গ্রামপুলিশের নতুন বেতন স্কেল চূড়ান্ত

অক্টোবর ০৬ ২০১৮, ১২:৩২

Spread the love

                   জাতীয় নির্বাচনের আগেই খুশি করা হচ্ছে ৪৫ হাজার গ্রামপুলিশকে। সর্বোচ্চ ৭৬ শতাংশ বেতন বাড়ছে এ বাহিনীর সদস্যদের। নতুন স্কেলে একজন দফাদারের মাসিক বেতন দাঁড়াবে ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে তারা পাচ্ছেন ৩ হাজার ৪০০ টাকা। আর ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে মহল্লাদারের মাসিক বেতন। বর্তমান একজন মহল্লাদার পাচ্ছেন ৩ হাজার টাকা।

গ্রামপুলিশের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খুব শিগগিরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

সূত্রমতে, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গ্রামপুলিশের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। সেখানে দফাদারের বেতন ৭ হাজার ও মহল্লাদারের বেতন ৬ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে বলা হয়। অর্থাৎ বর্তমান বেতনের তুলনায় ১০৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় দফাদারদের। একইভাবে ১১৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয় মহল্লাদারের জন্য। প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু গ্রামপুলিশের বেতন বাড়েনি।

ওই প্রস্তাবের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগ নতুন প্রস্তাব তৈরি করে। সেখানে দফাদারদের বেতন বর্তমানের তুলনায় ৭৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, টাকার অঙ্কে ২ হাজার ৬০০ এবং মহল্লাদারদের বেতন ৬৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, টাকার অঙ্কে ২ হাজার বাড়ানোর কথা বলা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ গ্রামপুলিশের বেতন বাড়ানো হয়। ওই সময় দফাদারের বেতন ৩ হাজার ৪০০ টাকা এবং মহল্লাদারদের বেতন ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ বেতন প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে নির্ধারণ করা হয়। এদিকে

২০১৫ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করলে তাদের বেতন ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। দফাদার ও মহল্লাদার বর্তমানে যে বেতন ভোগ করছেন তা নিতান্তই অপ্রতুল। এ দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ কষ্টসাধ্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রশংসনীয় কাজের গুরুত্ব এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে দফাদার ও মহল্লাদারদের বেতন পুনঃনির্ধারণের যৌক্তিকতা রয়েছে।

সূত্রমতে, নতুন বেতন কাঠামোর মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশ দেবে সরকার। বাকিটা (৫০ শতাংশ) দেবে ইউনিয়ন পরিষদ। অর্থাৎ দফাদারের নতুন বেতন ৬ হাজার টাকার মধ্যে ৩ হাজার টাকা সরকার এবং ৩ হাজার টাকা ইউনিয়ন পরিষদ দেবে। একইভাবে মহল্লাদারের ৫ হাজার টাকা বেতনের ২ হাজার ৫শ’ টাকা সরকার এবং বাকি (২ হাজার ৫শ’) টাকা দেবে ইউনিয়ন পরিষদ।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে গ্রামপুলিশ সদস্যরা তাদের বেতন বাড়ানোর দাবি করে আসছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তাদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সারাদেশে ৪৫ হাজার ৫শ’ গ্রামপুলিশ রয়েছে।

প্রতিটি ইউনিয়নে একজন দফাদার ও ৯ জন মহল্লাদার রয়েছেন। তারা গ্রামের উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাশাপাশি চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীদের ধরতে তারা পুলিশকে সহযোগিতা করেন। কিন্তু তারা যে কাজ করে আসছেন তার তুলনায় তাদের পারিশ্রমিক খুবই সামান্য। দীর্ঘদিন ধরে তারা অবহেলিত অবস্থায় রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সব গ্রামপুলিশকে জাতীয় (সরকারি) বেতন স্কেলের আওতায় আনার একটি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর বাস্তবায়ন হলে সব চৌকিদার বা মহল্লাদার ও দফাদার জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন পাবেন। সেইসঙ্গে তারা পদোন্নতি, উৎসবভাতা, ভ্রমণভাতা, দায়িত্বভাতা, সম্মানী ও বিভিন্ন প্রকার ছুটিও পাবেন।

দায়িত্বে অবহেলা করলে তাদের চাকরি থেকে অপসারণ ও বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তির বিধানও রাখা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার গ্রামপুলিশকে জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় আনতে বছরে মোট খরচ হবে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা। আর্থিক বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মহল্লাদার : ইউনিয়ন পরিষদ নির্ধারিত এলাকায় নিয়মিত পাহারা দেন। প্রয়োজনে রাতেও পাহারা দিয়ে থাকেন। কর্মস্থল সংশ্লিষ্ট থানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সপ্তাহে একবার এবং ১০ কিলোমিটারের বেশি হলে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার থানায় প্যারেডে অংশ নেন।

দফাদার : অধীনস্থ মহল্লাদারদের দায়িত্ব বণ্টন ও তাদের কর্মকাণ্ড তদারকি করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরবরাহ করা নোটবুক সংরক্ষণ করেন ও নির্দেশিত উপায়ে তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করেন। সময় দিনে ও রাতে গ্রামে পাহারা দেন এবং সমগ্র ইউনিয়ন এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্ব পালন করেন।

সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ও দুই রাত মহল্লাদারের কার্যক্রম আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করেন এবং মহল্লাদারকে তার কর্তব্য পালন সম্পর্কে সজাগ করবে। সপ্তাহে একদিন থানায় প্যারেডে অংশ নেন। দাফতরিক প্রয়োজনে অথবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশ অনুসারে থানায় হাজিরা দেন।

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও