রমজানে অস্থির বাজার, বেসামাল ভোক্তারা

মার্চ ২৮ ২০২৩, ১৩:২৮

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ “গরীবের খবর কেউ রাখে না, শুনছি রোজা বলে সংযমের মাস।তাইলে জিনিসপত্রের দাম এত বাড়ে কে? বাজারে যাইতেই পারি না। ১ হাজার টাকা লইয়া বাজারে গেলে নিমিষেই শেষ। অথচ চাল কিনলে ডাল কিনতে পারি না। একটু ভাল খাবার মাছ, মাংসতো স্বপ্নে দেখি। ইলেকশন আইলে নেতারা এছা করেগা, তেছা করেগা। ধনীরা কই? আসলে আমাগো গরীবের কেই নেই।” বর্তমান বাজারের অবস্থায় এমনি করে মনে ক্ষোভে কথাগুলো বলেন আলেয়া বেগম।

রোজার মাসে সাধারণত যেসব পণ্যের প্রয়োজন হয় এর মধ্যে রয়েছে মোটা চাল, খোলা আটা, বোতলজাত সয়াবিন, চিনি, ছোলা, খেজুর, অ্যাংকর, মসুর, রসুন, দেশি আদা, বিদেশি হলুদ, শুকনা মরিচ, জিরা, ব্রয়লার মুরগি, গরু, রুই মাছ, ডিম, গুড়া দুধ ও লবণ।
মাংসের বাজারের আগুন দামে হাত পুরছে মধ্যবিত্তের। গরীবরা আতঙ্কে মাংসের বাজারে পা ই রাখছেন না। সাধ্যের ব্রয়লার মুরগির কেজিও এখন ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ডিমের হালিও ৫০ টাকায় ঠেকেছে।

বাধ্য হয়ে মানুষ বাড়তি দামে জিনিসপত্র কিনছে। ব্যবসায়ীদের মুখে সেই পুরনো বুলি ‘বেশি দামে কেনা বেশি দামে বিক্রি। আমাদের কিছু করার নেই’। সাধারণ মানুষের পক্ষে পণ্যের আমদানি মূল্য জানার কোন উপায় না থাকায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে সাধারণ মানুষের পকেট কাটে বৈধ পন্থায়।

উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজান মাসে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে গোটা বাজার। ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, মাছ-মাংস, দুধ, ডিমের বাজার আগে থেকেই আগুন। চাল, ডালের খরচও কুলিয়ে উঠতে পারছে না বেশির ভাগ ভোক্তা।

গরীব মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তদেরও বেসামাল দশা। এ থেকে কবে মিলবে পরিত্রাণ- এ প্রশ্ন এখন সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে।
রোজায় দ্রব্যমূল্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিতের লক্ষ্যে অসাধু চক্রদের ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। রোজার মাসে ‘কালোবাজারি, মজুদদাররা’ যাতে বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি করতে না পরে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পণ্যের সংকট সৃষ্টির চেষ্টাকে ‘গর্হিত কাজ’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। অপরদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, আইনশৃংখলাবাহিনীসহ সরকারি একাধিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বরাবরের মতো ‘দাম বাড়বে না’ বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের দাবি, রোজা উপলক্ষে নিত্যপণ্যের চাহিদ অনেক হারে বাড়লেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের কারণে আমদানি এবার কম এবং বিশ্ববাজারে দামও বাড়তি রয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা বেড়েছে, যা সন্তোষজনক। সুতরাং রোজায় পণ্যের সংকট থাকার কথা না। কিন্তু ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না।

ছুটির দিনে বাজারে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইলিয়াস আলী। দুই লিটার তেল, এক কেজি চিনি আর যৎসামান্য মসুর ডাল, ছোলা, বেসন ও খেজুর কিনতেই উধাও হয়ে গেছে হাজার টাকা। বাজারদর নিয়ে কথা শুরু হতেই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি। উপজেলার বালিয়াপাড়ার ইলিয়াস আলী বলেন, এখনো মসলাপাতি, মুড়ি, মাংস, ডিম কেনা হয়নি। পেঁয়াজ, মরিচ, লেবুসহ আরও কত কি বাকি! কিন্তু পকেট হয়ে গেছে গড়ের মাঠ!

আক্ষেপের সঙ্গে তিনি বলেন, ইফতারের সময় যে একটু শরবত মুখে দেব, তারও জো নেই! ১০০ গ্রাম ইসবগুলের ভুষি ৩৫০ টাকা, চিনির কেজি ১১৫ টাকা। এই যদি হয় বাজারের অবস্থা, রোজায় কি খেয়ে থাকব। জিনিসপত্রের দামে আমাদের দম বন্ধ দশা। এ থেকে পরিত্রাণ মিলবে কবে।

বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পেরে উঠছেন না গৃহকর্মী আয়শা বেগম। গৃহস্থের বাসার কাজ করে সামান্য যে আয় তা দিয়ে বাসা ভাড়া দেওয়ার পর অবশিষ্ট থাকে না কিছুই। এমন পরিস্থিতিতে রোজায় ডাল-ভাত, তরিতরকারি খেয়েও চলতে পারছেন না।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমেনা বেগম বলেন, মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়েছি। নতুন করে ডিমও খাই না। ডাল-ভাত, শাকপাতা আর আলুর তরকারি খাইতেও তো তেল, নুন, মসলা লাগে। সেগুলোর দাম তো আকাশছোঁয়া। রোজার দিনগুলো পোলাপাইন নিয়া কীভাবে পার করমু আল্লাহ ই জানেন। খাওয়া কমাইয়াও কুলাইতে পারতাছি না। বাইচা থাকাই কঠিন হইয়া গেছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যের অপর্যাপ্ততা ইত্যাদি বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও