চাল বিক্রেতা থেকে চনপাড়ার অপরাধ জগতের ‘ডন’ বজলু

নভেম্বর ২৩ ২০২২, ১৪:৩১

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখনঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তির ‘ডন’ বজলুর রহমান ওরফে বজলু চেয়ারম্যান র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। আর নড়ে চড়ে বসেছে তার শেল্টারদাতা রূপগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা।

আজ থেকে ১৫ বছর আগে মাথায় করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেজি দরে চাল বিক্রি করতেন আলোচিত চনপাড়া বস্তির মাদক কারবারীদের ‘ডন’ বজলুর রহমান বজলু। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে রাজনীতির ডালে চড়ে বদলে যায় তার শ্রমিক জীবন।

মাদককে পুঁজি করে রাজনীতির পিঠে চড়ে বজলু এখন বাড়ি, গাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার মালিক তিনি। হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্র্ডের (চনপাড়া এলাকা) মেম্বার। এ যেন আলাদিনের চেরাগকেও হার মানায়। কিন্তু রূপগঞ্জের প্রভাবশালী এক রাজনৈতিকের শেল্টারে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না তার। অস্ত্র-মাদকসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে বজলু ৬দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের ওই প্রভাবশালীর সাথে রূপগঞ্জে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মসুচিতে তাকে দেখা যেতো বজলুকে।
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে চনপাড়া তথা বজলুর মাদক সম্রাজ্যের তথ্য গণমাধ্যমে একে একে উঠে আসতে থাকে। এর জেরে গতকাল বজলুকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। সম্প্রতি বজলুর নির্দেশে র্যাবের মাদক বিরোধীঅভিযানেও বাধা দিয়েছিল তা সাঙ্গোপাঙ্গোরা।

রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এই বজলু এখন তিনজন গানম্যান নিয়ে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ চলাফেরা করতেন। এক সময়ের অভাবী বজলুর এখন রয়েছে পিএস-এপিএস।

চনপাড়া বস্তিতে সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- স্বাধীনতার পর পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠা চনপাড়া বস্তিতে বসবাস শুরু করে বজলুর বাবা-মা। একে একে বস্তিতেই জন্ম নেয় তারা পাঁচ ভাই দুই বোন। বস্তিতে সে সময় তার বাবা বাড়ি বাড়ি ধান ভেঙে চাল বানিয়ে বিক্রি করতেন। বাবার সঙ্গে বজলুসহ অন্য ভাইয়েরাও একই কাজ করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তির একজন প্রবীণ বাসিন্দা জানান, বজলুর বাবা মারা যাওয়ার পর এবং ক্রমেই বাড়ি বাড়ি চাউল বিক্রির ব্যবসা লোকসান হওয়ায় তাঁত শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে বজলু। কয়েক কয়েক মাস শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পর এক সময় সেই পেশাও ছাড়ে বজলু। তবে আর কোনো পেশায় স্থানীয়রা বজলুকে প্রকাশ্যে না দেখলেও দিনে দিনে বজলুর আর্থিক উন্নতি দেখছিল। এতে এলাকায় অনেকে বজলুর ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়ার দৃশ্য দেখে অবাক হতে থাকে।

এক সময় বেরিয়ে আসে বজলু কাজ না করেও কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে যাওয়ার নেপথ্যের গল্প। ২০০৫ সালে মাদকের কারবারী হিসেবে গ্রেফতার হয় বজলু। মূলত তৎকালীন বিএনপি রাজনীতিকে ব্যবহার করে সেই সময় থেকে বজলু মাদক কারবারে জড়ান। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সরকার পরিবর্তন হলেও ক্ষমতার পরিবর্তন হয়নি বজলুর। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বদলে যায় তার রাজনৈতিক পরিচয়। রুপগঞ্জের প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার ‘ডান হাত’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয় তার। এরপর থেকে পুরো চনপাড়া নিয়ন্ত্রণে নেয় বজলু।

এলাকাবাসী বলছেন, অভাবী বজলুর এখন রয়েছে টাকার পাহাড়। চনপাড়ায় বাজার এলাকার একটি তিনতলা, একটি চারতলা, একটি দোতলা এবং আরেকটি গলিতে একটি চারতলা বাড়ির মালিক তিনি। এই বাড়ির চারতলায় একটি ক্লাব বানিয়েছেন। গোপন বৈঠক হয় সেখানে। এ ছাড়া একাধিক টিনের বাড়ি ও প্লট রয়েছে তাঁর। চনপাড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি স্কুলের জায়গা দখল করে বাড়ি এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সমিতির জায়গা দখল করে বানিয়েছেন অফিস। চাঁদার দাবিতে সেখানে মানুষকে ডেকে মারধর করা এবং বনিবনা না হলে মাদক মামলায় জেলে পাঠানোর বিস্তর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। চনপাড়ার বাইরেও তাঁর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। ডেমরার সারুলিয়ার পশ্চিম টেংরার খাল পাড়ে দুটি একতলা এবং একটি তিনতলা ভবনেরও মালিক তিনি। রূপগঞ্জ পূর্ব গ্রাম পশ্চিম গাঁওয়ের বিলেও প্রচুর জমি-জায়গা কিনেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর র্যা ব চনপাড়া বস্তিতে অভিযান চালাতে যায়। সে সময় বজলুরসহ তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গ র্যা বের ওপর হামলা চালায়। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে। এ ছাড়া চনপাড়ায় মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে তাঁর সংশ্নিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে র‌্যাব।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও