সিআরবিতে না হোক অন্য যে কোন স্থানে বহুতল হাসপাতাল নির্মাণ হোক

জুলাই ১৩ ২০২১, ২১:২৭

Spread the love

মো: রনি আনোয়ার, চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ সোমবার (১২ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিশিষ্ট লোকজন মন্তব্য করেন সিআরবিতে না হোক অন্য যে কোন স্থানে বহুতল হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক।

বিবৃতি দাতারা হলেন- শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী, প্রফেসর ড. অনুপম সেন, প্রফেসর ড. সিকান্দার খান, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, প্রফেসর আবুল মনসুর, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, প্রফেসর ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর হরিশংকর জলদাস, অধ্যাপক ফেরদৌস আরা আলীম, ডা. চন্দন দাশ, নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, প্রফেসর অলক রায়, স্থপতি জেরিনা হোসেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান প্রমুখ। রাশেদ হাসান বাংলানিউজকে বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে- সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরের মাধ্যমে জানতে পারলাম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সিআরবি-সাতরাস্তার মোড় এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বহুতল হাসপাতাল নির্মাণের চুক্তি সম্পাদন করেছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। খবরটি চট্টগ্রামের আপামর মানুষকে অত্যন্ত ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। এর কারণ বহুবিধ।

হাসপাতালে স্বভাবতই অসুস্থ মানুষদের সমাগম ঘটবে যা এলাকার পরিবেশকে প্রভাবিত করবে এবং এতে সাধারণের স্বাস্থ্য, প্রাতঃ ও বৈকালিক ভ্রমণ ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে যাবে। এতে প্রবীণ নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। আমাদের দেশে একজন রোগীকে ঘিরে হাসপাতালে বহুজনের আগমন স্বাভাবিক ঘটনা। এতে এলাকার নির্জনতা তথা স্বাভাবিক পরিবেশ ক্ষুণ্ন হবে।

দেশে হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশন/ব্যবস্থাপনার উপযুক্ত দক্ষতার অভাব রয়েছে। এখানেও তার পুনরাবৃত্তিরই আশঙ্কা রয়েছে। কেননা শত প্রতিশ্রুতি ও আইনি ব্যবস্থা সত্ত্বেও এমন নজিরই দেখা যায়। এতে পুরো এলাকা ও আশপাশের অন্তত অর্ধশত খাদ্য বিপণি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।

এ প্রসঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা দরকার। সিআরবি, সাত রাস্তার মোড় ও টাইগার পাস ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালা মণ্ডিত যে এলাকাটি রয়েছে তা চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবেই গণ্য হয়। সমুদ্রবর্তী নদীবেষ্টিত এই পাহাড়ি নগর তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য যুগ যুগ ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটক, ঐতিহাসিক, রাজনীতিক ও আগন্তুকদের মনোযোগ ও প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে। এ আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র আলোচ্য নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ এলাকাটি। কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয় এটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ঐ এলাকায় ১৯৩০ সালের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহীরা অর্থসংগ্রহের জন্য অভিযান চালিয়েছিলেন, তদুপরি সিআরবি ভবনটি দেশের ব্রিটিশ বা কলোনিয়াল স্থাপত্যের বিলীয়মান নিদর্শনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি। এটি স্থাপত্যকলা ও ইতিহাসের ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব বিবেচনা থেকেই এলাকাটিকে বাংলাদেশ সরকার সংবিধানের ২য় ভাগের ২৪ ধারা অনুযায়ী ঐতিহ্য ভবন ঘোষণা করে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে।

এখানে বলা প্রয়োজন আমরা হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধী নই, কেবল একটি প্রাকৃতিক কারণে সংবেদনশীল ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের স্থানে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ অনুচিত বলে মনে করছি। চট্টগ্রামে আধুনিক হাসপাতালের প্রয়োজন আছে, তবে তা উপযুক্ত স্থানেই নির্মিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

এ নির্জন মনোরম এলাকাটিই চট্টগ্রামে বয়স্কদের প্রাতঃভ্রমণ, তরুণদের নাগরিক জীবনে হাঁপ ছাড়ার এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের বাৎসরিক কয়েকটি উৎসব পালনের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মনে রাখতে হবে অবকাঠামোগতভাবে দ্রুত বর্ধিষ্ণু এ নগরে রাজধানী ঢাকার মতো রমনা পার্ক নেই, নেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মতো সবুজ-ঘেরা কোনো বড় অঞ্চল। নগরের মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র এ একটি এলাকা।

তাই সব দিক বিবেচনা করে অবিলম্বে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ থেকে সংশ্লিষ্টদের সরে আসার অনুরোধ জানাব আমরা। অন্যথায় নাগরিক সমাজ আরও বৃহত্তর আন্দোলন ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও