ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ কমানোর আহবান তরুণ জলবায়ু কর্মীদের

মে ২০ ২০২৩, ১৭:১৬

Spread the love

খুররম মুরাদ-ঢাকা:জাপানের হিরোশিমায় অনুষ্ঠিত ৯৪ সম্মেলনের আগে বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা জি-সেভেন দেশগুলোর নেতাদের অবিবার বংলাদোশ ব্যয়বহন ও জনতার দেনা ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করতে এবং মুক্ততার সাথে টেকসই নযবাণযোগ্য জ্বালানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।

এবারের জি-সেভেন সম্মেলনে বিশ্ব আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংকটের পাশাপাশি জন সংকটের মতো জরুরি বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন। বিশ্বনেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ থেকে পর্যাক্রমে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এই জি-সেভেন দেশগুলোর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানো ও ক্ষতিকর জ্বালানি থেকে সরে আসার বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর পরিকল্পনা এবং উদ্যোগগুলো জানা খুবই জরুরি।

ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশান ও ইউথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস ১৯ মে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লান সামনে

আয়োজিত এক সমাবেশে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের অবসান এবং জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিতে দেশের নির্ভরতা কমানোর অধীকার করেছে।

জি-সেভেন দেশগুলোর সরকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিশেষ করে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় জোট দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে অধিকভাবে ও প্রযুক্তিগত সাহায্য নিয়ে দ্রুতই এগিয়ে আসবে, সমাবেশে এমনটাই দাবি করেন বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কমীরা।

জি-সেভেন দেশগুলোর প্রতিশ্রুতিগুলো আসলে স্থবরই হয়ে আছে, উল্টো কিছু দেশ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিপরীত দিকে হাটছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা এবং নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানো এই আলোচনাটি এখনও জি-সেভেন দেশগুলোর সরকারের নিজেদের মধ্যেই বিলম্বিত হচ্ছে এবং তাদের উদ্যোগগুলোর বিষয়েও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো কোন স্পষ্ট কিছু জানতে পারছে না।

তরুণ জলবায়ু কর্মীরা কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিরোধ এবং এর মানিয়ে নিতে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য জি-সেভেন দেশগুলোর বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান আনিয়েছে। বিশ্ব নেতাদের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কয়লা এবং তরল কৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) সহ জীবাশ্ম জ্বালানীতে বিনিয়োগ করা বন্ধ করা। এলএনজিতে বিনিয়োগ রোদ করা উচিত কারণ এটি একটি কার্বন ভিত্তিক জ্বালানী।

তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বাংলাদেশের চলমান বিদ্যুৎ সংকট ও অধিক বোঝার পেছনে ক্ষতিকর ও দামের দিক থেকে অস্থিতিশীল জীবাশ্ম জ্বালানি এলএনজি আমদানির প্রভাব উল্লেখ করে এর সাথে সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা করেন। এর সাথে তারা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় বাড়তি বিদ্যুৎ বিল ও ঘন ঘন লোডশেডিং এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে উদ্ভুত চ্যালেঞ্জগুলোও তুলে ধরেন। তারা বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসন্ন বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য শক্তির অনুপাত উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তরুণরা আরও দাবি করে যে উন্নত দেশগুলো প্যারিস চুক্তি মেনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ এ সীমাবদ্ধ রাখবে এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ভূমিকা রাখবে।

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশান এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ রবিউল আউয়াল বলেন, “আমাদের কেন ক্ষতিকারক এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তা বুঝতে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করার সময় কিন্তু নেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব এখন জলবায়ু ও জ্বলানি সংকটে ভুগছে। তাই কাজ করার সময় এখনই। আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ করতে হবে এবং G7 দেশগুলির মতো বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। এরকম জরুরি অবস্থায় আমাদের আর দেরি করার সময় নেই, এখনই কাজে নামতে হবে”।

এর সাথে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা এটাও যোগ করেছেন যে জলবায়ু অর্থায়নের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা উচিত এবং বরাদ্দের অন্তত ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নের জন্য হওয়া উচিত।

তরুণরা আপাদের মতো G7 দেশকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে হাইড্রোজেন জ্বালানি এবং আমোনিয়ার মতো অপরীক্ষিত, বিতর্কিত এবং ব্যয়বহুল প্রযুক্তি ব্যবহার না করারও দাবি জানিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ICCCAD) এর পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক বলেন, জলবায়ু সংকট শুধুমাত্র ভবিষ্যতের জন্য একটি বিমূর্ত হুমকি নয়, বরং এটি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ এবং সারা । বিশ্বের দুর্বল জনগোষ্ঠীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারন, কিন্তু এই বিপর্যস্থ মানুষগুলো এই ক্ষয়ক্ষতির জন্য সবচেয়ে কম দায়ী। ইতিমধ্যে, প্রধান অপরাধী ধনী দেশগুলি এবং জীবাশ্ম জ্বালানী কর্পোরেশনগুলি- তাদের ধ্বংসাত্মক অনুশীলন থেকে মুনাফা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনি সময় তাদের এসকল ক্ষয়ক্ষতির দায়িত্ব নেওয়ার এবং টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করার লক্ষে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে তাদের ন্যায্য অর্থ প্রদান করার। তাই অনেক দেরি হওয়ার আগেই, আমাদের উচিত যথাযত দায়িত্ব পালন করা, নইলে আমরা আমাদের সন্তানদের এবং নাতি-নাতনিদের কাছে গুণী হয়ে থাকবো।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও