বৃষ্টি বড় লোকের বিলাস আর গরিবের সর্বনাশ ঘরে বইয়্যা থাকলে না খাইয়্যা মরতে অইব

জুলাই ০৭ ২০২৪, ১২:৩৮

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ “ কথায় বলে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। ভারি বৃষ্টিতে কেউ শুয়ে বসে পোলাও কোরমা খিচুড়ি খায়, আবার কেউ না খেয়ে মরে। কথাগুলো বলেন বৃষ্টি ভিজে রিক্সা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে থাকা আলমগীর। তিনি আরো বলেন, না ভিজেই করব কি, গ্যারেজ ভাড়া দিতেই হবে। ঘরে খাওন নাই। পোলাপানের স্কুলের পরীক্ষার ফি বেতন দিতে হবে। বাজার সদায়ও নিতে হবে । জিনিস পত্রের যে দাম। একটা কিনলে আরেকটা কিনতে পারি না। যত মরন আমাগো গরীব মানুষের। বড় লোহেরা তো আয়েশ করইরা খিচুরি খায়। আমরা বৃষ্টিতে ভিজি, রোদে হুগাই, জ¦র অয়, বিচানায় শুয়ার টাইম নাই। কাম না করলে খাওন বন্ধ।”
সারা বছর বৃষ্টির দেখা না মিললেও বর্ষা শুরুর পর থেকেই বৃষ্টি ঝড়ছে। গত কয়েক দিন ধরে নিয়মিতই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য নিন্মবৃত্তদের মাঝে হাহাকার দেখা দিচ্ছে। ঘরে খাবার নেই, বাহিরে বৃষ্টি, বের হতে পারছে না নিরন্ন খেটে খাওয়া মানুষ। কথা হয় অটো চালক ইসমাইলের সাথে। তিনি বলেন, চার দিন ধওে বৃষ্টি হচ্ছে। কাজে বাহির হইতে পারি না। বউ পোলাপান না খাইয়া রইছে। চনপাড়া বটতলায় কথা হয় রিক্সাচালক জামাল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ঝড় তুফান উপেক্ষা কইরাই বাহির হইছি। কি আর করমু। না খাইয়া তো মরন যাইব না। বড় লোকের লাইগা বৃষ্টি বিলাস, খিচুড়ী রাইধা খাইব। আমাগো তো ঘরে চালই নাই। খামু কি।
শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, বৃষ্টি আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, বৃষ্টি অনেকের জন্য স্বস্তির হলেও তাদের জন্য দুর্ভোগ আর কষ্টের।
বৃষ্টিতে আয়-রোজগার কমে তাদের। বড়লোক বা ধনীদের জন্য বৃষ্টি সুখের হলেও গরিব মানুষের জন্য তা অসুখ, নিদারুণ কষ্টেরব  লছেন তারা।বৃহস্পতিবার দিনভর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরেশ্রমজীবী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা।

বৃষ্টিতে ভিজে কিছুটা রোজগারের আশায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন অনেকেই। কুদুর মার্কেট এলাকায় রিকশাচালক সঞ্জিবন দাস বলেন, ‘রিকশা নিয়া না বাইরাইয়া (বাহির) উপায় নাই। ঘরের বাজার করতে হইবো। বাজার না করলে পোলাপান খাইবো কী? আমাগো রোদ-বৃষ্টি নাই। প্যাডেল না ঘুরাইলে কেউ ট্যাহা (টাকা) দিবো না। নিজের ইনকাম নিজেরই করতে হইবো।’

ভুলতা গাউছিয়া মার্কেট এলাকার অটোচালক ইয়ামনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে বেশিক্ষণ রিকশা চালানো যায় না। কয়েক ঘণ্টা পর জ্বর চলে আসে। এখন উপায় তো নেই। আয়-ইনকাম তো করা লাগবে। বড়লোক বৃষ্টিতে সুখ পায়, ঘরে শুয়ে থাকে। আমাগো তো আর তা না, রিকশা চালানোই লাগবো। বৃষ্টির মধ্যে রিকশা চালালে ভাড়ার আগের চাইতে ১০-২০ টাকা বেশি পাওয়া যায়। সেটাও যাত্রীর থেকে চেয়ে নিতে হয়।

টানা বৃষ্টির কারণে অনেকে তাদের রাস্তার পাশে থাকা চায়ের দোকান, ঝুপড়ি, খাবারের দোকান খুলতে পারছেন না। নিজের রাস্তার পাশে থাকা চায়ের দোকানের সামনে কথা হয় রিগেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দিনে চা বিক্রি করে হাজার দুয়েক টাকা ইনকাম হয়। বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ দেখছি না। দোকান খোলারও পরিবেশ নেই। দিনটাই লস হয়ে গেলো।’

তবে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে অনেকেই তাদের চায়ের দোকান খুলেছেন। তাদেরই একজন আক্তার হোসেন বলেন, ‘ঘরে বসে থাকে লাভ কী? দোকান খুলছি যা ইনকাম হয় হোক। দুই-চারশো ইনকাম হইলেও তো আমার ইনকাম হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে অনেকে ঘর থেকে বের হয় না। এ জন্য দোকানে লোকজন কম।’####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও