঞ্জাম সরবরাহের কাজে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুটপাট হয়েছে এবং এ ঘটনায় পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ সম্বলিত পৃথক দুটি প্রতিবেন উপস্থাপনের পর আজ রোববার এ কথা জানান বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারর্দীর বেঞ্চ।

সুপ্রিমকোর্টের এই অবকাশ ১ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। সে অনুযায়ী আগামী ২৪ আগস্টের পরে এ বিষয়ে আবারও শুনানি হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে করা পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চারটি ভবনের আসবাবপত্র ও ইলেকট্রিক সরঞ্জাম সরবরাহ কাজের চুক্তি মূল্য ১১৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। অথচ মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে ৭৭ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার। অর্থাৎ চুক্তি মূল্য সরবরাহ করা মালামালের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা বেশি। তাই এই বাড়তি পরিশোধিত অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে আলোচিত বালিশকাণ্ডের নায়ক পাবনা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা আরও হয়েছে, তদন্ত কমিটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের সিডিউলে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আসবাবপত্রের আইটেমের দর নির্ধারণ করে। কিন্তু দাপ্তরিক প্রাক্কলনগুলো প্রস্তুত, সুপারিশ, নিরীক্ষা, এবং অনুমোদনকারী কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্যে দর নির্ধাণের ক্ষেত্রে গণপূর্ত সিডিউলের বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণের কথা বললেও, দেখা যায় তারা কিছু ফ্যাক্টরস যেমন, শ্রম, পরিবহন, সনড্রি এবং উঠানো বাবদ অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক মূল্য ধরেছেন বলে কমিটির নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। আসবাবপত্র পরিবহন এবং বিভিন্ন তলায় ওঠানো ও সেটিং গণপূর্ত অধিদপ্তরের রেট সিডিউল-২০১৮ এর অন্তর্ভূক্ত থাকলেও তারা তা অনুসরণ করেননি। ফলে গণপূর্ত পাবনা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত প্রাক্কলিত মূল্যের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। আলোচ্য নয়টি ভবনের আসবাবপত্র ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য পাবনা গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক প্রণীত এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রাজশাহী কর্তৃক অনুমোদিক প্রাক্কলিত মূল্য ২৩১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অপরদিকে কমিটি কর্তৃক প্রণীত উক্ত কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ১৬৯ কোটি ২৭ লাখ যা অনুমোদিক প্রাক্কলিত মূল্যঅপেক্ষা ৬২ কোটি ২০ লাখ টাকা বেশি।

আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম। এ ছাড়া রিটের পক্ষে আইনজীবী সুমন শুনানি করেন। শুনানিতে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘প্রতিবেদনে ওই প্রকল্পে লুটপাটের কথা স্বীকার করা হয়েছে। ৫০ জনের মতো কর্মকর্তাকে দায়ী করে লুটপাট করা টাকা ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এখন জড়িতরে বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে কিনা সেটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তবে অর্থ আত্মসাতের কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ দেখতে চাই।’

এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কী করা হবে না হবে, সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার কী করে দেখেন। এজন্য দুই থেকে আড়াই মাস মামলার শুনানি মূলতবি রাখেন।’

উভয় পক্ষের শুনানির পর হাইকোর্ট সরকার কী পদক্ষেপ নেয় তা দেখবেন উল্লেখ করে অবকাশের এক সপ্তাহ পর আবারও বিষয়টি শুনানির দিন ধার্য করেন।

উল্লেখ্য, গত মে মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের আবাসিক প্রকল্পে বালিশ কিনতে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর একটি বালিশ ফ্যাটে তুলতে খরচ হয়েছে ৭৬০ টাকা। এমন সংবাদ প্রচারের পর ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ২০ তলায় একটি বালিশ তুলতে ৭৬০ টাকার সেই খরচ হতবাক করে সবাইকে। এ ঘটনায় গত ১৯ মে স্বাধীন ও বিচারিক তদন্ত চেয়ে রিট করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।

এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২০ মে নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র তোলার অস্বাভাবিক খরচ তদন্তে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চেয়ে রিটের শুনানিও স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ ঘটনার তদন্তে দুটি কমিটি করা হয়েছে এবং শিগগিরই এর প্রতিবেন পাওয়া যাবে বলে জানানো হলে ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু প্রতিবেদন না পেয়ে হাইকোর্ট এক পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পরে গত ২ জুলাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে কেনা ও উত্তোলনের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকোশলী, রাজশাহী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বালিশকাণ্ডের এ ঘটনার তদন্তে গঠিত দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেন দাখিল করতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ ওেয়া হয়। সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ দুটি প্রতিবেন দাখিল করে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও