লিবিয়ায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়-বন্যায় রূপগঞ্জের ২ প্রবাসীর মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি:লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মামুন ও শিহাব নামের ২ প্রবাসী মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গত রোববার লিবিয়ায় ঘুর্ণিঝড় ভ্যানিয়েল ও বন্যার তান্ডবে দারনা শহরে বসবাসকারী ৬ বাংলাদেশী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দুতাবাস। এদের মধ্যে ২ জনই নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা। তারা হলেন, রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার কেরাবো এলাকার মৃত কবির হোসেনের ছেলে শাহাবুদ্দিন শিহাব (৩৫) ও ভোলাবো ইউনিয়নের পূবেরগাঁও এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে মামুন (২৮)।
তারা গত ৪ বছর আগে জীবিকার খোঁজে লিবিয়ায় গেছেন। তাদের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিহতদের পরিবার জানায়, দরিদ্র ঘোচাতে ঋন করে গত ৪ বছর পূর্বে তারা লিবিয়ায় যান পিতা হারা শিহাব ও মামুন। সেখানে তারা ফার্ণিচার ও ওয়ার্কশপে কাজ করেন। পাশাপাশি গ্রাম হওয়ার সুবাধে তারা লিবিয়ায় একই রুমে বসবাস করতেন। শিহাব গত ১ বছর ৮ মাস আগে লিবিয়ায় গেছেন। এর আগে তিনি ৮ বছর লিবিয়ায় ছিলেন। তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে নাম জুনায়েদ (৩)। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেশের মায়া ছেড়ে ঋন করে শিহাব লিবিয়ায় পাড়ি জমান।
শিহাবের মা মাজেদা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি জানান, রবিবার আমার ছেলের সাথে শেষ বারের মতো আমার ও তার স্ত্রীর কথা হয়। সে বলছিল মা এখানে ঘূর্ণিঝড় হবে তোমরা দোয়া করো। পরে সোমবার তার ফোনে কল করে আর পাইনি। তখন আমরা চিন্তায় পড়ে গেলাম। পড়ে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে খবর পেলাম আমার ছেলে মারা গেছে। এ কথা বলতে বলতে তিনি নিঃস্তব্ধ হয়ে যান। খানিক সময় আর কথা বলতে পারেনা।
শিহাবের স্ত্রী মাসুদা বেগম জানান, আমরা গরীব মানুষ। এখনও আমাদের ঋন শেষ হয়নি। আমরা কিভাবে বাচঁব। সন্তানকে কি খাওয়াবো। আমাদের কে দেখবে। মাসুদা বেগম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্যে কামনা করেন।
এদিকে একই উপজেলার পুবেরগাঁও এলাকায় মামুনের বাড়িতে বইছে শোক। ৩৫ বছর আগে তার বাবা তমিজ উদ্দিন মারা গেছেন। ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে মামুনের মা আবেদা বেগম অতি কষ্টে জীবন কাটিয়েছেন। মামুন এসএসসি পাশ করলে মায়ের এত বছরের দুঃখ ঘুচাতে ঋন করে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। আশা ছিল টাকা কামিয়ে মায়ের হাতে দিয়ে বলবে মা তোমার দুঃখের দিন শেষ। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবেনা। গত রবিবার লিবিয়ায় বন্যায় মামুনের সব আশা ভেসে যায়।
মামুনের মা আবেদা বেগম কান্না করে বলছে, আমার সোনা কোথায় গেলি। আমি এখন কার কাছে ফোন করব। আমার ছেলেকে এনে দে। আমি এখন কেমনে বাচঁমু। ঋনের টাকা কেমনে শোধ দিমু। তার আহাজারি পুবেরগাঁও এলাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। শোকে কাতর মামুনের মা সরকারের কাছে সহায়তা কামনা করছেন।
রূপগঞ্জ নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারগুলোকে সব রকমের সহায়তা দেয়া হবে। ########