জৌলুশময় রাতের বাণিজ্যমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সমাগম

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ “লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে, বাণিজ্য মেলায় আইয়্যা আমার মনের আশা পুরাইছে” এমনি করে গানে গানে বলেন ডেমড়া থেকে আগত ছোট্ট নীল ঝড়া। তিনি আরো বলেন, ছোট্ট বলে ঢাকায় বাণিজ্য মেলায় কেউ নিয়ে যেত না। আমাদের বাড়ির কাছে পূর্বাচলে আম্মুর সাথে জীবনের প্রথম মেলায় আসলাম। মনডা ভরে গেছে। তার সাথে আছেন ছোট্ট আরাফ খান। তিনি বলেন, “আমার স্বাদ না মিটিল, আশা না পুরাল, বাণিজ্য মেলায় আসিয়া সবই পূরন অইল।”
ঢাকার রামপুরা বন্শ্রীতে থাকেন সূচনা ও আলমগীর। দু’জনই সরকারী চাকরী করেন। সারাদিনই ব্যস্ত থাকেন। অবসর শুধু রাতের বেলা টুকুই। তাই শীত উপেক্ষা করেই চলে আসেন বাণিজ্য মেলায়। কথা হয় তাদের সাথে। তারা বলেন, পূর্বাচলের বাণিজ্য মেলায় এবারই প্রথম আসলাম। সারাদিন সময় পাই না, তাই রাতের বেলায়ই দু’জন চলে আসলাম। ঘুরে ফিরে দেখতেছি , চা নাস্তা খাচ্ছি। লাল নীল আলো জ¦লছে। আলোকসজ্জায় জৌলুশময় লাগছে মেলাকে। অনেক নতুন আইটেম আসছে। দেখি পছন্দ হলে কিনে নিব।
মালিবাগ থেকে এসেছেন খায়ের ও তানিয়া দম্পতি। তারা বলেন, দিনের চেয়ে রাতের মেলাই বেশি ভাল। পরিবেশটা অনেক উপভোগ্য। তবে ঠান্ডাটা একটু বেশি তাই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ঠান্ডা কমে গেলে রাতেই বেশি জমবে বাণিজ্য মেলা। কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করি, তারপর পছন্দের কিছু কেনাকাটা করে বাসায় রিফব।
আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলার ১৪তম দিন চলছে। প্রথমে উপস্থিতি কম থাকলেও ধীরে ধীরে সমাগম বাড়তে শুরু করেছে। ব্যবসায়িরাও আশাবাদী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে মেলা শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বাণিজ্যমেলা।
তবে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর রাত অবধি মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ভিন্নচিত্র দেখা গেছে। এদিন সরকারি ছুটির দিন না হলেও মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল দেখা যায়। ঢাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি মেলায় ভিড় করছেন পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা। তুলনামূলক কাছে হওয়ায় পূর্বাচলের এ মেলায় নারায়ণগঞ্জের মানুষ স্বপরিবারে ঘুরতে আসছেন।
বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ে। বিক্রেতাদেরও ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। তবে এখানো পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মেলায় স্বপরিবারে ঘুরতে এসেছেন রাকিব নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘মেলা শুরুর পর থেকে পরিবারের সবাই আসতে বায়না ধরেছে। অফিসের কাজের চাপে আসতে পারছিলাম না। আজ অফিস শেষে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে এলাম। কিছু কেনাকাটা আছে। পাশপাশি বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছি। পরে আবার আসলে কেনা হবে।’
সাজিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সন্ধ্যার দিকে মেলা বেশি জমজমাট থাকে। প্রচুর আলোকসজ্জাও করা হয়। এটা দেখতেও ভালো লাগে। এজন্য সন্ধ্যার দিকে বন্ধুর সঙ্গে মেলায় এসেছি। ঘুরে ঘুরে দেখছি। আজকে লোকজনও বেশি।
ব্যবসায়ী হাসান মাহমুদ স্বপরিবারে মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমার প্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের চাপ বেশি থাকে। এজন্য ওই সময় মেলায় ঘুরতে আসা হয় না। সন্ধ্যার পর পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি।’
মেলায় স্টল থাকা বিক্রেতারা জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেলায় মানুষের আনাগোনা কম। বিকেলে ভিড় বাড়ে। সন্ধ্যায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বেশি থাকে। তবে এখনো পুরোদমে কেনাবেচা শুরু হয়নি। শীত কিছুটা কমলে হয়তো আরও বেশি মানুষ মেলায় আসবে। তখন কেনাবেচাও বাড়বে।###