দিনাজপুর বিরল উপজেলার তুলাই নদীর দুই পাড়ের মাটি বিক্রির রমরমা ব্যবসা

জানুয়ারি ০৩ ২০২২, ১৭:২২

Spread the love

এনামুল মবিন(সবুজ),জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুরঃ বাংলাদেশ সরকারের নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুর বিরল উপজেলার তুলাই নদী খনন কাজ শেষ হতে না হতেই নদীর দুই পাড়ের মাটি কাটার মহোৎসব শুরু করেছে একটি স্বার্থেন্বেষী মহল।

প্রকাশ্যে তুলাই নদীর দুই পাড়ের মাটি কাটার মহোৎসব চললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নির্বিকার। উপজেলা প্রশাসন বলছে নদী ও পাড় সংরক্ষনের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ’র। ফলে তুলাই নদীর পাড় দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে বসেছে। নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায়। দেখার বা বলার কেউ নেই। প্রশাসন নিরব।

জানা গেছে, দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে বিরল উপজেলা দিয়ে ভারতের সাথে মিশেছে তুলাই নদী। এই নদীর স্রোতধারা এবং জীব বৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অভ্যান্তরিণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিইটিএ) ইতিমধ্যে বিরল উপজেলা সীমানায় ৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৮ হাজার ৭০৮ টাকা ব্যায়ে ৬৮ দশমিক ১০৪ কিলোমিটার তুলাই নদী খননের কাজ শুরু করে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে।

আগামী ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে খননের কাজ শেষ করার কথা। প্রকল্পটি বাস্থবায়ন করছে অভ্যান্তরিণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ)। নদীর দুই পাড় সমান (ওয়ার্কওয়ে) করে মানুষ চলাচলের ব্যবস্থা করাসহ দৃষ্টিনন্দন সবুজ পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

কিন্তু নদী খননের কাজ সম্পন্ন হতে না হতেই বিআইডব্লিউটিএ’র দ্বায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলার কারনে স্বার্থেন্বেষী একটি মহল তুলাই নদীর পাড়ের মাটি বিক্রির রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে।

সরজমিনে দেখা যায়, তুলাই নদীর পাড়ের মাটি কাটার মহোৎসব। এ সময় ট্রাক্টরের এক শ্রমিকের সাথে কথা হলে তিনি জানায়, তুলাই নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে এলাকার আতাবুর, আলম’সহ বেশ কয়েকজন দীর্ঘদিন থেকে নদীর পাড়ের মাটি প্রতি ট্রলি ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছে ট্রলির মালিকদের কাছে।

তুলাই ব্রীজের দক্ষিন পাশে আতাবুর রহমানের পয়েন্টে মাটি বহন করছে মের্সাস আলহামুলিল্লাহ পরিবহন, মের্সাস ফারহানা পরিবহন, মের্সাস রাজ নুর পরিবহন, মের্সাস সেলিনা পরিবহন, মের্সাস সুজন পরিবহন, মের্সাষ মুকুল পরিবহন, মায়ের দোয়া পরিবহন, মের্সাস মোক্তার (২) পরিবহন, মোক্তার (৩) পরিবহন, সেলিনা (২) পরিবহন, মা-বাবার দোয়া পরিবহন, লাই ইয়া পরিবহন।

এসব ট্রলিতে করে নদীর পাড়ের মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। ইট ভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে তুলাই নদীর পাড়ের মাটি। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক জমির পানি নদীতে নামানোর জন্য রিং বসানো হয়েছে। তারপরও নদীর পাড়ের মাটি কেটে জমি সমান করেছে। বন্যায় আবারও নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র আলহাজ্ব সবুজার সিদ্দিক সাগরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তুলাই নদী খনন কাজ সম্পন্ন হলে দুই পাড়েই বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন তুলাই নদী করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। নদীর পাড়ের মাটি কাটার বিষয়টি প্রশাসনকে জানাবেন বলেও জানান তিনি।

বোচাগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত টেকনিক্যাল এসিস্টেন আশিকুর রহমান আশিকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনিও নদীর পাড়ের মাটি কাটার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পেয়ে বিরলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারি প্রকৌশলী সামিউল ইসলাম ছুটিতে থাকায় তাঁকে ফোনে বিষয়টি অবগত করেছেন বলেও জানান।

তিনি আরও বলেন, বিরলের তুলাই নদী খননের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। নদী খননের পর দুই পাড়ের মাটি সমান করে বৃক্ষরোপন করার কাজ এখনো হয়নি। নদীর পাড় সমান (ল্যাবেল ওর্য়াক) করে মানুষ চলাচলের উপযোগি করার পর উদ্বৃত্ত মাটি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) এর অনুমতি সাপেক্ষে কেউ নিলে নিতে পারবেন বলেও জানান।

এদিকে বিরল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) এবং ভারপ্রাপ্ত ইউএনও আব্দুল ওয়াজেদের কাছে
নদীর পাড়ের মাটি কাটা বন্ধ করতে প্রশাসনিকভাবে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদী সংরক্ষনের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ’র। তারপরও আমি সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারি প্রকৌশলী সামিউল ইসলামকে ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও