কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক রোকসানাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা

নভেম্বর ০৮ ২০২২, ১৭:২৯

Spread the love

আনোয়ার হোসেনঃ কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক রোকসানা খানম (৫২) নিজ ফ্ল্যাটে খুন হয়েছেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
রোববার দিবাগত রাতে পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সোমবার সকালে পুলিশ ওই নিহতের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে। রোকসানা খানম কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের দিবা শাখায় ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তার স্বামী খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান শিশির যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় এলজিইডিতে কমিউনিটি অর্গানাইজার পদে কর্মরত।

নিহতের স্বজনরা বলেন, রোকসানার স্বামী মাঝে-মধ্যে কুষ্টিয়ায় আসেন। তাদের কোনো সন্তান নেই। রোকসানা একা বাসায় থাকতেন। মাঝে মধ্যে তার শাশুড়ি তার সঙ্গে থাকেন।

তিনিও কয়েক দিন ধরে ঢাকায়। বাসায় একা ছিলেন রোকসানা। সকালে তার সাড়া না পেয়ে পুলিশকে খবর দেন স্বজনরা। পরে পুলিশ তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, ছয়তলা বাড়িটি ওই শিক্ষকের নিজের। তিনি দ্বিতীয় তলায় একাই বসবাস করতেন। ওই বাসার চতুর্থ তলায় থাকতেন তার মৃত ভাইয়ের পরিবার। ভাতিজা নওরোজ কবির নিশাত জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফুফু রোকসানা খানমকে তারা ডাকতে গিয়ে দেখেন দরজা ভেতর থেকে লক করা। অনেক ডাকাডাকি করার পরও দরজা না খোলায় তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ দরজা ভাঙতে বলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শহরের হাউজিং ডি-ব্লকের ৬ তলা বাড়ির দোতালার ঝুলন্ত বারান্দায় ছাদের ওপরের গ্রিল কেটে দুর্বৃত্তরা শিক্ষিক রোকসানার ফ্লাটে প্রবেশ করে। পরে ধারালো অস্ত্র বা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়। তার মুখমণ্ডল থেঁতলে দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দুর্বৃত্তরা ওই শিক্ষকের আলমারি ভেঙে কাপড়-চোপড়সহ জিনিসপত্র তছনছ করে।

এছাড়া আসবাবপত্র ও কম্পিউটার ছিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। স্বর্ণালংকার কিংবা টাকা-পয়সা খোয়া গেছে কিনা তা নিশ্চিত করে পুলিশ জানাতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ জানা না গেলেও পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী চক্র এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। নিহত রোকসানার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১৯৯৭ সালে আমাদের বিয়ে হয়। তবে আমাদের কোনো সন্তান নেই। তারপরও আমাদের পারিবারিক কোনো কলহ কিংবা মনোমালিন্য ছিল না। রোকসানা চাকরি করত তাই সে কুষ্টিয়ায় এবং আমি যশোরে থাকতাম। গত রবিবার রাতে তার সঙ্গে আমার কথা হয়। সকালে সে বিদ্যালয়ের কাজে যশোর শিক্ষা বোর্ডে যাবে। আমি সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করেনি। পরে ভাতিজা নওরোজ কবির নিশাত আমাকে ফোন দিয়ে বলে ফুপুর রুম ভেতর থেকে আটকানো এবং ডাকলে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তারপর তারা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখে রোকসানা বিছানার ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান, সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে পুলিশ, পিবিআই ও গোয়েন্দা টিম সমন্বিতভাবে তদন্ত করছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. এফতে খাইরুল ইসলাম বলেন, রোকসানা খানম তার স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষিকা ছিলেন। একজন ভালো শিক্ষিকা হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তার কোনো শত্রু থাকতে পারে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তিনি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে শিক্ষিকা রোকসানা খানমের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও