ঘুষ ও দালালমুক্ত রূপগঞ্জ ভূমি অফিসে ভূমি সেবাদানে তৎপর এসি ল্যান্ড 

নভেম্বর ১৬ ২০২২, ০৮:২৮

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ ছিম ছাম অফিস। একেবারে নীরবতা। লোকজনের জটলা কম। দালালের দেখা নেই। সেবগ্রহীতাদের টানাহেঁচড়া নেই। নেই ঘুষ নিয়ে দরদাম। এমন দৃশ্য বিরাজ করছে রূপগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ভূমি অফিসগুলোতে। আর তা সম্ভব হয়েছে সদ্য যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক ও সহকারী কমিশনার ভূমি মো. কামরুল ইসলাম মারুফের যৌথ প্রচেষ্ঠায়।

ভূমি অফিস মানেই ভোগান্তি। জনমনে দীর্ঘ দিনের এই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুল ইসলাম মারুফ। ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে ভোগান্তি ছাড়াই রূপগঞ্জবাসী এখন সব ধরনের ভূমি বিষয়ক সেবা পাচ্ছেন। স্বয়ং সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজেই দিচ্ছেন নাগরিক সেবা। ভূমি অফিসের প্রবেশদ্বারের বারান্দায় লাগিয়েছেন দালালমুক্ত অফিসের ঘোষণা। টানানো হয়েছে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা গ্রহণের গাইডলাইন। নামজারি, জমি খারিজ ও জমা একত্রীকরণ সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও সরকারি খরচের বিবরণ। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মুড়াপাড়ায় অবস্থিত উপজেলা ভূমি অফিসের সবকিছুতেই এসেছে পরিবর্তন।

জানা যায়, ভূমি অফিসে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হননি এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েতই কম। জমির নামজারি, ভূমিকর পরিশোধ, খাসজমি বরাদ্দ ও জমি ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে খোঁজখবর জানতে এবং রেকর্ড জানাসহ ভূমি সংক্রান্ত সেবা নিতে এসে মানুষ কখনো দালালের খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত টাকা গচ্চা দিয়েছে, কখনো বা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা ঘুষ, হয়রানির শিকার হয়ে মাস, বছর পার করে কাজটি সারিয়ে নিয়েছেন। ভূমি অফিস নিয়ে এমন নেতিবাচক ধারণা সেবাগ্রহিতাদের মন থেকে দূর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুল ইসলাম মারুফ। সেবা গ্রহিতাদের জন্য ভোগান্তি ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সুবিধা নিশ্চিত করতে কর্মরত সকলকে দিয়েছেন কঠোর নির্দেশনা।

উপজেলা ভূমি অফিস ঘিরে ইউনিয়ন তহশিল অফিসগুলোও সাধারণের জন্য খুলে দিয়েছে ভূমি সংক্রান্ত সেবার দরজা। শহর আর গ্রামের মানুষ এখন নিজ ভূমির কাজের কথা অফিসে এসে বলতে পারছেন সরাসরি সহকারী ভূমি কমিশনারকে। এসিল্যান্ড অফিস নিয়ে এর আগে অভিযোগের অন্ত ছিল না। ভূমি অফিসের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিল ঘুঁষ আর দুর্নীতি। দালালের উপদ্রব ছিল সবচেয়ে বেশি। দালালরাই কর্মকর্তা আর বেঞ্চ সহকারীদের নাম দিয়ে ‘ঘুষের টাকা’ হাতিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গুতিয়াব এলাকার মো. ওসি উদ্দিন (৭৫) বলেন, ‘আমি এর আগে আমার জমির খারিজ করার জন্য এসেছিলাম। সেই সময় আমার কাগজ হাতে পেতে তিন মাসের বেশি সময় লেগেছিল। তবে আজ সকালে আমি একটি নতুন খারিজের জন্য এসেছি, আমাকে অল্প দিনের মধ্যেই কাজটি করে দেয়া হয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। আমি চাই সকল মানুষ যেন এইভাবে সেবা পায়।’

ভূমি অফিসের তথ্যমতে, অল্প কিছুদিন আগে মো. কামরুল ইসলাম মারুফ যোগ দিয়েছেন। যোগ দিয়েই জনদুর্ভোগ নিরসনের কাজে হাত দেন। প্রথমে অফিসে আসা সেবা প্রত্যাশীদের বসার জন্য ফ্রন্ট ডেস্ক ও ভূমিসেবা কেন্দ্র চালু করেন। সিসি ক্যামেরা বসিয়ে করা হচ্ছে নজরদারি। ফেসবুকে চালানো হচ্ছে সতর্কতা ও সচেতনতামূলক প্রচারণা। একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দালালদের অফিসে ডেকে এনে তাদের কাছ থেকে ফেরত দেওয়া হয়েছে বাড়তি টাকা।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুল ইসলাম মারুফ বলেন, ‘আমি যোগ দিয়েই দালাল মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছি। জনগনের ভোগান্তি নিরসনে আমাদের সকল আয়োজন। সরকারি নির্দিষ্ট ফি’র বাহিরে বাড়তি কোনো টাকা যাতে না নিতে পারে তার ব্যবস্থা করেছি। আইডি কার্ডধারী ব্যাতিত কোনো লোক অফিসে অহেতুক অবস্থান করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, ‘আমার দফতরের সব কার্যক্রম অনলাইনে হওয়ায় নগদ টাকার ব্যবহারের সুযোগ নেই।’

অফিস চলাকালীন অফিসের কর্মচারীদের গলায় নিজের পরিচয়পত্র ঝুলানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে কর্মচারী ও দালাল সেবা গ্রহিতারা সহজে নির্ধারণ করতে পারছে।

উপজেলা সহকারী (ভূমি) বলেন, ‘আমি এখানে যোগ দেওয়ার পর থেকে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে রূপগঞ্জবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ভূমি অফিসের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করি। পুরো অফিস এখন দালালমুক্ত।’ এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ঢাকা এর নির্দেশে গত এক সপ্তাহ থেকে রূপগঞ্জের সকল ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করার লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিদর্শন অথবা কারো অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করব।###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও