রূপগঞ্জে হাউজিং কোম্পানীর অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও খাল ভরাটে ভয়ঙ্কর জলাবদ্ধতা
নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ অপরিকল্পিত নগরায়ণ, হাউজিং কোম্পানীর দৌরাত্ব, পানি নিষ্কাশনের খালগুলো ভরাটের কারণে রূপগঞ্জে গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়েছে। এতে সাধারন জনগন পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
জলাবদ্ধতার কারনে অনেকে ঘর থেকেই বের হতে পারছেন না।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে তিন লাখ বাসিন্দা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এলাকার কোথাও জমেছে হাঁটুপানি। আবার কোথাও কোমর পানি। টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভা, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন, ভুলতা ইউনিয়ন, মুড়াপাড়া ইউনিয়ন, কাঞ্চন পৌরসভার অনেক এলাকা পানিতে তুলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। ফলে ঢাকার উপকন্ঠের রূপগঞ্জের তিন লাখ বাসিন্দা উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
শিল্প মালিক ও এক শ্রেনীর হতকুচ্ছিত দানবের দল নিজ স্বার্থে খালগুলো ভরাট করে যথেচ্ছা ব্যবহারে এ সমস্যার সৃষ্টি করছে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। সেই যে শুরু , আর যেন শেষ নেই। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে এনএনআই প্রকল্পের অনেক এলাকা। ফলে দূর্ভোগ চরমে উঠেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সবাই ভোটের আগে জলাবদ্বতা নিরসনের প্রতিশ্রতি দেয়। নির্বাচিত হলে কেউ আর অগ্রনীবাসীর কথা মনে রাখে না। হাসিনা গাজী মেয়র হওয়ার আগে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলো জলাবদ্ধতা নিরসন করবে। কিন্তু টানা তিনবার মেয়র থাকার পরও জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনে পয়নিষ্কাশন খালগুলো পরিষ্কার ও খনন করার জন্য কয়েক ধাপে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
হাটাব এলাকার হাকিম বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাইতে পারছে না। পানি ভাইংগা স্কুলে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাউবোর এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর হাটাব এলাকার ২০০ ফুট ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ভুলতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কারণে বরাদ্দ বাতিল হয়।
নোয়াপাড়া এলাকার সোহাগ মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে সব তলিয়ে গেছে। প্রকল্প এলাকার ভেতরে হাজার হাজার অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, ভবন, দোকানপাট নির্মাণ করার কারণে সমস্যা বেশি হচ্ছে। খালগুলোও ভরাট হয়ে গেছে।
রূপসী এলাকার পারুল আক্তার বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই আমাদের ভয় লাগে। কারণ টানা বৃষ্টি হলেই এলাকা পানির তলে তলিয়ে যায়।
সরজমিনে অগ্রনী সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জলাবদ্বতা চোখে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অতি বৃষ্টির কারনে অগ্রনীর অনেক এলাকা পানিতে ডুবে গেলেও মুড়াপাড়া বানিয়াদীস্থ পাম্প হাউজের পাম্পগুলো পানি নিষ্কাশনের জন্য চালু করা হয় অনেক দেরিতে। বড় বড় ড্রেনের মুখ খুলে দিলেও সংস্কার না হওয়া বাধের ক্যানেল গুলোর মুখ আবর্জনা জমে বন্ধ থাকায় পানি যেতে পারে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে ৯০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ- নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপারের পাঁচ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ হওয়ার কয়েক বছর বাদেই এখানে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দুর্ভোগও। স্থানীয়রা বলেন, নব্বইয়ের দশকের পর নিয়মবহির্ভূতভাবে অগ্রণীর ভেতরে মিল-কারখানা গড়ে উঠলে অগ্রণী পরিণত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ চরমে ওঠে মানুষের। বসতি আর কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফিবছর বাড়ে জলাবদ্ধতাও। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সবাই ভোটের আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচিত হলে কেউ আর অগ্রণীবাসীর কথা মনে রাখেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাউবোর জনৈক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের পাম্পগুলো বিদ্যু থাকাকালীন সার্বক্ষনিক চালু থাকে। তবে ক্যানেল ও সাব ক্যানেল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ রকিবুল আলম রাজীব বলেন, আমাদের পাম হাউসগুলো অনবরত চলতেছে । পাম হাউজ গুলোর ক্যাপাসিটি কম থাকার এবং পুরনো থাকার কারণে একটু দেরি হচ্ছে, খুব শিগগিরই কমে যাবে। আমাদের ক্যানেলগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে। এব্যাপারে খুব শীঘ্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। খুব শীঘ্রই পানি কমে যাবে। যদি কোন ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে নিষ্কাশনের জায়গা বন্ধ করে রাখলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্যানেলগুলো ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। ক্যানেলগুলো সংস্কার করা জরুরি।###