এক হাত দিয়ে আলতাবের মাথায় পানি দিচ্ছি আর এক হাত দিয়ে পাকবাহীনির দিকে গুলি চালাচ্ছি

ডিসেম্বর ১৬ ২০১৮, ১৫:৫১

Spread the love

নাঈম ইসলাম :  আলতাব আমার পাশেই পাকবাহীনির সাথে যুদ্ধ করতেছিল।পাকবাহীনির গুলি পাল্টা আমাদের গুলি চলছিল।হটাৎ পাকবাহীনির গুলি এসে আলতাব এর বুকে,আলতাব মৃত্যুর মুখে,এক হাত দিয়ে ওর মাথায় পানি দিচ্ছি আর এক হাত দিয়ে পাকবাহীনির দিকে রাইফেলের গুলি চালাচ্ছি। এভাবেই চোখের পানি ঝড়িয়ে যুদ্ধের ঘটনা বলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্ মালেক শিকদার।দিনটি ছিল এপ্রিল মাসের রবিবার দিন।দেশ স্বাধীন করার ইচ্ছায় যোগ দেই মুক্তিযোদ্ধায়।মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং নিতে বরিশাল থেকে যেতে হয়েছিল ভারত।ভারত এর উদ্ধেশ্যে প্রথমে যাই ধামরাই।সেখানেও পরতে হয় অপয়ারেশনে।এরপর বড় বিপদে পরি যশোরে।পাঁচ দিনে কিছুই খাইনি খুব ক্লান্ত।পানির পিপাষায় কাতর আমরা ৮১ জন।এসময় এক যুবক পানি আনার কথা বলে বশিয়ে রাখে এক কবর স্থান এর পাশে।ঠিক সেই মহুর্তে এক মহিলা এসে রাগী গলায় বলে ওই ছেলে আপনাদের মারার জন্য পাকবাহীনির কাছে খবর দিতে গেছে।পানি নাখেয়েই পিপাষা নিয়ে সেখান থেকে সরে যাই অন্য কোথাও।এরি মধ্যে শব্ধ শুনতে পাই পাকবাহীনির গাড়ির আওয়াজ।হয়ত খবর টা পেয়ে সরে আসতে পেরেছি নয়ত তখনি শেষ হতে হত নরপশুদের হাতে।এভাবে হেটে হেটে বন জঙ্গল পারি দিয়ে বারাচার দিয়ে প্রথমে টাকিতে পৌছাই।এটাই ছিল বরিশালের প্রথম ব্যাচ।ওই যায়গার মানুষগুলো আমাদের অনেক সাহায্য করেছে।অনেক কষ্টও করেছে আমাদের জন্য।এরপর বশিরহাট গিয়ে ধমধমের ট্রেন ধরি।তখন ঝড় ছিল অনেক তাই সিগনেল পাওয়া যায়না, অপেক্ষার পরে গিয়ে ধমধম পৌছাই।সেখান থেকে আমরা দলে দলে ভাগ হয়ে যাই বিয়ার চাকুলিয়া আবহাওয়া ছিল আমাদের অনুকুলে এরি মধ্যে ২৬ দিনের ট্রেনিং শেষে পাঠাইলো পশ্চিম বাংলায়।সেখানে গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং করি এর মধ্যে রাইফেল লোড আনলোড করতে গিয়েই মারাও গেল এক ট্রেনিং প্রাপ্ত মুক্তিবাহীনি।এরপর ট্রেনিং শেষ করে শপথ বাক্য পাঠ করে বাংলাদেশের বরিশাল উদ্ধেশ্যে হাসানাবাদ থেকে নৌকায় উঠি।৮ দিনের খাবার দিয়ে পাঠানো হয় আমদের।এরি মধ্যে পাকবাহীনির কাছে খবর যায় আমাদের কথা।যার কারনে আমরা সুন্ধরবন অবস্থান নেই যেখানে থাকতে হয় একুশ দিন আর খাবার দিয়েছে আট দিনের কষ্ট করে কম খেয়েও একুশ দিন কোনরম চালাই।অনেকে ক্ষুদায় ইরি ক্ষেতের পানি ও খেয়েছে আমদের মধ্যে অনেকে।এরি মধ্যে আমাদের গানবোটে হামলা চালায় পাকবাহীনি।কৌশলে কোনরকম পার হই সুন্ধরবন থেকে।একুশ দিন পরে খুলনার এক খাল পেরিয়ে বরিশালে পৌছিয়ে আমরা বাখেরগঞ্জ অবস্থান নেই।এদিকে বাখেরগঞ্জ থানায় আমাদের খবর চলে যায় আমাদের কথা।ওরা বরিশাল থেকে আরো চারশ মিলিটারী নিয়ে রাখে।রাতে আমাদের উপর হামলা চালায় আমরাও প্রস্থুত।দলে দলে ভাগ হয়ে যে যার মত অবস্থান নেই।আমদের পালটা গুলিতে ওরা পিছু হাটতে বাধ্য হয়।এভাবেই শুরু হয় আমাদের ট্রেনিং এর পর ১ম অপারেশন।পরে বুখইনগর গিয়ে মাঝের চরে আমরা অবস্থান নেই।এখান থেকেই আমাদের টিম অপারেশন চালাই বরিশালের বিভিন্ন স্থানে।মেহেন্দিগঞ্জ,আরিয়ালখা,সাতমাইল,ঝুনাহাড় সহ বিভিন্ন যায়গায়।সাতমাইলে শহীদ হয় আলতাব।সাতমাইলে অবস্তান নেয়ার সময় পানির পিপাষায় আখ ক্ষেত থেকে আখ খেতে যায় আলতাফ।হটাৎ পাকবাহীনির তিন গাড়ী এসে আক্রমন চালায় আমাদের উপর।এরি মধ্যেও আমরা প্রস্তুত হয়ে অবস্থান নেই ওদের বিপক্ষে।অবস্থান নিয়ে আমরাও পালটা গুলি চালাই।আমার পাশে থাকা আলতাফ ও গুলি চালায় পাকবাহিনীকে লক্ষ করে।হটাৎ পাকবাহীনির গুলি এসে আলতাফ এর বুকে লাগে,ঢলে পরে মৃত্যুর মুখে।নেক চেষ্টা করেও বাচাতে পারিনি আলতাফকে।বরং ওর মৃত্যুর আহাজারী দেখেও কিছুই করতে পারিনি তখনো রাইফেল দিয়ে গুলি চালতে হয়েছিল নরপশুদের ঘায়েল করতে।এভাবেই পাশের মানুষদের হারিয়েও যুদ্ধ চালাতে হয়েছে দেশটাকে স্বাধীন করতে।কষ্টের কোন কথা বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক সিকদার এর কাছে জানতে চাইলে চোখের পাশ দিয়ে পানি বেরিয়ে এসে মুচকি হেসে একটাই কথা বলে আমদের আর কষ্ট কে দিবে কষ্টের এই প্রতিদান।৪/৫ দিন না খেয়ে সুধু ভাতের মার খেয়ে ,পচা পানি খেয়ে এ দেশটাকে স্বাধীন করেছি তোমাদের জন্য।এখন এ স্বাধীনতা রক্ষা করাটা তোমাদের হাতেই।শুধু এই কাজটাই চাই তোমাদের কাছে।তাহলেই ভুলে যেতে পারবো সেই কষ্ট আর ত্যাগের কথা।আর কিছুই চাইনা তোমাদের কাছে আর এই দেশের কাছে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও