নকশী কাঁথার সফল উদ্যোক্তা হলেন সোনারগাঁও এর মোসাঃ কামরুন্নাহার

জানুয়ারি ১৬ ২০২৩, ২০:৩৪

Spread the love

আনোয়ার হোসেন, বুরো প্রধান চট্টগ্রাম :নকশি কাঁথা বাংলাদেশের লোকশিল্পের একটা অংশ। সাধারণত পুরাতন কাপড়ের পাড় থেকে সুতা তুলে অথবা তাঁতিদের থেকে নীল, লাল, হলুদ প্রভৃতি সুতা কিনে এনে কাপড় সেলাই করা হয়। নকশি কাঁথা পাতলা কিংবা ভারী শীত কিংবা গরমকাল সব সময় সবার ঘরে এর ব্যবহার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পাতলা এইসব নকশি কাঁথা সচরাচর পাওয়া যায় না। কিন্তু বর্তমানে ই-‌কমার্সের যুগে এখন হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে এসব নকশি পাতলা কাঁথা। আজকে আমরা তুলে ধরব তেমনি একজন সফল নকশী কাথার উদ্যোক্তা সোনারগাঁও থেকে। ‌

নকশী কাঁথার সফল উদ্যোক্তা মোসাঃ কামরুন্নাহার, পেশায় একজন গৃহবধূ । উদ্যোক্তা হয়ে উঠার আগে এনজিও তে কাজ করতনে। পারিবারিক সমস্যার কারণে পরবর্তী চাকরি ছেড়ে দেন। এখন বাংলার ঐতিহ্য নকশি কাঁথা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি শুধু নিজে নয় অন্যকেও স্বাবলম্বি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছন।

সম্পুর্ন নতুন কাপড়ের উপর অসাধারণ ডিজাইন আর সুতা সুচের অসাধারণ শিল্প বরাবরই মনকারার মতো এইসব নকশিকাঁথাগুলো।

পুরো বাংলাদেশেই নকশি কাঁথা তৈরি হয়, তবে ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ফরিদপুর ও যশোর নকশি কাঁথার জন্য বিখ্যাত হলেও, তার কাঁথা গুলো একেবারেই ফেলে দেয়ার মতো নয়। কামরুন্নাহারের নিজ হাতে বানানো নকশি কাঁথার রেগুলার প্রোডাক্টের মধ্যে রয়েছে বড় নকশিকাঁথা, বেবি নকশিকাঁথা,নকশিচাঁদর, কুশন কভার, ওয়্যালম্যাট, বেবীকাথাঁ, টেবিলক্লথ, জায়নামাজ, আলমারি গ্লাসের পর্দা ,টেলিভিশনের পর্দা ৷

আমাদের দেশে গ্রামের বাড়িতে আগে যেসব নকশি কাঁথা তৈরি হতো সেগুলো করা হতো পুরাতন কাপড় দিয়ে। কিন্তু তিনি যে নকশিকাঁথা গুলো তৈরি করেন সেগুলো সম্পন্ন নতুন কাপড় দিয়ে তৈরি করে থাকেন। তাই এর সৌন্দর্য ফুটে উঠে কয়েক গুণ বেশি এবং এই কথাগুলো ব্যবহার করা যায় কয়েক বছর ধরে যার গুনাগুন থাকে অটুট। নতুন কাপড়ের নকশিকাঁথা ব্যবহারের ফলে রোগ-জীবাণুর কোন ধরনের ভয়-ভীতি থাকেন। এবং এগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে।

কামরুন্নাহার বলেন, ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শিখে বড় কোনো কর্মকর্তা হয়ে মানুষের সেবা করার। তবে দারিদ্রের কষাঘাতে ধুলিসাৎ হয়ে যায় সেই স্বপ্ন। এখন স্বপ্ন দেখি স্বল্প আয়ের নারীরা যারা অবহেলিত, অন্যের উপর নির্ভরশীল তারাও যেন একাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারে। নিজেদের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারে সাথে তিনি ও। তার এই নকশিকাঁথা গুলো যে কারো নজর কাড়তে বাধ্য করবে। আর নজরকাড়া নকশি কাঁথা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তিনি নিজে স্বাবলম্বী হবেন এবং স্বল্পআয়ের কিছু নারীর কর্মসংস্থান তৈরি করবেন। ‌ সেই লক্ষ্যে তিনি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।

এখন তার অধীনে কাজ করছেন অন্তত ৯/১০ নারী। এদের কেউ গৃহিনী, কেউবা স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় নারী।সেখানে কাজ করেন অনেক শিক্ষার্থীরাও। এদের প্রত্যেকেই এখন স্বাবলম্বী। প্রতিমাসে এই নকশী কাথার সুই-সুতোর ফোড়নে কামরুন্নাহারের আয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তার অধীনে কর্মরত নারীরাও প্রতিমাসে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করেন।

রিভু নামে এক নারী জানান, ‘স্বামী কাজের টাকায় ঠিকমতো সংসার চলে না। তাই এখানে কাজ করি। প্রথমে স্বামী এই কাজে বাধা দিতেন। এখন এখান থেকে মাসে ৩-৪ হাজার টাকা আয় হয়। এখন স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছি।’

কামরুন্নাহার বলেন,প্রতিমাসে অন্তত ২০-২৫ টা নকশী কাঁথা তৈরি করি। প্রতিটি বেবি কাঁথা ১০০/১৫০ বড় নকশী কাঁথার দাম ১০০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত।বর্তমানে জেলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মানুষ এসব নকশী কাঁথা কিনে নিয়ে যায়।আমি ফেসবুকে প্রচার করে বিক্রি করে থাকি ৷

আমাকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছেন আমার পরিবার ।কামরুন্নাহার বলেন,সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পাই না সহযোগিতা পেলে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিধি আরও বাড়াতে পারতাম।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও