রূপগঞ্জে লোকালয়ে ময়লার ভাগাড়, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

জুন ০৫ ২০২২, ২০:১৮

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ- রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সকল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে একটি আবাসিক এলাকার মসজিদের খালী জায়গায় লোকালয়ের পাশে। বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। মশা-মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি সহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক গ্রামের মানুষ।

উপজেলার তারাব পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মাসাব গ্রামের আবাসিক এলাকায় পৌরসভা কতৃক ৯টি ওয়ার্ডের সকল ডাস্টবিনের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। জনবহুল আবাসিক এলাকায় অবাধে ময়লা ফেরলার কারনে আশপাশে বসবাসকারী নাগরিকরা পড়েছেন মহা বিপাকে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসে ভেসে পরিবেশকে করেছে বিনষ্ট জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্বিসহ ভোগান্তি। মশা- মাছির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মরার উপড় খারার ঘাঁ হয়ে দেখা দিয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এ আবাসিক এলাকার পরিবেশ ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠছে। এর ফলে ঘরে ঘরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানান রোগে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, মাসাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নামে (ক, তফসিলের) লিজ নেওয়া ৬০শতাংশ জলাশয় ভুমিতে বছর খানেক আগে ময়লা ফেলার জন্য তৎকালীন কমিটির সম¥তিতে। স্থায়ীভাবে বর্জ্য ফেলার জন্য তারাব পৌরসভা কতৃক ৩নং ওয়ার্ডের মাসাব মৌজার ৩০/৩৫ফিট গভীর ৬০শতাংশ জমি নির্ধারন করে। সে জমিতে ৫/৬ মাস আগে ময়লা ফেলা শুরু করে পৌর কতৃপক্ষ ।

কিছুদিন ময়লা ফেলার পরে যখন ময়লা স্তুপ হয়ে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দুষন ও মশা-মাছির উপদ্রপে অতিষ্ট হয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ মিছিল ও আন্দোলন শুরু করে। তখন টনক নড়ে পৌর কতৃপক্ষের। পৌর সভার লোকজন এসে দেখে রমজান মাসের আগেই ময়লা ফেলা বন্ধ করেদেয়। কিন্তু ঈদের সপ্তাহ খানেক পর থেকে পুনরায় অবার ময়লা বর্জ্য ফেলা শুরু করে। পরিবেশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই পৌর কতৃপক্ষ একতরফা ভাবে ময়লা আবর্জ্যনা ফেলেই যাচ্ছে। এ সকল ময়লা আবর্জ্যনার পচাঁ, উৎকট দুর্গন্ধে আশপাশের শতশত পরিবারের সেখানে টিকে থাকাই দায় হয়ে দাড়িয়েছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে উৎকট গন্ধে। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে স্কুল শিক্ষার্থীরাসহ পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। পৌরসভার অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন শত শত টন ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে জনবসতিপুর্ন এলাকায়। আবর্জনার দুর্গন্ধের শিকার হওয়া এলাকাবাসী চাইছেন যে করেই হোক এই ময়লার বাগার আবাসিক এলাকা থেকে যেন অবিলম্বে দূরে সরিয়ে নেয়া হয় ।

গৃহস্থালী বর্জ্যর পাশাপাশি রয়েছে হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য। পৌর এলাকার গৃহস্থালী বর্জ্য থেকে হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্য এগুলো সব ফেলা হয় ডাস্টবিনে, সে ময়লা চলে অসে ডাম্পিং পয়েন্টে। ময়লাবাহী ট্রাকগুলো প্রতিদিন যখন একের পর এক ময়লা বহন করে নিয়ে যায় তখন এলাকার বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। এ ছাড়া ট্রাকগুলো থেকে ময়লা বহনের সময় প্রতিদিনই ময়লা রাস্তায় পড়ে পরিবেশ ধুষন ও দুর্গন্ধ ছড়ায়।

স্থানীয় বাসিন্দা মানবাধিকার কর্মি ,মাসাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির উপদেষ্ঠা জহিরুল সিকদার বলেন, বিগত সময়ে পৌরসভা কতৃক উক্ত জমিতে ময়লা ফেলার আলোচনায় আমি বরবরই বিরোধিতা করে আসছি। সব মতামত উপেক্ষা করে ময়লা ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আজ এ জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। আবাসিক এলাকার জনদুর্ভোগ এরাতে এ বর্জ্য ময়লার বাগার সরিয়ে নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ভাগাড়-সংলগ্ন বাসিন্দা গৃহবধূ আছমা বেগম বলেন, তার স্বামী পেশায় গার্মেন্টস শ্রমিক। চার বছরের মেয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে গত এক বছর ধরে ভাগাড়ের পাশে ভাড়া বাসায় থাকেন। ভাগাড় থেকে সবসময় তীব্র গন্ধ আসে। গন্ধে বাচ্চার প্রায় পেটের সমস্যা, সর্দি ও কাশি হয়। বৃষ্টির পর যখন রোদ ওঠে তখন গন্ধ আরও তীব্র হয়। ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখতে হয়।

মাসাব এলাকার বাসিন্দা আউয়াল হোসেন জানান, মাসাব আবাসিক এলাকায় পৌর সভা কতৃক ময়লা ফেলা শুরু করলে কিছুদিন পর স্থানীয় জনগন বাঁধসাধে এতে রোজার মাস ময়লা ফেলা বন্ধ থাকে। পরে পৌরসভার একটি প্রতিনিধি দল স্পটে এসে উপস্থিত ২/৪ জনের সাথে কথা বলেই আবার ময়লা ফেলা শুরু করে। তিনি এ ময়লার বাগার সরিয়ে নেওয়ার জন্য কতৃপক্ষে কাছে জোর দাবি জানান।

তারাব পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসেল শিকদার বলেন, আবাসিক এলাকায় মাসাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জায়গায় ময়লার বাগার প্রশ্নে তখোনো আমি বিরোধিতা করেছিলাম।এখন এলাকাবাসীর দুর্দশা দেখে আমি মর্মাহত। আমি কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি অন্যত্র জায়গা ব্যবস্থা করে দ্রুত ময়লা ফেলা বন্ধ করার কাজ ছলছে।

এবিষয়ে তারাব পৌর মেয়রের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ওনাকে পাওয়া যায়নি। তারাব পৌরসভার সচিব তাজুল ইসলাম সাহেবের সাথে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তারাব পৌরসভার বর্জ্য পরিদর্শক ফিরোজ আলম জানান, সংরক্ষীত মহিলা কাউন্সিলর আসমা পারভীনের প্রস্তাবে পৌর কতৃপক্ষ জমি মালিকদের সাথে আলোচনা করে ময়লা ডাম্পিং শুরু করে। পরবর্তিতে এলাকাবাসী বাধা দিলে কাউন্সিলর জাকারীয়া মোল্লা ,মনির হোসেন, লায়লা পারভীন সহ একটি প্রতিনিধি দল ময়লা ফেলাে জায়গাটি পরিদর্শন করেন। এলাকাবাসীর সাথে কথাবলে কিছুদিনের সময় নিয়ে পুনরায় ময়লা ফেলা আরম্ব করি। এখন ময়লা যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় সেজন্য ব্লিসিন পাউডার ব্যাবহার করছি ও বোল্ট ড্রেজার দিয়ে ময়লা সাথে সাথে পানিতে মিশিয়ে দিচ্ছি।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও