বাণিজ্য মেলায় খাবারের হোটেল চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার, মান নিয়ে রয়েছে শঙ্কা

জানুয়ারি ১৬ ২০২৩, ১২:৫৬

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ পূর্বাচলে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র কওে গড়ে ওঠেছে যত্রতত্র মানহীন খাবারের হোটেল। বাহিওে দাম ও মানের কোনো হিসাবই নেই। বাণিজ্য মেলার ভিতওে খাবারের দাম অনেক বেশি। মান নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ক্রেতা দর্শনার্থীরা। রাজধানী ঢাকার কাঠাল বাগান থেকে আগত কাকলী আক্তার বলেন, মেলায় খাবারের অনেক দাম। তবে নিন্মমানের। হোটেলগুলোও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নয়। মাছি ভনভন করছে। থালা বাসনের ময়লা যত্রতত্র পড়ে রয়েছে। আনঞ্জুমনআরা নামে আরো একজন দর্শনার্থী বলেন, বাণিজ্য মেলায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। এতে ক্ষুব্ধ মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।

মেলার ২৭ তম আসর বসেছে ঢাকার অদূর রূপগঞ্জের পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়ন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারে। গত পহেলা জানুয়ারি মেলার পর্দা উঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে হিসেবে আজ ১৫তম দিন চলছে।

তীব্র শীতকে উপেক্ষা করেও ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারে মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতা সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নানা রকমের পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে। মেলার প্যাভিলিয়নের বাহিরে একপাশে রয়েছে সারি সারি সাজানো হয়েছে খাবার পরিবেশনের রেস্তোরাঁ। তবে এসব রেস্তোরাঁতে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে চড়া দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মেলায় আগত দর্শনার্থী ও ক্রেতারা।

মেলার ঘুরে জানা যায়, ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারের চেয়ে একেবারে কম ছিল দর্শনার্থী ও ক্রেতার সংখ্যা। তবে মেলার আগত শিশুদের জন্য করা শিশুপার্কে অভিভাবক ও শিশুদের সমাগম ছিল। এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট থাকার কারণে দর্শনার্থী কম হচ্ছে বলেও অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। মেলা ও মেলার আশপাশের এলাকায় ধুলাবালি আচ্ছন্ন হওয়ায় পরিবেশও হুমকির মুখে।

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন জায়েদ হোসেন খন্দকার। তিনি বলেন, মেলায় এসে শিশুদের জন্য করা শিশুপার্ক দেখে ভালোই লাগলো। শিশুরাও আনন্দ করেছে বেশ। তবে মেলায় দুপুর হয়ে যাওয়ায় খাবার খেতে হয়েছে পরিবার নিয়ে। নিম্নমানের খাবারে চড়া দাম দিয়ে খাবার খেয়ে খুব খারাপ লাগলো। এসব বিষয়ে তদারকি করার জন্য ভোক্তা অধিকারের নজর দেওয়া উচিৎ। না হয় মেলায় আসার ইচ্ছে কমে যাবে অনেকের। ভোক্তা অধিকার বলছেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কয়েকটি হোটেলে জড়িমানাও করা হয়েছে।

মেলায় আসা মইনু আহমেদ বলেন, আজকে মেলায় এসেছি মেলার পরিবেশ ও কি কি উঠেছে তা দেখার জন্য। শেষের দিকে আবার আসতে হবে কেনাকাটা করার জন্য। কারণ তখন প্রতিটি স্টলের মালামাল বিক্রি করা হয় বিশেষ ছাড়ে। সড়কে যানজট ছাড়া সব কিছুই উপভোগ করেছি কিন্তু মেলার খাবার রেস্তোরাঁ গুলোতে যে চড়া দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এতে হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই আমাদের। ওখানে মেলা কর্তৃপক্ষ দেখলাম ভোক্তা সেবার জন্য একটি স্টল করেছে ভোক্তা অধিকারের। তারা যদি ঠিক মতো খাবার রেস্তোরাঁ গুলোতে খেয়াল না করেন তবে মেলায় আগত দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সংখ্যা কমতে থাকবে।

মেলায় আসা দর্শনার্থী রূপগঞ্জ এলাকার আহমেদ হোসেন বলেন, ছুটির দিন ছাড়াও দর্শনার্থী ও ক্রেতার উপস্থিতি বেশ ভালো থাকার কথা। যানজটসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বাণিজ্য মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতা আসার আগ্রহ কমছে।

ভুলতা এলাকার সায়মা ওবায়েদ বলেন, ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা এবং ভালো পরিবেশ না থাকার কারণে ছেলে মেয়েদের নিয়ে মেলায় যেতে ইচ্ছে করে না। বিশেষ করে এর একটা কারণ হচ্ছে যানজট ও ধুলাবালি।

দাউদপুর এলাকার মিন্টু মিয়া বলেন, ছেলে মেয়েদের নিয়ে মেলায় এসেছি। নিম্নমানের খাবারের বিল নেওয়া হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ। বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে খাবার খেতে হচ্ছে। এসব বিষয় মনিটরিং করা দরকার।

ইবিপি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরে মোট ২২৫ টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হলেও এ বছর দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট ৩৩১ টি। যার মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে প্যাভিলিয়ন রয়েছে মোট ৫৭ টি। এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, হংক, তুর্কিসহ অন্তত ১২ টি দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এ আসরে বাণিজ্যমেলার প্রধান ফটক করা হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে। এই আসরে মেলার আয়তনও বাড়ানো হয়েছে অনেকটা। বাণিজ্যমেলার ২৭ তম আসর সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি কঠোরভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মেলায় প্রবেশ ফি ৪০ টাকা শিশু বাচ্চাদের জন্য ধরা হয়েছে ২০ টাকা। শারিরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মেলার প্রতিটি অংশে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, সব দিকেই আমাদের নজর রয়েছে। কোন রেস্তোরাঁতে খাবারের চড়া দাম যাতে নিতে না পারে সে জন্য আমাদের মেলার প্যাভিলিয়নে ভোক্তা অধিকারের একটি টিম সবসময় নিয়োজিত রয়েছে। এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। যানজটের বিষয়টি দেখবে পুলিশ প্রশাসন। এছাড়া ধুলাবালি মুক্ত করতে সড়কে পানি দেওয়া হচ্ছে।

রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, যেহেতু এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক উন্নয়ন কাজ চলমান সেহেতু যানজট থাকতেই পারে। আমরা যানজট মুক্ত রাখতে সব সময় পরিশ্রম করে যাচ্ছি।###

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও