পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ, মধু মাসে চাহিদার সাথে বাড়ছে সরবরাহ

মে ৩১ ২০২১, ১২:৫১

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ জৈষ্ট্য মাস মধু মাস। এ মাসের বাংলার রসালো সকল ফল পাকে। বাজারেও পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যায়। আম, কাঠাল লিচুর সাথে জামও আছে এ মাসেই। বাটি ভর্তি মাখানো জাম খেতে যেমন সুস্বাধু, তেমনি স্বাস্থ্যকরও। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের মামার বাড়ি কবিতার ‘পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ, ছোট বেলায় কবিতার এই পংক্তির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। আর রূপগঞ্জের ইছাপুরা, পর্শি, বাগবেড়সহ বর্তমান পূর্বাচলের বিভিন্ন এলাকা বিখ্যাত ছিল এক সময় এই কালো জামের জন্য। গ্রাম গঞ্জের বাসা বাড়ি থেকে শুরু করে পথে ঘাটে, হাটবাজারে ও সড়ক মহাসড়কে ছিল জাম বাগানের সারি।

আমাদের দেশে প্রধানত দুই জাতের জাম পাওয়া যায়। জাত দুটি হলো ক্ষুদি জাত- খুব ছোট এবং কালোজাম – বেশ বড় ও মিষ্টি। জাম গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত হয়। ভালো মানের আসবাব ও ঘরের জানালা-দরজা তৈরিতে জাম কাঠের কদর বেশি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসন চাহিদা পূরন, পূর্বাচল নতুন শহর স্থাপন ও বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানীর আবাসন প্রকল্পের জন্য নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসের কারণে জাম গাছ আজ হারিয়েই যেতে বসেছে। মধুমাসের মৌসুমী ফলের বাজারে এখন প্রচুর কালো জাম দেখা যাচ্ছে। ফেরিওয়ালারা স্কুল কলেজের সামনে বাসস্ট্যান্ডে ফেরি করে বিক্রি করে কালো জাম। বড় বড় গাছ ও বাগান কেটে সাফ করে ফেলায় এখন এই কালো জামের উৎপাদন কিংবা ফলন কমে গেলেও একেবারে হারিয়ে যায়নি।

নগরপাড়া বাজারে কথা হয় মৌসুমী ফল বিক্রেতা আবুল সরকারের সাথে। তিনি বলেন, ইছাপুরা এলাকার জামের কথা বলতে হয় না। নাম শুনেই মানুষ কিনে নেয়। দামও ভাল । বেচাকিনিও ভাল। পুষ্টিকর কালো জামের নানা গুনাগুণের কথা উল্লেখ রয়েছে চিকিৎসাশাস্ত্রে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, জিংক, কপার গ্লকোজ, ডেক্সট্রোজ, ফ্রুকটোজ, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারসহ নানা উপাদান। কালো জাম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। প্রথম দিকে ফলটি সবুজ, পরে হালকা বেগুনি ও পাকার পর কালো রং ধারণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় কালোজামের ব্যাপক কদর রয়েছে।

সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জাম গাছে ফুল ধরে এবং মে-জুন মাসে ফল পাকে। অন্যসব ফলের তুলনায় জামের স্থায়িত্বকাল কম। মে মাসের শেষ দিকে জাম বাজারে নামে এবং প্রায় এক মাসেই ব্যাপক চাহিদার ফলটি শেষ হয়ে যায়। মৌসুমে কালো জামের সাথে লবন মিশিয়ে ভর্তা করে খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে ঘরে ঘরে। বর্ষায় ভারী বৃষ্টিতে পাকা জাম তেলচে কালো চকচকে রং ধারণ করে বলে এর চাহিদা বেড়ে যায়।

রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেহা নুর জানান, জাম একটি পরিচিত ফল। জামের রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপকহারে জাম গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। স্থানীয় ভালো জাতের বীজ নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করে বা এক বছর বয়সের চারা রোপণ করে জামের আবাদ করা যায়। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কাউছার আহমেদ মেহেদী বলেন, “জাম মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল। মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য জাম অনেক উপকারী। কারণ জাম ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও গর্ভবতী মা, শিশুদের জন্যও এই ফল ভীষণ উপাদেয়। জামের ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তিকে করে শক্তিশালী।” বিশিষ্ট কবিরাজ মো. নায়েব আলী জানান, জামের কচিপাতা পেটের পীড়া নিরাময়ে সাহায্য করে। জামের বীজ গুড়া করে বহুমুত্র রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বিট লবণ মাখিয়ে পাকা জামের রস খেলে অরুচি, পাতলা পায়খানা ও বমিভাব দূর করে।###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও