চিরিরবন্দরে মাচার উপরে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

এনামুল মবিন(সবুজ),জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুরঃ দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষে চাষীরা বিশেষ সাফল্য অর্জন করেছেন। মাত্র ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে ফলন তোলার ফলে তাদের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। কৃষি বিভাগের দাবি, এই নতুন পদ্ধতি যদি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয় তাহলে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতি আরও উন্নত হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১একর জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের বীজ, সার, ফেরোমন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক এবং পরিচর্যা পদ্ধতিতে নগদ সহায়তাও প্রদান করা হয়ে থাকে।
ভিয়াইল ইউনিয়নের তরমুজ চাষি রবিউল যানান , এ বছর কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তায় তিনি ২০ শতক জমিতে রঙিলা সুগার কিং ও সুইট ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেন। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ক্ষেতেই প্রতি কেজি তরমুজ ৩০-৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০ শতাংশ জমিতে চাষাবাদ, বীজ ও মাচা তৈরিতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা’। খরচ বাদে আড়াই মাসের এ আবাদে ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাঁর তরমুজ চাষ দেখে অনেক কৃষক আগ্রহী হয়ে তাঁর কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, জমিতে চাষ দিয়ে পরিমাণ মতো সার ও জৈব সার প্রয়োগ করি। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দেই। পরে চারা রোপণ করি। এর দুই-তিন দিন পর জমিতে সেচ দিই। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি গাছে খুঁটি এবং ১৫-২০ দিন পর বাঁশ ও প্লাস্টিকের সুতায় তৈরি করা হয় মাচা, সেই মাচার ওপরে জায়গা করে নেয় তরমুজের সবুজ পাতা। মাচার নিচে ঝুলে আছে খেতে ভীষন মিষ্টি এ তরমুজ। গাছ থেকে ছিঁড়ে না পড়ে, তার জন্য প্রতিটি তরমুজের জন্যে বাঁশের খুঁটিতে দেওয়া হয়েছে জালি। প্রতিটি জালিতে বড় হয় একেকটি তরমুজ।
স্থানীয় কৃষকরা আব্দুল হাকিম জানান, প্রতি বিঘায় গড়ে ২৫–৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও বিক্রি শেষে ৬০–৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে। বাজারে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদিত ফসল সহজেই বিক্রি হচ্ছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী ধান চাষের পাশাপাশি তরমুজ এখন বিকল্প লাভজনক ফসল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। চাষাবাদে মালচিং, ড্রিপ সেচ ও জৈব-রাসায়নিক সারের সুষম প্রয়োগের মতো আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় গরমেও ভালো ফলন সম্ভব হচ্ছে ।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তরমুজ চাষে আগ্রহী হন কৃষকরা। বীজও সংগ্রহ করেন কৃষি অফিস থেকে। রোপণ থেকে ফলন আসা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক পাশে ছিলেন কৃষি বিভাগ।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, “গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এ বছর ভিয়াইল ইউনিয়নের চারজন কৃষক-কে দিনাজপুর টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ, ওষুধসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়। সহায়তা পেয়ে তারা তরমুজ চাষ শুরু করেন। ফলন ও দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা বেশ লাভবান হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, অনেকেই এখন তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যা স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছি।” পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা ও রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি হলে চিরিরবন্দরের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও সুনাম অর্জন করতে পারে।