দুবাইয়ে নারী ট্যাক্সিচালক শিউলি আক্তারের জীবনের গল্প

অক্টোবর ২৬ ২০২২, ১৩:৪৪

Spread the love

আনোয়ার হোসেনঃআরব আমিরাতের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক শহর দুবাইয়ে বাংলাদেশি প্রথম নারী ট্যাক্সিচালক হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার শিউলি আক্তার। প্রায় ৮ বছর ধরে দুবাইয়ের রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থার (আরটিএ) একজন স্থায়ী।

ট্যাক্সিচালক হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম আর সংস্থার আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখায় পরপর ৪ বার আরটিএ’র সফল কর্মী হিসেবে সম্মাননাওপেয়েছেন শিউলি আক্তার। তবে এত অর্জন ও সাফল্যের মধ্যেও নিজের সন্তান, স্বজন, পরিবার এবং দেশের মায়ায় ফিরতে চান বাংলাদেশে। দুবাইয়ের মতো বাংলাদেশেও যদি নারী গাড়ি চালকদের জন্য কোনো ভালো চাকরির সুযোগ থাকলে শিউলি আক্তার দেশে ফিরতে চান।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২২) বিকেলে দুবাইয়ে নিজের ট্যাক্সিতে বসে শিউলি আক্তার জানান, ২০১৪ সালের আগে তিনি দেশে পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

২০১৪ সালের প্রথমদিকে এই ব্যবসায় বড় ধরনের
লোকসানের মুখে পড়ে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে যান। অর্থ, বিনিয়োগ সব হারিয়ে কি করবেন, কোথায় যাবেন কিছুই যখন বুঝে উঠতে পারছিলেন না, তখন দুবাইয়ে অবস্থানরত তার ভাই দুবাইয়ে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা আরটিএ-তে নারী ড্রাইভার নিয়োগের বিষয়টি জানান। এরপরই পাল্টে যায় তার জীবন।

শিউলি বলেন, ‘তখন পর্যন্ত আমার ড্রাইভিংয়ের কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না। ট্যাক্সি ড্রাইভার হবো কখনো কল্পনাও করিনি। পরিস্থিতির কারণে ভাইয়ের পরামর্শে দেশ থেকে ড্রাইভিংয়ের বেসিক নলেজ নিয়ে দুবাই চলে আসি। দুবাই এসে আরটিএ’র প্রশিক্ষণ একাডেমিতে ভর্তি হই। এখানে নিজ খরচে প্রায় ৬ মাস ড্রাইভিংয়ের নিয়ম-কানুন এবং গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ শেষ করি। তিনি জানান, প্রশিক্ষণ শেষে ২০১৫ সালের প্রথমদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথমবারেই সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন শিউলি।

তিনি বলেন, এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পরও প্রথমবারে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অনেক কঠিন। তবে আমি প্রথমবারেই এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। ২০১৫ সালের মার্চে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পর এপ্রিল মাসেই আরটিএ’র ট্যাক্সিচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি।এখানে নারী ট্যাক্সিচালক হিসেবে ভালো সুযোগ সুবিধা পাই। প্রতিদিন আমাদের ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে সার্ভিস দিতে হয়। দুবাই থেকে ওমান বর্ডার, সৌদি আরবের সীমান্ত পর্যন্ত মাঝে মাঝে ১০/১২ ঘণ্টাও টানা ড্রাইভ করতে হয়। তিনি জানান, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর দুবাই শহরে ট্যাক্সি চালালেও কখনো কোনো ধরনের সমস্যা বা বিপদের মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে।

সফল গাড়ি চালনা, নির্ভুল ড্রাইভিং, কাস্টমার সার্ভিস, কোম্পানির আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখায় পরপর ৪ বার শ্রেষ্ঠ কর্মীর পুরস্কার অর্জন করেন শিউলি আক্তার।

শিউলি বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় সংস্থার ট্যাক্সিচালক হিসেবে ভালো আয় থাকলেও দুবাই অনেক এক্সপেন্সিভ শহর। এখানে জীবন যাত্রার ব্যয় অনেক বেশি। বিশেষ করে আবাসন এবং অন্যান্য খাতে প্রতি মাসে আয়ের বড় অংশই খরচ হয়ে যায়। ফলে পরিবার ছেড়ে একা থাকতে হচ্ছে দুবাইয়ে। শিউলি আক্তার জানান, দেশে তার স্বামী ও ১১ বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে। আছেন মা বাবা। তাদের ছেড়ে সুদুর মরুর দেশে একা বসবাস করা অনেক কষ্টের।

তিনি জানান, দুবাইয়ে ট্যাক্সিচালক হিসেবে পেশা পরিবারের সবাই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করলেও দেশে ফিরতে চান তিনি। শিউলি আক্তার বলেন, এখানে যত বেশি টাকা আয় করি না কেনো দেশের প্রতি মায়া, পরিবার স্বজনদের যে ভালোবাসা সে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই দেশে যদি আমাদের মতো নারী ড্রাইভারদের জন্য কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকতো তাহলে আমি দেশে ফিরে যেতাম।শিউলি বলেন, আমি শুনতে পেরেছি, দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করবে যেগুলোতে চালকও থাকবে নারী।

এছাড়া সরকারি কোনো সংস্থা বা বিদেশি এনজিওসমূহে যদি নারী ড্রাইভারদের সুযোগ দেয় তাহলে আমি দেশে ফিরে কাজ করতে চাই। শিউলি বলেন, আমি আগামীতে ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্সও পেতে যাচ্ছি। দুবাইয়ে প্রায় ৮ বছরের ড্রাইভিং অভিজ্ঞতায় আমার কোনো এক্সিডেন্ট রেকর্ড নাই। ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কোনো রেকর্ড নাই। আমি আমার কাজের প্রতি সব সময়ই সচেতন। আমার দক্ষতা, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমি আমার দেশে কাজ করতে চাই।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও