জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রূপগঞ্জের গরীবের গোস্ত সমিতি

মে ০৬ ২০২১, ১২:০২

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ঈদকে কেন্দ্র করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মাংস সমিতি’ বা ‘গরু সমিতি’। উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় এ বছর ১০০০’র বেশি সমিতির কার্যক্রমে গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণ করছে।

সারাবছর একটু একটু করে সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন মাংস সমিতির সদস্যরা। এতে করে ঈদে গরিব মানুষ বাড়তি আনন্দ পান এবং তাদের আর্থিক চাপও কমে যায়। রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, পাড়া বা মহল্লায় ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ ধরনের মাংস বা গরু সমিতি গঠন করা হয়। শুরুতে শুধুমাত্র নিম্নবিত্ত মানুষেরা এ ধরনের সমিতি করলেও এখন মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরাও মাংস সমিতি করছেন।

মাংস সমিতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দশ-বারো বছর আগে দুই একটি গ্রামে পেশাদার মাংস বিক্রেতারা পরীক্ষামূলকভাবে এ ধরনের সমিতি চালু করেছিল। কসাইদের দেখানো পথে অনেকেই হেঁটেছেন। প্রতিবছর বাড়ছে মাংস সমিতির সংখ্যা। এ বছর রূপগঞ্জ উপজেলার ৩১৬টি গ্রামে সমিতির সংখ্যা ১ হাজারেরও বেশি বলে জানা গেছে। প্রতিটি মাংস সমিতির সদস্য সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০ জন। প্রত্যেক সদস্য সপ্তাহে বা মাসে চাঁদা জমা দেন। ঈদুল ফিতরের দুই একদিন আগে জমা করা টাকায় গরু বা ছাগল কিনে এনে জবাই করে সদস্যরা মাংস ভাগ করে নেন। তবে চামড়া বিক্রির টাকায় পরের বছরের জন্য তহবিল গঠন করে সমিতির কার্য

লোকে বলে গরীবের গোস্ত সমিতি এখন ধনীরাও করে। আনাস মিয়া। ছাত্র মানুষ। টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালান। সংসারের নিয়মিত খরচ বহন করার পর একসাথে ৫/৭ হাজার টাকার গোস্ত কেনার সামর্থ্য তার নেই। তারওপর করোনা আর লকডাউন তো আছেই। তিনি বলেন, “ অনেকের দেখাদেখি আমিও গরীবের গোস্ত সমিতিতে নাম লেখাইছিলাম। সপ্তাহে একশত টাকা করে সমিতিতে জমা দিতাম। গায়ে তেমন একটা বাজত না। করোণাকালে একলগে পাঁচ হাজার টাকার গোস্ত কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য অনেকেরই নাই। সামনে ঈদ। বাড়িতে পোলাপান আছে। গোস ছাড়া কি চলে। আজ সমিতি থেকে দশ কেজি গোস্ত পাইলাম , খারাপ কি”।

লোকে বলে গরীবের গোস্ত সমিতি। এখন ধনীরাও করছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গরিবের ‘মাংস সমিতি’। এখন গরীব, মধ্যবৃত্তের পাশাপাশি ধনীরাও এ সমিতির সদেস্য হচ্ছেন। সমিতির মাধ্যমে ১০/১২ কেজি মাংস পেয়ে এবারে ভালোভাবেই কাটবে ঈদ- এমনটাই প্রত্যাশা সমিতির সদস্যদের। সমিতির সদস্য খামারপাড়া গ্রামের দিনমজুর সফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। ঈদে পোলাপানগো জামা কাপড় দিতেই সব টেকা শেষ। কোন মতে চিনি সেমাই কিনি (ক্রয় করে)। মাংস কেনার টাকা পাবো কোথায়? কিন্তু সমিতি কইরা এইবার ১০/১২ কেজি গরুর মাংস পাবো। পোলাপানরে মাংস খাওয়াইতে পারব।” একই গ্রামের ফজুল হোসেন, মারতুজা ও আমির হোসেন জানান, মাংস সমিতির মাধ্যমে নিজেরা গরু কিনে এনে ভালো মাংস পাওয়া যায়। খরচও কম পড়ে।

তবে চামড়া বিক্রির টাকায় পরের বছরের জন্য তহবিল গঠন করে সমিতির কার্যক্রম চলে।রূপগঞ্জ কায়েতপাড়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ ফজল মিয়া, মারতুজা কামাল ও ফয়সাল একটি মাংস সমিতি গঠন করেছিলেন। মূল উদ্যোক্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, প্রথমে তাদের সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ছিল ২১ জন। প্রত্যেকে সপ্তাহে টাকা জমা দিতেন। বছর ঘুরে সমিতিতে জমা হয় ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে গরু কিনে এনে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের ভাগে দশ কেজি করে মাংস পড়েছে। তাদের এলাকাতেই এ ধরনের অন্তত ছয়টি সমিতি রয়েছে। উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে এই গরু সমিতি।

শবে কদরের দিন থেকে শুরু হয় সমিতির গরু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত। এ ব্যাপাওে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন, চমৎকার একটা ধারনা এটা। ধনী গরীব কোনো বিষয় না। একশ’ টাকা সপ্তাহে দেয়া কারো জন্যই তেমন কঠিন বিষয় না। ৫/৭ হাজার টাকার গোস্ত একসাথে ঈদের সময় কেনা একটা বাড়তি চাপই বটে। রূপগঞ্জের এ বিষয়টা আমার অনেক ভাল লেগেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় এটা শেয়ার করব। দারুন একটা আইডিয়া। উদ্ভাবককে ধন্যবাদ।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও