পৃথিবীর জঘন্যতম আইনের একটি : বিএনপি

অক্টোবর ০৯ ২০১৮, ১১:৩২

Spread the love

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর ‘এই আইন মানি না’ বলেছে বিএনপি।

দলটির মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে একটা জঘন্যতম কালো আইন।

বর্তমান স্বৈরশাসক ফ্যাসিস্ট সরকারের নিরাপত্তার জন্য এই আইনটি প্রণয়ন করেছে। গুলশানের একটি হোটেলে সোমবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর এক মতবিনিময় সভায় দলটির নেতারা এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সব আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ভিত্তি করে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, সেই চেতনাকে সম্পূর্ণভাবে ধূলিসাৎ করে দিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো হরণ করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই আইন আমরা মানি না। আমরা এই সরকারের কোনো আইন মানি না। কারণ যে সংসদে আইন পাস হয়, সেই সংসদের কোনো বৈধতা নেই। এই সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, এটা অবৈধ একটা সংসদ।

সরকারকে প্রতারক আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইনটা নিয়ে আপনারা আলোচনা পর্যন্ত করেননি। কয়েকদিন আগে এডিটরদের সঙ্গে বসে কথা দিলেন, আইনের যে ধারাগুলো আছে আপত্তি তা আমরা আলোচনা করে পুনর্বিবেচনা করার চেষ্টা করব।

উনি তো (প্রধানমন্ত্রী) বিদেশ থেকে এসে বলে ফেললেন, না, না, যেটা আছে ঠিক আছে, যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের জন্য।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই আইন কালো, আরও কালো। এই আইনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সরকারকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের ওপর একটার পর একটা আইন চাপিয়ে দিয়েছে। পাহাড়সমান বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।

গুলশানের লেকশোর হোটেলে বিএনপির উদ্যোগে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভা হয়। এতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইন, রাশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।

সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, এখনও বলছি, আগেও বলেছি, দেশনেত্রীই পারেন জাতির এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে। তাকে মুক্ত করুন, আলোচনা করুন, কিভাবে শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন হবে, জনগণ তাদের মতামত দিতে পারবে এবং তাদের পছন্দমতো একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

তিনি বলেন, জনগণকে জিম্মি করে, বন্দি করে, তাদের বুকের মধ্যে বন্দুক-পিস্তল রেখে দিয়ে দেশ শাসন কিছুদিনের জন্য করা যায়। সব সময়ের জন্য করা যায় না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হতাশ হবেন না। আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত, জনগণের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত, দেশনেত্রী মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।

জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধের কাজ করার আগেই জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। আজ প্রতিটি কর্নার থেকে আওয়াজ আসছে, সবাই রুখে দাঁড়ান। এই যে জগদ্দল পাথর গেড়ে বসেছে তাকে সরান।

শুধু আমরা নই, অন্য দলগুলো, সংগঠন, ব্যক্তি এক বাক্যে বলছে, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, সংসদ ভেঙে দিতে হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, সাপ্তাহিক হলিডের সম্পাদক সৈয়দ কামালউদ্দিন, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বাংলাদেশের খবরের উপদেষ্টা সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহউদ্দিন, ইনকিলাবের রেজাউর রহমান সোহাগ, মেহেদি হাসান পলাশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের আশীষ সৈকত, আমার দেশের সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাহেদ চৌধুরী, কলামিস্ট হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, রেডিও টুডের ইমামুল হক শামীম, শীর্ষ নিউজের একরামুল হক, দৈনিক সমকালের লোটন একরাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ইলিয়াস খান, এসএ টিভির ইলিয়াস হোসেন, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সাঈদ আহমেদ খান, মামুন স্টালিন প্রমুখ।

সভায় বিএনপি নেতাদের মধ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, রুহুল আলম চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন আহমেদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান, আহমেদ আজম খান, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, কামরুজ্জামান রতন, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, নাজিমউদ্দিন আলম, জেবা খান, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, শামসুজ্জামান সুরুজ, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশ স্বাধীনের পর যত কালো আইন হয়েছে ডিজিটাল আইন এর অন্যতম। এখন দেশে অলিখিত বাকশাল চলছে। এই বাকশাল পাকাপোক্ত করতে এই আইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। রাজতন্ত্রেও এমন আইন আছে বলে মনে হয় না। এটি করা হয়েছে মুখ বন্ধ করার জন্য। এর পরিণতি শুভ হবে না।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে কথা বলাটা বিপদ। কথা বললে সত্য প্রকাশ হয়ে যাবে। সরকার চায় না মানুষ কথা বলুক। পৃথিবীর সব দেশে রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু আমাদের সরকার এটাও চায় না, কারণ তাদের এত গন্ধ যে কথা বললে আরও গন্ধ ছড়াবে।

হলিডের সম্পাদক সৈয়দ কামালউদ্দিন বলেন, আইনটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। যাতে করে সরকারি দলের প্রতিপক্ষদের আরও বেশি করে ঘায়েল করা যায়, হয়রানি করা হয়। সরকারের অস্ত্রশস্ত্রধারী কতগুলো বাহিনী আছে তাদের সমানে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই আইনের মাধ্যমে তাদের ইচ্ছামতো যে কোনো লোককে ধরপাকড় করতে পারে, অত্যাচার করতে পারে তার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি এই আইন স্বাধীন সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, এটি একটি জঙ্গি আইন, সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগ : সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস সত্ত্বেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে তা পাস হওয়ায় হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

এক বিবৃতিতে সোমবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ যে, মানবাধিকার ও সংবাদকর্মীদের মতামত সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সরকার এ আইন প্রণয়ন করেছে। সরকারের কাছে দ্রুত আইনটির অস্পষ্ট জায়গাগুলো স্পষ্ট করা এবং সুনির্দিষ্ট বিধিমালা তৈরির দাবি জানাচ্ছি।উৎস-যুগান্তর

এই বিভাগের আরো খবর


আরো সংবাদ ... আরও