নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে খাল খননের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

মে ২১ ২০২১, ১৭:৪১

Spread the love

রাজু আহমেদ,নেত্রকোনা প্রতিনিিধিঃ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সাত কিলোমিটার (৭.৪৮ কিলো) দৈর্ঘ্যের খাল

খননের কাজে শিডিউল মেতাবেক কাজ না করে দায়সারাভাবে  মাটি  কেটে কাজ শেষ করেছে ঠিকাদার। এর পাশাপাশি খনন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে তাদের মাছ ধরার সুবিধার জন্য খালে বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ দেওয়া, পাড় কেটে হাওরের সাথে সংযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, পাউবো’র তত্ত্বাবধানে উপজেলার ডিঙাপোতা হাওর এলাকার মল্লিকপুর জিরো পয়েন্ট থেকে আদর্শনগর পর্যন্ত সাত কিলোমিটার (৭.৪৮ কিলো) খালটি খনন করা হচ্ছে। তিন কোটি তিন লাখ ৪৮ হাজার টাকা বরাদ্দের এ কাজের ঠিকাদার নেত্রকোনার অসিম সিং নামের এক ব্যক্তি। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মোহনগঞ্জের ডিংগাপোতা হাওরের অভ্যন্তরে খাল পুনঃখনন ও ফসল পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন শীর্ষক এ প্রকল্পের উদ্বোধন করে স্থানীয় সাংসদ রেবেকা মমিন। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে মল্লিকপুর, গোড়াউতরা খাল খননসহ বেশ কয়েকটি রাস্তার উন্নয়ন কাজ করা হবে।

নলজুরি গ্রামের সবুজ মিয়া ও হাটনাইয়া গ্রামের হোসেন শুভ বলেন, খনন সংশ্লিষ্টরা স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে খালের কিছুটা পরপর নতুন নতুন বাঁধ দিয়েছে। পুরনো বাঁধগুলোও কাটেনি। পাশপাশি হাওর থেকে মাছ প্রবেশের জন্য খালের বিভিন্ন অংশের পাড় কেটে দেয়া হয়েছে। আর কোন কোন অংশ আগে থেকেই গভীর ছিল। সেখানে একেবারেই খনন করা লাগেনি। কিন্তু কাজের বিল তো ঠিকই নিবে। খনন কাজের এমন অনিয়মে ঠিকাদারের পাশাপাশি পাউবো কর্মকর্তারাও জড়িত বলে তারা মনে করেন।

সরেজমিন ঘুরে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দেখা গেছে, প্রকল্পে ঠিকাদারের হয়ে কাজের বাস্তবায়ন করছেন সাইট ম্যানেজার স্থানীয় তহিরুল ইসলাম ও রতন মিয়া নামে দুই ব্যক্তি। তারা জানান, খনন কাজ শেষ এখন মাপা হচ্ছে। এ সময় তাদের সাথে পাউবো’র কার্যসহকারি নাদের খন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে খননের মাপ নিচ্ছেন মনির নামের ঠিকাদারের নিজস্ব একজন সার্ভেয়ার। এ কাজ তো পাউবো’র সার্ভেয়ার দিয়ে করার কথা তবে সেই জায়গায় আপনি কেন ? এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেননি মনির।

জবাব কেড়ে নিয়ে পাশে থাকা তহিরুল ইসলাম বলেন, এই কাজের ঠিকাদার নেত্রকোনার অসিম সিং ও রাজু ভাই। রাজু ভাই ঠাকুরাকোনার একটি স্কুলের শিক্ষক। সব কাজ তারা একসাথে মিলেই করেন। তবে অসিম সিং বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাই রাজু ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। আমরা শুধু কাজের দেখাশোনা করছি। এ সময় তহিরুল উপজেলার একজন নেতাকে ফোন দিয়ে সাংবাদিকের বিষয়ে অবগত করেন। পরে অপরপ্রান্ত থেকে এ বিষয়ে আশ্বাস পেয়ে স্বস্তি পান তিনি।

কাজের প্রকৃত ঠিকাদার অসিম সিং ভারতে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। কাজের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজু বলেন, যেমন পেরেছি তেমন কাজ করেছি। সেই হিসেবেই বিল নেব, খালের খনন বিষয়ে টেন্ডারে আসলে কি উল্লেখ আছে জানতে চাইলে পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অমিতাব চৌধুরী জানান, প্রকৃত কোন দৈর্ঘ্য প্রস্ত উল্লেখ নেই। কোন অংশে দশ ফিট, আবার কোন অংশে ৫ ফিট খনন করতে হচ্ছে। আসলে পুরো বিষয়টা নির্ভর করছে খালের অবস্থা বুঝে।

খনন সঠিকভাবে হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, বাড়ি ঘরের যে অংশটুকুতে সমস্যা হয়েছে সেটা ওখানকার মানুষের জন্য। বাড়ি ঘরে মটি চলে যাবে সেকারণে তারা মাটি কাটতে সম্যসা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ওরা নিজস্ব সার্ভেয়ার দিয়ে হয়তো তারা কতটুকু কাজ করেছে সেই পরিমাপটা জেনেছে। আমরা আমাদের সার্ভেয়ার দিয়ে মাপ দিয়ে ঈদের আগেই রিপোর্ট ঢাকা পাঠিয়েছি। সেখান থেকে আবার পরিদর্শন টিম আসবে, পরে বিল হবে। যতটুকু কাজ করবে সেই অনুযায়ী বিল পাবে। এ কাজে কোন ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই।

তবে ঠিকাদারের পার্টনার রাজুর বক্তব্যর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এটিকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলেন তিনি। পাইবো’র জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, বাড়ি-ঘরের আশপাশে একটু অংশ ছাড়া খালের বাকি সবটুকুই খুব ভাল খনন হয়েছে, বাড়ি-ঘরের জন্য খালের পাড়ে মাটি রাখার জায়গা ছিল না, আর স্থনীয়দের সমস্যার কারণে ওখানে ভালভাবে খনন করা যায়নি। তা না হলে সবটুকু ভাল কাজ করে কয়েকশো মিটার জায়গায় কেন অনিয়ম করবে। তবে খনন কাজের রিপোর্ট ঢাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খালে বাঁধ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ অভিযোগ মিথ্যা। নতুন করে বাঁধ দেওয়া হয়নি। মানুষ চলাচলের জন্য কিছু রাস্তা আগে থেকেই ছিল। চলাচলের সুবিধার্তে ধান কাটার মৌসুমে এগুলো কাটা হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ খনন কাজের সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্বে থাকা পাউবো’র উপজেলা শাখার কার্যসহকারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খনন কাজের মাপ ঈদের আগে শুরু হয়। সামনে ঈদ চলে আসায় পুরোটা মেপে শেষ করা যায়নি। ঈদের পর এখন আবার মাপ শুরু হবে। পরে এটি ঢাকা পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে মোহনগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে পাউবো’র কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবো। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও