নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ৫টি ইউনিট কমিটিতে স্থান পায়নি ত্যাগী ও যোগ্যরা, বিএনপিতে ক্ষোভ

ফেব্রুয়ারি ০৭ ২০২৩, ১৬:৩৯

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ সাংগঠনিক নিয়ম না মেনেই রাতের আঁধারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পাঁচটি ইউনিট কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন। এবং কমিটিগুলোতে কেন্দ্রের নির্দেশনা ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে কমিটিগুলো অবৈধ দাবি করছেন কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদসহ অন্যান্য যুগ্ম আহবায়করা।

এদিকে ইউনিট কমিটিগুলো নিয়ে জেলা জুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে সমালোচনার ঝড়। দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ। অনেকেই মনে করছেন এরূপ কর্মকান্ডে দলের ভিতরের ঐক্য বিনষ্ট হতে পারে। ফলে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির চলমান আন্দোলন স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একাধিক সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নয় সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি থাকলেও শুধুমাত্র আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন দু’জন রাতের অন্ধকারে যুগ্ম আহ্বায়কদের সাথে কোনো প্রকার সাংগঠনিক আলাপ আলোচনা ছাড়াই ৫টি কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এতে কেন্দ্রের নির্দেশনা ও জেলা বিএনপি’র কমিটির সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভুত হয়েছে।

জানাগেছে, গত শনিবার ও রোববার জেলার অন্তর্গত ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জ থানা এবং রূপগঞ্জের কাঞ্চন ও তারাব পৌর বিএনপি’র কমিটি অনুমোদন করা হয়। তৃণমূলের নেতাদের অনেকের দাবি সুবিধাভোগীরা কমিটিতে স্থান পেয়েছে। যাদের গত ১২-১৩ বছর বিএনপি’র আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে তেমন একটা সক্রিয় দেখা যায়নি। তাছাড়া সুবিধাভোগীরা শীর্ষ পদে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের অনুসারীরা কমিটিতে স্থান পেয়েছে এবং আগামীতেও পাবে।

ওদিকে ঘোষিত ৫টি ইউনিট কমিটির একটিতেও ছিল না ১নং যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদের স্বাক্ষর। এমনকি কমিটির বিষয়ে জানানো হয়নি বাকী আরও ৬জন যুগ্ম আহবায়ককে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়কদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির চারটি নতুন ইউনিট কমিটি ও একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যারা যুগ্ম আহ্বায়ক আছেন তাদের সাথে তারা এই কমিটি অনুমোদনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি এক মিনিটের জন্যও আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব তাদের সাথে কথাও বলেননি।
আহবায়ক আর সদস্য সচিব মিলে নিজেদের পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিতে রাজপথের অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। বিগত ১৫ বছর যাদেরকে কোনোদিন বিএনপির একটি কর্মসূচিতেও দেখা যায়নি সেইসব সুবিধাবাদীদেরকেও এই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এতে করে রাজপথের তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

আরও জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন তাদের নিজেদের আখের গোছাতে নিজ নিজ এলাকার এই কমিটি করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতেই রাজপথের অনেক ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিজস্ব নেতাকর্মীদের নিয়ে মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু মিলেমিশে তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাতের আঁধারে রূপগঞ্জ, কাঞ্চন পৌরসভা, তারাব পৌরসভা ও ফতুল্লা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ এই ৫ কমিটি গঠন করেছে।

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র প্রথম যুগ্ম আহবায়ক মামুন মাহমুদ জানান, এটি দলের নির্দেশনা অমান্য করা ছাড়া কিছু নয়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান ও মহাসচিব কমিটিতে উল্লেখ করে দিয়েছেন যে ৩ জনের স্বাক্ষরে কমিটি হবে কিন্তু তা হয়নি। দলের চেইন অব কমান্ড মানা হয়নি। আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আলোচনা করা হয়নি, আমাকে জানানো হয়নি। এ কমিটি নিয়ম অনুযায়ী অবৈধ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন জানান, আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনার বাইরে কিছু করি না। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি করা হয়েছে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা কাউন্সিলরের মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত করবো। পকেট কমিটি হবে না। ব্যক্তিগত পছন্দে কমিটি করা যাবে না। কাউন্সিলর নেতা নির্বাচিত করবে। এভাবে হলে কর্মী মূল্যায়ন পাবে দলও শক্তিশালী হবে। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির নবগঠিত আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ তার বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
তবে এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আওতাধীন নতুন চারটি আহবায়ক ও একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে তারা অবগত নন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ই নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ৯ সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয় কেন্দ্র থেকে। কমিটিতে আহবায়ক করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনকে ও সদস্য সচিব করা হয় জেলা যুবদলের আহবায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে।
এতে ১নং যুগ্ম আহবায়ক করা হয় মামুন মাহমুদকে। যুগ্ম আহবায়করা হলেন- মনিরুল ইসলাম রবি, শহিদুল ইসলাম টিটু, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, লুৎফর রহমান খোকা, মোশারফ হোসেন ও জুয়েল আহমেদ। ঘোষিত কমিটির নিচের দিকে উল্লেখ ছিল, আহবায়ক এবং প্রথম যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে অধীনস্থ ইউনিট কমিটি অনুমোদিত হবে।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও