অবশেষে বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়ন পূর্বাচলে, সব প্রস্তুতি শেষ

ডিসেম্বর ২৮ ২০২১, ২৩:২২

Spread the love

নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জঃ যথা সময়ে কাজ শেষ না হওয়া, হই হচ্ছে হবে তারপর করোনার থাবায় এবারও অনিশ্চয়তায় ছিল আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচলের স্থায়ী ঠিকানা। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পহেলা জানুয়ারি থেকে প্রথমবারের মতো রূপগঞ্জের রাজউক পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলায় ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি ২২৫টি কোম্পানিকে স্টল বরাদ্দ দিয়েছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। এবার মেলায় যাতায়াতের জন্য রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত থাকছে কম ভাড়ায় বিশেষ বাস সার্ভিস। তবে মেলার প্রবেশ মুখের দুই মহাসড়কে নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় যাতায়াত ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এরইমধ্যে প্যাভিলিয়নে স্টল প্রস্তুতের কাজ প্রায় শেষের দিকে। স্থায়ী স্টলের সাজসজ্জা আর অস্থায়ী স্টলের নির্মাণ কাজের মধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্তব্যরত শ্রমিক ও স্টল বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে আসছিল রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। টানা ১ মাস এই মেলার কারণে সৃষ্টি হতো দীর্ঘ যানজট। ঢাকার যানজট কমাতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ২৬ একর জমি জুড়ে স্থায়ী ভাবে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ–চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। পহেলা জানুয়ারি থেকে প্রথম বার মেলার আয়োজন হচ্ছে সেখানে।

এবার খোলা জায়গায় প্যাভিলিয়ান নির্মাণের সুযোগ না থাকায় সব কোম্পানি পাচ্ছে একই মাপের স্টল। দর্শনার্থীদের গাড়ি রাখার জন্য থাকছে দুই তলা গাড়ি পাকিং ব্যবস্থা। এতে ৫০০ গাড়ি পাকিং করা যাবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে পূর্বাচল উপশহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলার আসর বসতে যাচ্ছে। গত বছরও পূর্বাচলেই মেলা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা আর হয়ে উঠেনি।
এর আগে, চলতি বছরের অক্টোবরে এর স্থায়ী প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকা থেকে ৩০০ ফুট সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান। এতে উভয়পাশে দীর্ঘদিন ধরে যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ সড়কে যাতায়াতকারী পথচারী ও যানবাহন। আবার পূর্বাচলের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এশিয়ান হাইওয়ে বা ঢাকা বাইপাস রোডের ৪ লেনে উন্নীত হওয়ার কথা থাকলেও অগ্রগতি নেই কাজের। ফলে পুরনো ২ লেনের সড়কটিতে মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় নিত্য যানজট চিত্র এখানকার ভোগান্তির কারণ।

এছাড়া সড়কটিতে প্রায়ই ট্রাক উল্টে গিয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে পূর্বাচল ৪নং সেক্টরেরর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন অভ্যন্তরীণ প্যাভিলিয়নে প্রস্তুত হচ্ছে মেলার স্টল। মেলার ভেতরের পরিবেশ প্রস্তুত হলেও প্রস্তুত নয় চারপাশের যাতায়াত পরিবেশ। ইতোমধ্যে সড়কগুলো হয়ে পড়েছে খানা খন্দে ভরপুর।

স্থানীয় বাসিন্দা রানা হামিদ বলেন, ‘অপেক্ষার প্রহর শেষে করোনা মহামারি পরিস্থিতি কাটিয়ে আগামী ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবারই প্রথম গ্রামের লোকজন সরাসরি সুযোগ পাচ্ছে এ মেলার সুবিধা নিতে। তবে রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে সাধারণ মানুষ কিছুটা ভোগান্তির সম্মুখীন হতে পারে।’

পিতলগঞ্জের বাসিন্দা ঠিকাদার মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে যাওয়ার পথে সড়কের দুর্দশা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ প্রয়োজন। যাতায়াত ভোগান্তি থাকলে দর্শনার্থী আসবে কম। বিক্রেতা ও পণ্য প্রদর্শনীর লোকজন চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এবার রূপগঞ্জে হওয়ায় খুশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী। পূর্বাচলে মেলার আসর বসাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা রূপগঞ্জবাসী মেলার যাতায়াত পথ ও আগত দর্শনার্থী, ব্যবসায়ীসহ সবার পর্যাপ্ত সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো। তবে এখনো স্থানীয় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন বাকি, খানাখন্দ মেরামত জরুরি।’ এবছর কিছুটা কষ্ট হলেও পরবর্তীতে সেই ভোগান্তি আর থাকবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক বলেন, ‘সম্প্রতি রাজউকের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ার ও ইপিবির কর্মকর্তারা মিলে সভা করেছি। সেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্বাচলের ১৩ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের জন্য উপযোগী করার সিদ্ধান্ত হয়। যা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে প্রায়। ফলে দুই লেন করে দুইপাশে চার লেনে গাড়ি চলবে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো বেশিও থাকবে। এখনই অনেক জায়গায় প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকার যানজট কমাতে পূর্বাচলে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। রাজধানীর এক প্রান্তে হওয়ায় মেলায় যাতায়াতের জন্য থাকছে ৩০টি বাস সার্ভিস, এতে কম ভাড়ায় চলাচলের করতে পারবে দর্শনার্থীরা। প্রতি বছরের মতো এবার প্রবেশ ফ্রি থাকছে ৪০ টাকা।’

ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আগামী ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা হবে। এখানে যাতায়াত ভোগান্তি এ বছর কিছুটা থাকতেই পারে। তবে আমরা বিআরটিসিকে চিঠি দিয়েছি। শাটল সার্ভিস চালু করার জন্য, কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলা পর্যন্ত।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অস্থায়ী জায়গায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হতো। তবে সেটা স্থায়ী ছিলো না। তাই স্থায়ী প্যাভিলিয়ন হিসেবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে গত ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ২৩১ কোটি টাকা ও ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে।####

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও