লক্ষ্মীপুরে শিক্ষকের হামলার শিকার দুই ছাত্রী হাসপাতালে

নভেম্বর ৩০ ২০২২, ১৬:৫২

Spread the love

সোহেল হোসেন লক্ষীপুর প্রতিনিধি:লক্ষ্মীপুর জেলাতে পরীক্ষার হলে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফাতেমা আক্তার মীম ও নুহা আক্তারকে মারধরের পর খামছি দিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। লক্ষ্মীপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার (আলিয়া মাদ্রাসা) বাংলা শিক্ষক সালমা আক্তারের কাছে প্রাইভেট টাকা না দেওয়ায় তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেনের কাছে এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেন ফাতেমার মা মর্জিনা বেগম। এর আগে সকালে মাদ্রাসায় পরীক্ষা চলাকালীন ওই শিক্ষক দুই ছাত্রীকে পিটিয়েছেন।

ভূক্তভোগী ফাতেমা মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী ও নুহা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ফাতেমা সদর উপজেলার ৫নং পার্বতীনগর ইউনিয়নের পার্বতীনগর গ্রামের দুলাল হোসেনের মেয়ে। তার মুখে শিক্ষকের খামছি দেওয়া আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই ছাড়া নুহা একই মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শিক্ষক খবির উদ্দিনের মেয়ে। তাদেরকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাসার শিক্ষক ও ভূক্তভোগী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাতেমা একসময় সালমার কাছে বাংলা বিষয়ে প্রাইভেট পড়তো। তখন দশ দিন পড়েই ফাতেমা আর পড়তে যায়নি। তবে ওই দশ দিনের টাকা দিতে চেয়েছিল সে, কিন্তু শিক্ষক টাকা নেয়নি। মঙ্গলবার সকালে ফাতেমা হাদিস বিষয়ে দিতে আসে। পরীক্ষার হলে সালমা ও শিক্ষক আবদুল জলিল দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে দুই শিক্ষকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। হঠাৎ করে সালমার দৃষ্টি পড়ে ফাতেমার দিকে। এসময় রাগান্বিত হয়ে তার উদ্দেশ্যে সালমা বলে, তুই তো আমার টাকা দিলি না। এসময় তাকে গালমন্দও করে। একপর্যায়ে তাকে এলাপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দিতে থাকে। এসময় পাশে থাকা নুহাকেও তিনি চড়-থাপ্পড় মারেন। তখন ফাতেমার মুখে খামছি দিয়ে জখম করেন শিক্ষক সালমা।

খবর পেয়ে ফাতেমার মা মর্জিনা মাদ্রাসা আসেন। এসময় মেয়ের মুখে রক্ত দেখে তিনি চিৎকার করে কান্না শুরু করেন। চিৎকার করে তিনি মেয়ের অপরাধের বিষয়ে জানতে চান।

ফাতেমা আক্তার মীম বলেন, সবার সামনে শিক্ষক সালমা তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। তিনি আমার মুখের হিজাব টেনে খুলে ফেলে। এসময় তার নখ লেগে আমার মুখ রক্তাক্ত হয়। কখনো মা-বাবা আমাকে মারেনি। আমার কিছু হলে এই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক সালমা দায়ি থাকবে। সবার সামনে আমাকে মারার ঘটনা লজ্জাজনক। কিভাবে আমি সবার সামনে মুখ দেখাবো ?

ফাতেমার মা মর্জিনা বেগম বলেন, আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই। আমি ইউএনও ও সদর থানায় কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি। অপরাধ না করেও আমার মেয়ে মারধরের শিকার হয়েছে। এটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা।

রাত পৌনে ৭ টার দিকে নুহার বাবা শিক্ষক খবির উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে শিক্ষক সালমা কয়েকটি থাপ্পড় দিয়েছে। তাৎক্ষণিক আমার মেয়েই অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেছে। আমি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দের কাছে অভিযোগ করবো।

অভিযুক্ত শিক্ষক সালমা বলেন, মীম আমার কাছে ৫ মাস প্রাইভেট পড়েছে। হঠাৎ করে সে প্রাইভেট পড়া বন্ধ করে দেয়। সে আমার টাকাও দেয়নি। উল্টো সে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছিল। এজন্য তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছি। এখানে দোষের কিছু নেই।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নেছার উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। শিক্ষকের এ কান্ড মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষক এ ধরণের ঘটনা ঘটাতে কোনভাবেই পারেন না। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সঙ্গে কথা বলে কার্যকরী পরীক্ষা নেওয়া হবে।

রাত ৭ টার দিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আহত ছাত্রী ফাতেমা লিখিত অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বক্তব্য জানতে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেনের মোবাইলফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজন। বিস্তারিত জেনে এই ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও